নির্বাচনী মহিলা কর্মীদের ৩০০ টাকার নাস্তার টোকেন দেয়ার ঘটনাকে ‘৮ বস্তা টাকা’ পাওয়ার গল্প বানিয়ে কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে ‘নারিকেল গাছ’ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট পোপাগান্ডা চালানো হয়েছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক দল কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ায় জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জসিম উদ্দিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। অভিযানকালে পুলিশ ওই নির্বাচনী কর্মীদের কাছ থেকে একটি টাকাও উদ্ধার করতে না পারলেও মিডিয়া জগতে ৮ বস্তা টাকা উদ্ধারের গল্প প্রচার করা হয়েছে। যদিও পুলিশ শেষ পর্যন্ত টাকা উদ্ধারের বিষয়ে গণমাধ্যমকে কোন তথ্যই না দিয়ে ঘটনাস্থল সরে গেছেন। তবে টাকার জন্য নয়, নির্বাচনবিধি মতে ‘বিশৃংখলা’ সৃষ্টির অভিযোগে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তাৎক্ষনিক মেয়র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। তিনি সেই টাকাও ম্যানেজ করে দিতে ৩৫ মিনিট সময় নিয়েছেন। এখন পুরো পৌরবাসির প্রশ্ন জেগেছে- ৮ বস্তা টাকা উদ্ধারের যে গল্প প্রচার হয়েছে সেই টাকা কেন কোন মিডিয়াই দেখাতে পারলো না?!
যদিও সংবাদ সম্মেলন ডেকে মেয়র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ এই ঘটনাকে তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত, নির্বাচনকে বানচালের অপচেষ্টা ও পৌরবাসিকে বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, পুরো পৌরসভায় ‘নারিকেল গাছ’ প্রতীকের জোয়ার দেখে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ও সঙ্গী-সাথীরা পাগলের প্রলাপ বকতে শুরু করেছেন। তারাই পুলিশ মিথ্যা, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে’র চেষ্টা করেছেন।
যদি প্রশাসন টাকা উদ্ধারের ঘটনা প্রমাণ করতে পারে তাহলে মাসেদুল হক রাশেদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন সংবাদ সম্মেলনে। তিনি বলেন, মিথ্যা প্রচার করলে কখনো সত্য হয়ে যায় না।
শুক্রবার (২ জুন) সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারিকেল গাছ প্রতীকের লোকজন বাহারছড়ায় জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জসিম উদ্দিনের বাড়িতে ডিবি পুলিশের একটি দল অভিযান শুরু করে। ওই নির্বাচনী মহিলা কর্মীদের কাছ থেকে ১৩টি টোকেন পাওয়া যায়। কিন্তু অনেক তল্লাশি করেও অধিক কোন টাকা পাওয়া যায়নি। এই সময়ে পুলিশ এডভোকেট জসিম উদ্দিনের স্ত্রী এডভোকেট মর্জিনাসহ নারিকেল গাছ প্রতীকের কর্মীদের থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায় আর অনলাইন গণমাধ্যম প্রচার করে ওই বাড়ি থেকে ৮ বস্তা টাকা উদ্ধার করা হয়েছে! কোন ধরণের তথ্যসুত্র ছাড়াই মিডিয়া গুলো দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রচারণা চালিয়ে যেতে থাকে। পরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু অভিযানকারি পুলিশ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে কোন ধরণের টাকা উদ্ধারের প্রমাণ দিতে পারেনি। পরে তিনি ঘটনাস্থলে নারিকেল গাছ প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হয়ে ‘বিশৃংখলা’ সৃষ্টির অভিযোগে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন নারিকেল গাছ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ, তার ভাই ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহীনুল হক মার্শাল, রাশেদের সহধর্মিণী জোসনা হকসহ অন্যরা। এসময় ওই বাড়ির সামনে সাধারণ মানুষ ও মেয়রপ্রার্থী রাশেদের কর্মী-সমর্থকদের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। তারা বাড়ির সামনেই রাস্তায় বসে পড়েন। তারা ঘটনাকে ‘ভূঁয়া, ভূঁয়া’ বলে শ্লোগান দিতে থাকেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে মাসেদুল হক রাশেদের কর্মী সমর্থকরা আসতে শুরু করলে সেখানে বিশাল জটলা জমে যায়।
পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে সবাইকে সরিয়ে দেন। পুলিশও অভিযানের কোন তথ্য না দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এদিকে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে মেয়র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদের বিমান বন্দর সড়কস্থ বাড়ি ‘হক-শণে’ ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে রাশেদের উপস্থিতিতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহীনুল হক মার্শাল।
লিখিত বক্তব্যে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে কক্সবাজারে অবস্থানরত নির্বাচন কমিশনারের কাছে ঘটনার সুষ্টু তদন্ত দাবি করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে মাসেদুল হক রাশেদ বলেন, নির্বাচনের সুষ্টু পরিবেশ নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই নাটক করা হয়েছে, যা প্রশাসনকে মিসগাইড করে করা হয়েছে। এটাকে সুষ্টু নির্বাচনের পরিবেশের অন্তরায় বলেও দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহবুবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে প্রচার করছে দুয়েকদিনের মধ্যেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। যা নিরপেক্ষ নির্বাচনের অন্তরায়।
রাশেদ সাংবাদিকদের সত্য তুলে ধরার আহবান জানিয়ে বলেন, ৮ বস্তা টাকা পাওয়ার যে নাটক করা হয়েছে তা যদি প্রশাসন তদন্ত করে প্রমাণ করতে পারে- তাহলে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাড়াবেন।
তার মতে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নীলনক্সার নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নারিকেল গাছ প্রতীকের গণজোয়ার দেখে তারা আবুল-তাবুল কাজ করতে শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা মুখ বন্ধ রেখেছি। আগামি ১২ জুন ভোটের মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডার জবাব দেবেন পৌরবাসি।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহীনুল হক মার্শাল দাবি করেন, ডিবি পুলিশের যে সেকেন্ড অফিসার অভিযান চালিয়েছেন তিনি সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার বাসিন্দা। নৌকার প্রার্থীর হয়ে তিনি এই অভিযান করেছেন। তিনি অভিযানকালে মহিলা কর্মীদের ‘নৌকা’র পক্ষে ক্যাম্পেইন কেন তারা করছে না বলেও শাসিয়ে দেন বলে দাবি করেন মার্শাল।
ওই সংবাদ সম্মেলনে শাহীনুল হক মার্শাল ছাড়াও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল ও তাদের বোন তাহমিনা চৌধুরী লুনাও উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল বলেন, আমরা নির্বাচন করছি বলে রাজাকারে পরিণত হয়েছি, ওরা নির্বাচন করছে বলে আওয়ামীলীগার হয়ে গেছে। কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের চাষ করেছে আমার বাবা একেএম মোজাম্মেল হক। তিনি টাকা দিয়ে, সম্পত্তি দিয়ে, জীবন-যৌবন দিয়ে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে দাবি করেন, ফেসবুকে ফেইক আইডির মাধ্যমে তার ভাবীরা, বোন, তার স্ত্রী ও ভাতিজীদের নিয়ে কুৎসা রটানো হচ্ছে। আমাদের ঘরের বউরা ভোট চাইতে গেছে বলে তাদের ‘পতিতা’ বানিয়ে দেবে!!
জুয়েল বলেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া থেকে পুরুষ-মহিলা আনা হয়েছে। তাদের হোটেলে রাখা হচ্ছে। সন্ত্রাসিও আনা হয়েছে।
তিনি মনে করেন, বড় ভাই (রাশেদ) প্রার্থী না হলে পৌরবাসিদের কাছে কেউ ভোট চাইতে যেতো না।
কক্সবাজারে তিনি ছাড়া কেউ নৌকার বিজয় আনতে পারেনি বলেও দাবি করেন কায়সারুল হক জুয়েল।