মাহাবুবুর রহমান :
কক্সবাজার সিটি কলেজ এখন শুধু একটি নাম নয় একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। খুব অল্প সময়ে কলেজটি তার নিজস্ব মানকে নিয়ে গেছে অন্য এক উচ্চতায়। ১৯৯৩ সালে স্থাপিত ১৯৯৫ সালে এমপিওভুক্ত সিটি কলেজে বর্তমানে ৭ হাজার শিক্ষার্থী ১০১ জন শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারী ৫ টি ভবন এছাড়াও কম্পিউটার ও বিজ্ঞানাগারসহ সবকিছু যেন স্বয়ংসম্পূর্ন। এখানে মাধ্যামিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, উন্মোক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এর আওতায় নিয়মিত সকল উচ্চ শিক্ষা ছাড়াও ৬ টি বিষয়ে রয়েছে মাস্টার্স। সাথে জেলার প্রথম কর্মজীবীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য মাস্ট্রার্স প্রিলিমিনারী। আর নিয়মিত এবং প্রাইভেটে রয়েছে পড়ার সুযোগ। আগামীতে আরো বেশ কয়েকটি বিষয়ে আসছে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কক্সবাজার সিটি কলেজ এখন জেলার অন্যতম সেরা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টদের দাবী সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই প্রতিষ্ঠান দ্রুত উন্নতি করেছে। সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে সিটি কলেজ জেলার সর্বোচ্চ উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারবে।
পিএমখালী থেকে আসা কক্সবাজার সিটি কলেজে চলতি বছরে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া উম্মে ফারজানা আনজু জানান আমি সহ আমাদের অনেক বন্ধুদের মধ্যে সিটি কলেজ সম্পর্কে ভুল ধারণা ছিল, সিটি কলেজে ভর্তি না হলে সেই ভুল ধারণা আমাদের থেকেই যেত এখানে ভর্তি হওয়ার পরই দেখছি সিটি কলেজই সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী এবং নিয়মিত ক্লাস হয়। এখানকার শিক্ষার পরিবেশ খুবই ভাল, আমাদের প্রথম বর্ষেই নাকি ১৪৫০ জন শিক্ষার্থী, এটা সত্যিই অবাক হবার মত। তবে খুব ভাল দিক হচ্ছে রুটিন অনুযায়ী সব ক্লাস হয়। আর শিক্ষকরাও খুব আন্তরিক। বিএ পাস কোর্সের শিক্ষার্থী শামসুল আলম বলেন আমি বহু বছর ধরে কক্সবাজার সিটি কলেজে পড়ছি আমার কাছে মনে হয়েছে সিটি কলেজ আমাদের জন্য আল্লাহর রহমত কারণ আমার এক বোন এখন সেখানে মাস্টার্সে পড়ে আমরা চেস্টা করেও কক্সবাজার সরকারি কলেজ ভর্তি হতে পারি নি। যদি সিটি কলেজ না থাকতো তাহলে আমার বোনের উচ্চ শিক্ষা নেওয়া হতো না। কারণ আমাদের ঢাকা চট্টগ্রামে গিয়ে লেখাপড়া করানোর সামর্থ নেই। তাই আমি মনে করি সিটি কলেজ উচ্চ শিক্ষার জন্য কক্সবাজারের ছেলে মেয়েদের জন্য বড় রহমত। তবে কতৃপক্ষ চাইলে খরচ আরো কিছুটা কমিয়ে নিলে গরীব পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য ভাল হতো। টেকপাড়া এলাকার সেলিনা আকতার বলেন সিটি কলেজের মত আর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কক্সবাজারে গড়ে উঠলে আমার মতো স্থানিয় ছেলে মেয়েরা বেশির ভাগই উচ্চ শিক্ষাপেত। আর সম্প্রতি বিশেষ করে বেশ কয়েক টি বিষয়ে মাস্ট্রার্স আনার পর সেই পথ যেন আরো সুগম হয়েছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সিটি কলেজের বর্নিল ইতিহাসের সাথে যুক্ত হওয়া প্রভাষক, নুরুল হুদা এবং জসিম উদ্দিন বলেন কক্সবাজার সিটি কলেজ এখন আপন মহিমায় উজ্জল একটি প্রতিষ্ঠান। আমরা এর সাথে যুক্ত হতে পেরে খুবই আনন্দিত। মুলত পরিচালনা কমিটি, অধ্যক্ষ এবং শিক্ষকদের আন্তরিকতার কারণে অল্প সময়ে সিটি কলেজের এ সফলতা। হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গোপাল কৃষ্ণ দাশ বলেন আমাদের অধ্যক্ষ বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য তাই আমি মনে করি উনার আন্তরিকতায় বেশির ভাগ বিষয় খোলা সম্ভব হয়েছে। এতে কক্সবাজারের ছেলেমেয়েরা সহজে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। আর বর্তমান অধ্যক্ষ শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা দিতে সব সময় সচেস্ট থাকে এতে শিক্ষকরাও আন্তরিকতার সাথে পাঠদানে উৎসাহিত হয়।
প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক বর্তমানে রাষ্ট্র্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহানুর আক্তার বলেন আমরা কল্পনাও করতে পারিনি সিটি কলেজ এত সফল হবে। আজ এই কলেজ জেলার সর্বোচ্চ ছাত্র, শিক্ষক এর সমন্বয়ে একটি আধূনিক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভাবতে খুব ভাল লাগে। এর ফলে খুব কম খরচে স্থানিয় ছেলে মেয়েরা বাড়িতে বসেই উচ্চ শিক্ষা নিতে পারছে। আগে এ সব বিষয়ে পড়েতে ঢাকা বা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হতো। তিনি বলেন এখন আমি বিশ্বাষ করি সিটি কলেজই পারবে বিশ্ববিদ্যালয় মানের লেখাপড়া দিতে। কলেজের উপাধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠাকালীর শিক্ষক আবু মোঃ জাফর সাদেক বলেন প্রতিষ্ঠাকালীর অধ্যক্ষ প্রফেসর মমতাজুল হক এর সময় আমরা নিয়মিত বোর্ড নির্ধারিত লেখাপড়া করিয়ে আসছি, পরে বর্তমান অধ্যক্ষের সময়ে ২০১০-১১ শিক্ষা বর্ষে সর্ব প্রথম মাস্টার্স আনার পর আজ ৫ বছরের মাথায় বহু বিষয়ে মাস্টার্র্স পড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সাথে অনার্সতো আছে। সেটা একমাত্র সম্ভব হয়েছে বর্তমান অধ্যক্ষ এবং সভাপতির দক্ষতা এবং আন্তরিকতার কারণে। ইচ্ছা থাকলে একটি প্রতিষ্ঠান যে সফল করা যায় সেটার উজ্জল প্রমাণ কক্সবাজার সিটি কলেজ।
এ ব্যপারে কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যা থিং অং বলেন আমি কলেজকে আপন করে নিয়েছি এটাকে কখনো চাকরি মনে করিনি। মনে করেছি এটা আমার প্রবিত্র আমানত,এবং দায়িত্ব সেভাবেই আমি কাজ করেছি, চেস্টা করেছি সিটি কলেজকে একটি উচ্চ শিক্ষার সিড়ি হিসাবে পরিচিত করতে। ৭ হাজার শিক্ষার্থী এবং ১০১ জন শিক্ষকের এই বিশাল প্রতিষ্ঠান নিশ্চই জেলা বাসির গর্বের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর হয়েছে। এখানে বর্তমানে নিয়মিত ৬ টি বিষয়ে মাস্টার্র্স ছাড়াও সম্প্রতি যোগ হয়েছে কম্পিউটার সাইন্সে বিএসসি অনার্স প্রফেসনাল কোর্স। এছাড়াও বর্তমানে চালু আছে জেলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট কোর্সের বিবিএ অনার্স প্রফেসনাল। আর কর্মজীবি শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্টার্স প্লিমিনারী যা জেলার কোন কলেজে নেই। এতে করে কর্মজীবী মানুষও উচ্চ শিক্ষা নিতে পারবে। আর মাস্টার্র্স ফাইনাল নিয়মিত এবং প্রাইভেট দুটি সুবিধায় আমাদের আছে। আর আমাদের কলেজ একমাত্র রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত, এখানে কোন ছেলেমেয়েকে রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। আর সব ধরণের সহ শিক্ষা কার্যক্রমতো আছেই। আমরা ২ বছরেই ৫ তলা নিজস্ব ভবন তৈরি করেছি, আগের ভবন সহ এখন আমাদের শ্রেনী সংকট একেবারেই নেই। তিনি বলেন মূলত গর্ভনিং বডির আন্তরিকতা, উদার মানসিকতা, সর্বোচ্চ সহযোগিতার এবং শিক্ষকদের আন্তরিকতার কারণে আমাদের এই সফলতা।
এ ব্যপারে কক্সবাজার সিটি কলেজ গর্ভনিং বডির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন বলেন আমি যখন ১৯৯৬ সালে কলেজের দায়িত্ব নেই তখন মাত্র ২৫০ জন শিক্ষার্থী এবং ২৩ জন শিক্ষক ছিল। বসার বেঞ্চ ছিল না। আজ ৭ হাজার শিক্ষার্থী কেউ দাড়িয়ে থাকে না। এই সফলতার পেছনে কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষকবৃন্ধ, পরিচালনা কমিটি সবার সহযোগিতা ছিল। এই কলেজ নিয়ে আমার স্বপ্ন ছিল সেটা আজ কিছুটা হলেও পূরন হতে চলেছে। আরো বড় স্বপ্ন আছে সিটি কলেজ শুধু কক্সবাজার নয় বাংলাদেশের একটি বৃহৎ কলেজ হবে। আর আমাদের কক্সবাজারের ছেলে মেয়েরা ঘরে বসেই উচ্চ শিক্ষা নেবে। এবং তারা কক্সবাজারের উন্নয়নে অবদান রাখবে। সুত্র,দৈনিক কক্সবাজার