উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪/০৬/২০২৩ ১০:০৪ এএম , আপডেট: ০৪/০৬/২০২৩ ১০:১৯ এএম

তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে দেশের মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। দিনের পর দিন অসহনীয় কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অনেকেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তারক্ষায় সতর্ক থাকতে মাঠপর্যায়ে পুলিশের সব ইউনিটকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক সভায় লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে।

নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তাব্যবস্থা আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসাব অনুযায়ী গতকাল শনিবার সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৯৬০ মেগাওয়াট। একই দিন সন্ধ্যায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৩৭৭ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে দিনে ঘাটতি ১ হাজার ৮৪০ মেগাওয়াট।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডসহ বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো আগে থেকেই লোডশেডিং শিডিউল জানাচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সেই শিডিউল কখনোই ঠিক থাকছে না। লোডশেডিংয়ের মাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। তাদের মতে, সরকারি হিসাবে লোডশেডিংয়ের যে তথ্যই দেওয়া হোক না কেন, প্রকৃত অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। দিনে ছয়-সাতবার লোডশেডিং হচ্ছে। তীব্র গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। একবার বিদ্যুৎ গেলে ফিরে আসতে এক থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লাগছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও মানুষ লোডশেডিং নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তীব্র তাপপ্রবাহ কমে এলে বিদ্যুতের চাহিদাও কিছুটা কমে আসবে। তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী, দিনাজপুর, নীলফামারী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, বরিশাল বিভাগসহ রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। শিগগিরই এই তাপপ্রবাহ কমার কোনো লক্ষণ নেই। ফলে আগামী আরও কয়েক দিন গরম আর লোডশেডিংয়ের সঙ্গে লড়াই করে চলতে হবে।।

পুলিশ সদর দপ্তরে সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সম্প্রতি যে সভা হয়েছে সেখানে যশোর জেলা পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে সংক্ষুব্ধ লোকজন সরাসরি ফোন করে বিদ্যুৎ অফিসে হামলার হুমকি দিচ্ছেন। এমন অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ চলছে। মাঠ পুলিশকে সব জায়গায় খোঁজ নিতে হবে। কোথাও লোডশেডিং দীর্ঘায়িত হচ্ছে কি না, জানতে হবে। কেউ যেন এগুলোকে পুঁজি করে কিছু করতে না পারে, এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ফেনীর ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও সোনাগাজীতে ক্ষুব্ধ লোকজন বিদ্যুৎ অফিসে চড়াও হয়েছেন। সৈয়দপুরসহ দেশের কয়েকটি স্থানে উত্তেজনা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিভিন্ন অফিস থেকে বিদ্যুৎ অফিসসহ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ প্রশাসনের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ থেকে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপারকে দেওয়া এক চিঠিতে বলা হয়, ময়মনসিংহ জোনে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় এবং লো-ভোল্টেজের কারণে চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। সমিতির আওতাভুক্ত এলাকাগুলোতে অসহনীয় লোডশেডিং চলছে। তীব্র গরমে গ্রাহকরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সেচকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক এলাকায় গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র ঘিরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। চিঠিতে সংশ্লিষ্ট স্থাপনা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা বিধানে সার্বিক সহযোগিতার অনুরোধ জানানো হয়।

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা শনিবার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বিদ্যুতের স্থাপনাগুলো কেপিআইভুক্ত। এসব স্থাপনায় পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা পাহারায় থাকেন। সার্কেল এসপি, থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কেপিআই স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করেন। স্থাপনার সিসিটিভি, দেওয়ালসহ অন্যান্য নিরাপত্তাসামগ্রী ঠিক আছে কি না, সেটা যাচাই করেন। নিরাপত্তাবিষয়ক অন্যান্য খোঁজখবরও নেন। পল্লী বিদ্যুত সমিতির চিঠি পাওয়ার পর বিদ্যুৎ স্থাপনাগুলোর এলাকায় টহল বাড়ানো হয়েছে।

লোডশেডিং দীর্ঘায়িত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান গতকাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কেপিআই স্থাপনাগুলোর বিষয়ে আমরা সব সময় অ্যালার্ট আছি। অন্যান্য স্থানেও আমাদের লোকজনকে নজর রাখতে বলেছি। শনিবার সকালের চেয়ে বিকালের দিকে লোডশেডিং কিছুটা কম হয়েছে। সকালে আমাদের ঘাটতি ছিল ৩০০ মেগাওয়াটের কিছু বেশি। আর বিকালে ঘাটতি ছিল ২০০ মেগাওয়াটের কাছাকাছি। আমরা লোডশেডিংয়ের শিডিউল আগেই জানিয়ে দিচ্ছি। তারপরও সঞ্চালন লাইনে গোলযোগের কারণে কিছু লোডশেডিং হয়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে।’

৮০টি সমিতির মাধ্যমে সারা দেশের জেলা, উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড।

বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাং সেলিম উদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর স্থাপনায় সিসিটিভি বসিয়েছি। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয়টি আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। আমরা প্রতিদিন বিদ্যুতের যে চাহিদা দিই, সেটা পাওয়া যায় না। যতটুকু লোডশেডিং হয় সেটা আমাদের লোড ম্যানেজমেন্ট কমিটি সংশ্লিষ্ট সমিতি বা এলাকাকে জানিয়ে দেয়। তারা সে অনুযায়ী লোড বিতরণ করেন।’ সুত্র: প্রতিদিনের বাংলাদেশ

পাঠকের মতামত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরনি বেহেশতী/দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তি’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ...