এক রাতের জন্য বাসায় এসে থাকতে ওই তরুণীকে ১০ হাজার টাকায় কন্টাক্ট করেন ইভান। আর সে অনুসারেই ওই তরুণী ঘটনার রাতে ইভানের বাসায় আসেন। গভীর রাতে তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন হয় দু’জনের সম্মতিতেই।
বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবির ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বনানীর ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামি বাহাউদ্দিন ইভান। জবানবন্দিতে তিনি এসব তথ্য জানান।
এদিন চারদিনের রিমান্ড শেষে তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা বনানী থানার উপ-পরিদর্শক সুলতানা আক্তার। জবানবন্দি শেষে ইভানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
জবানবন্দিতে ইভান বলেন, তরুণীর সঙ্গে অল্প দিনের সম্পর্ক। ঘটনার আগে দু’একবার ওই তরুণীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। ঘটনার ওই রাতে তরুণীকে জোর করে কোনো কিছু করেননি ইভান।
জবানবন্দিতে ইভান আরও জানান, কন্টাক্টের ভিত্তিতে ওই তরুণী ইভানের বাসায় এলেও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের পর গভীর রাতে তরুণী তার এক বন্ধুকে বাসায় আসতে বলেন। এ বিষয়টি ইভানের পছন্দ হয়নি। এতে ইভানের পরিবারের সদস্যরা টের পেয়ে যেতে পারে এ জন্য ইভান ওই তরুণীকে ফোন করে তার বন্ধুকে বাসায় ডাকতে না করেন। কিন্তু তরুণী তা কিছুতেই শোনেননি। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তরুণী কথা না শোনায় মান-সম্মানের ভয়ে তাকে বাসা থেকে বের করে দেন ইভান। ঘটনার সময় তরুণীকে কোনো প্রকার ভয়ভীতি বা মারধর করা হয়নি বলেও আদালতকে জানান ইভান। ধর্ষণের পর তা ভিডিওধারণের বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি।
এর আগে গত ৭ জুলাই ইভানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ৬ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জ থেকে ইভানকে গ্রেফতার করে র্যাব। গত ৪ জুলাই রাতে জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে বনানীর বাসায় ইভান এক তরুণীকে ধর্ষণ করেন বলে ওই তরুণী অভিযোগ করেন। পরদিন ৫ জুলাই ভুক্তভোগী তরুণী ধর্ষণের অভিযোগ এনে বনানী থানায় ইভানের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে ওই তরুণী উল্লেখ করেন, ১১ মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইভানের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। এর সূত্র ধরে তারা দেখা-সাক্ষাৎও ঘোরাঘুরি করতেন। চার মাস আগে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ঘটনার দিন রাত ৯টায় ইভান ফোন করে ওই তরুণীকে জন্মদিনের কথা বলে তার বাসায় যেতে বলে এবং বলে, তার মায়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে।
এজাহারে তরুণী আরও উল্লেখ করেন, আমাদের সম্পর্কের বিষয়টি তার (ইভান) মাকে জানাবে বলে জানায় এবং টেলিফোনে তার মায়ের পরিচয় দিয়ে একজন মহিলা আমার সঙ্গে কথা বলে আর আমি তাকে তার মা মনে করি। তারপর আমি আমার আপুর সঙ্গে কথা বলে রাত সাড়ে ১০টায় রিকশায় তার বাসার সামনে পৌঁছালে সে আমাকে রিসিভ করে বাসায় নিয়ে যায়।
ওই তরুণী বাসায় গিয়ে আর কাউকে দেখেননি। জানতে চাইলে ইভান জানান, তার বাবা-মা অসুস্থ। তাই ঘুমিয়ে আছেন। জোরে কথা বলা যাবে না।
এজাহারে বলা হয়, বাসায় জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কোনো আলামত দেখিনি। আমি ভয় পাই এবং বাসায় আসতে চাই। কিন্তু সে বাসায় আসতে দেয় না। সে আমাকে রাতে খাবার খাওয়ায় এবং নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ায়। আমি তাকে নিষেধ করলে সে একদিন খেলে কিছু হবে না মর্মে জানায়।
এরপর রাত দেড়টায় ইভান তাকে ধর্ষণ করে বলে তরুণী এজাহারে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, আমি চিৎকার করতে থাকলে সে রাত সাড়ে ৩টায় আমার ব্যাগ রেখে বাসা থেকে বের করে দেয়।
তরুণীর ভাষ্য, ব্যাগে তিনটা ড্রেস, দুটি জিন্স, একটা কুর্তা, তিনটি মোবাইল, চার্জার, সিম কার্ড, মেমোরি কার্ড ও নগদ ১৫ হাজার টাকা ছিল। বাসা থেকে রাতে বের করে দেয়ার পর পথচারী এক ভদ্রলোকের সহায়তায় তিনি বাসায় ফেরেন বলেও উল্লেখ করেন।
এজাহারে তরুণী আরও বলেন, আসামি আমাকে এর আগেও বিবাহের প্রলোভনে ধর্ষণ করে। আমাকে ভয় দেখায়, মুখ খুললে তার কাছে থাকা খারাপ ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবে।
কিছুটা সুস্থ হয়ে এবং আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলে এজাহার দিতে দেরি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন এ তরুণী।
পাঠকের মতামত