কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের মেহেরঘোনা রেঞ্জের ভাদিতলায় মাসের পর মাস ধরে চলছে পাহাড় কাটার উৎসব। রাতের আঁধারে দৈত্যাকার স্কেভেটর ও ডাম্পার ব্যবহার করে কেটে ফেলা হচ্ছে বনভূমির পাহাড়। এলাকাবাসী বলছে, রাতের নীরবতা ভেঙে এসব ডাম্পারের হুইশেল ও গর্জন যেন মৃত্যুঘণ্টার মতো বেজে ওঠে— যার ফলে শিশু, বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষের ঘুম হারাম হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসিনা পাহাড়, ভগ্গুইম্মা পাড়া, পশ্চিম ও পূর্ব ভাদিতলার অন্তত ডজনাধিক স্থানে পাহাড় কেটে সমতল করা হচ্ছে। রাত নামলেই শুরু হয় স্কেভেটরের গর্জন, আর ভোর পর্যন্ত ডজন ডজন ডাম্পারে মাটি বহন করা হয় বিভিন্ন নির্মাণস্থলে। প্রতি ডাম্পার মাটি ২ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করে পাহাড়খেকো সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই অর্থের একটি অংশ নিয়মিত মাসোহারা হিসেবে বনবিভাগ ও প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার হাতে যায়— ফলে অবৈধ কর্মকাণ্ডে কেউ বাধা দেয় না।
স্থানীয়রা জানান, পাহাড় কেটে তৈরি করা এসব মাটি ট্রাক ও ডাম্পারে করে ঈদগাঁও, খুটাখালী, চকরিয়া ও কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি ভূমিধসের আশঙ্কা বাড়ছে এলাকায়। বর্ষা মৌসুমে এসব খননকৃত পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় পরিবেশ কর্মী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, “পাহাড় কাটা শুধু বন ধ্বংস নয়, এটি পরিবেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। বন কর্মকর্তারা চাইলে এক রাতেই এসব বন্ধ করা সম্ভব, কিন্তু তারা নীরব দর্শক।”
অভিযোগ রয়েছে— বন কর্মকর্তারা নিয়মিত এসব পাহাড়খেকোদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে পাহাড় কাটা এলাকায় তাদের উপস্থিতিও দেখা যায়। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তারা আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে অভিযানের নামে আইওয়াশ করেন।
এ বিষয়ে মেহেরঘোনা বিট কর্মকর্তা ফিরোজ কবির বলেন, “আগের মতো এখন আর পাহাড় কাটা হয় না। আমরা নিয়মিত তদারকি করছি।” তবে এলাকাবাসীর বক্তব্য ভিন্ন। তারা বলছেন, “প্রতিদিন রাতেই চলে মাটি কাটা আর ডাম্পারের রোড শো।”
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মারুফ হাসান বলেন, “ইতিপূর্বে অভিযান পরিচালনা করে মামলা দেওয়া হয়েছে। নতুন করে যেসব স্থানে অবৈধ পাহাড় কাটা চলছে, সেসবের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় সচেতন মহল, পরিবেশবাদী সংগঠন ও নাগরিক সমাজ অবশিষ্ট বনভূমি রক্ষায় প্রশাসন ও বনবিভাগকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছেন— এখনই উদ্যোগ না নিলে কয়েক বছরের মধ্যেই ভাদিতলা ও আশপাশের পাহাড়গুলো পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে