ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৮/০৮/২০২২ ৯:৪৬ এএম
সেন্টমার্টিন জেটি ঘাট থেকে ছেঁড়াদ্বীপে যাওয়ার অপেক্ষায় ট্রলার।

আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে সমুদ্রনির্ভর জীবিকায়নকে আনা হচ্ছে শতভাগ নিরাপত্তার আওতায়। দূর্ঘটনা, অবৈধ ট্রলার, জলদস্যুতা, ঝাটকা নিধনসহ সমস্তকিছু ধরা পড়বে একটি ডিভাইসের মাধ্যমে। সাগরে জেলেরা কোথায় যাচ্ছে, কিভাবে মাছ ধরছে, ঝড়ের কবল ও নানাবিধ সমস্যা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে জিএসএম ডিভাইস। যাকে বলা হয় গ্লোবাল সিস্টেম মনিটরিং। জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় কন্ট্রোলরুম থেকে সরাসরি এই মনিটরিং করা হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ বদরুজ্জামান দৈনিক কক্সবাজার’কে জিএসএম ডিভাইসটি চালু হলে জলসীমা ভিতরে সমস্ত কিছু মনিটরিং করতে পারবো। এর ফলে জেলেরা যেকোনো বিপদের সম্মুখীন হলে আমরা মনিটরিং সেল থেকে সেটা জানতে পারবো। তিনি বলেন, এই ডিভাইস জেলেদের পুরো নিরাপত্তা দিতে পারবে। এর গুণাগুণ এতো বেশি কোন বোট আওতার বাইরে চলে গেলেও তাকে খুঁজে পাওয়া সহজ হবে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তারাপদ চৌহান এ বিষয়ে বলেন, ইতিমধ্যে উন্নতমানের জিএসএম ডিভাইস সংগ্রহ করা হয়েছে। টেকনিশিয়ান দিয়ে এগুলো বোটে সংযোজন করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে গভীর সমুদ্রগামী ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিনচালিত ট্রলার গুলোতে ডিভাইস সংযোজন করা হবে। পর্যায়ক্রমে সব ট্রলার এর আওতায় আসবে। তিনি বলেন, জেলার উত্তর নুনিয়ারছড়া আমাদের একটি চেকপোস্ট থাকবে। কেউ চাইলে স্ব-ইচ্ছায় সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারবেনা। লাম লিপিবদ্ধ করে অনুমতি নিয়ে যেতে হবে।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, সাগরে মাছ আহরণ করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জলদস্যুর কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছে অনেকে। বৈরী আবহাওয়া’য় মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে অনেকে ভেসে গেছে। জেলেদের সমুদ্রের মাঝে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। এসবের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন সাস্টাইনেবল কোস্টাল মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প এই উদ্যোগ নিয়েছে। জিএসএম প্রতিটি ডিভাইসের দাম পড়বে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে ১৬৭ ডিভাইসের দাম পড়বে ৬,৬৮০,০০০ টাকা। জেলাতে ছোট-বড় মিলে ৭০০ মতো নৌযান আছে। তারমধ্যে ৯৬২০ জেলে কার্ডের আওতাধীন। যাচাই বাছাই করে ১৬৭ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রলারকে এই জিএসএম ডিভাইস দেওয়া হয়েছে।
সিনিয়র জেলা মৎস্য অফিসের মেরিন ফিসারিজ অফিসার (এমএফও) মোঃ আঃ কুদ্দুছ দৈনিক কক্সবাজার’কে বলেন, এসব বোটের ইন্ঞ্চিনের হটস্ পাওয়ার ১৩-৪০ এইচপি’র মধ্যে হবে, তাদের আমরা জিএসএম ডিভাইসটি দিতে পারবো। কারণ এই ডিভাইসের গুণাগুণ অনেক বেশি। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা যাচাই বাছাই করে ১৬৭ নৌযান চিহ্নিত করেছি। তাদের বলা হয় আর্টিসানাল নৌযান। এইসব ট্রলারগুলোর ধারণক্ষমতা ১ থেকে ১৫ টনের মধ্যে। তিনি আগামী ১৮ আগস্ট নাজিরারটেক এলাকায় জেলায় প্রথম এই ডিভাইসের উদ্বোধন করা হবে।
চলতি মৌসুমেই সব মাছধরা নৌযান বা ট্রলারকে জিএসএম সিস্টেমের আওতায় আনা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ৮৫০০ টি ক্ষমতাসম্পন্ন আর্টিসানাল নৌযানে জিএসএম ডিভাইস সংযোজনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপকূল থেকে গভীর সাগরে এটি সমান্তরাল নেটওয়ার্কের কাজ করবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পুরো জলসীমা মনিটরিং করবে। নৌযানগুলো আগাম আবহাওয়ার পূর্বাভাস পেয়ে যাবে। বিপদে পড়লে উপকূলে জানাতে পারবে। তখন সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে। ফলে অবৈধ উপায়ে সাগরে গমন, যখন-তখন ও যত্রতত্র চলাচলসহ বিপদগ্রস্ত জেলেদের ঝড়ের কবল থেকে রক্ষা করবে।
সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, অত্যাধুনিক ডিভাইসের মাধ্যমে সাগরে অবৈধ কাজে জড়িত ট্রলার বা নৌযানকে দ্রুত শনাক্ত সহজ হবে। জলদস্যুতা নিরুৎসাহিত হবে। তাছাড়া কোন নৌযান ঝড়ের কবলে পড়ে থাকলে তাদের উদ্ধার করাসহ সবকিছু এই ডিভাইসে ধরা পড়বে। এতে জেলেরাও নিরাপদ সমুদ্রে মাছ আহরণ করতে পারবে। পাশাপাশি অবৈধ কর্মকান্ড কমে যাবে।
এবিষয়ে কিছু’ই জানেন না বলে জানান, কক্সবাজার জেলা বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। তিনি দৈনিক কক্সবাজার’কে বলেন, তাদের পছন্দের লোককে তারা ডিভাইসগুলো দিচ্ছে। কারোই সাথে তারা সমন্বয় করেননি। তিনি বলেন, গভীর সমুদ্রে যাওয়া ট্রলার আছে মাত্র ২%। এতোগুলা ট্রলার তারা কোথায় পেলেন তা বোধগম্য নয়।
দেশের ৭১০ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত এবং ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় অঞ্চলকে এ সুষম পদ্ধতি ও সুশৃঙ্খলায় আনা গেলে অপার সম্ভাবনার ব্লু-ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতি দেশের প্রবৃদ্ধিতে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এমন সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে কাজ করছে মৎস্য বিভাগের সাস্টাইনেবল কোস্টাল মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প।
মৎস্য বিভাগ সূত্র জানা যায় , দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর আমিষের চাহিদা পূরণ, মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নবায়নযোগ্য সামুদ্রিক সম্পদের আধুনিক ও টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহারে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ফিরিয়ে আনতে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে গভীর সাগর থেকে মৎস্য আহরণকে। গভীর ও অগভীর সমুদ্রগামী সব মাছধরা ট্রলারের জন্য রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যা সংশ্লিষ্ট ট্রলারের গায়ে খোদাই করে লেখা থাকবে। সাগরে যাওয়ার সময় প্রতিটি ট্রলারকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রিপোর্ট করতে হবে। এতে করে কোন ট্রলার কখন সাগরে গেল, ফিরে এলো এবং কতজন জেলে সাগরে গেল, কতজন জেলে ফিরে এলো তা শনাক্তকরণ সহজ হবে।.সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে সংঘাত/টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকল আরও ৯ বিজিপি সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ...