সীতাকুন্ড মাদামবিবিরহাটে স্বামীকে হত্যা করে থানায় আত্মসমর্পণ করেছে স্ত্রী খতিজা বেগম। পুলিশ ঘাতক স্ত্রীকে নিয়ে বুধবার মধ্যরাতে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেমের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার খতিজাকে আদালতে প্রেরণ করা হলে সেখানে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে হত্যার বর্ণনা দেয় সে। ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
থানা সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার সীতাকু-ের ভাটিয়ারী ইউনিয়নের মাদামবিবিরহাট নেভী রোড এলাকার মোহাম্মদ নাছির কন্ট্রাক্টরের ভাড়াটিয়া (৪ তলার বাসিন্দা) মো. জাহাঙ্গীর আলমকে (৪৮) তারই স্ত্রী দুই সন্তানেন জননী খতিজা বেগম (৩৮) ভারি পাথর দিয়ে মাথা ও গলায় আঘাত করে হত্যা করে। ঘটনার পর নিজের দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে খতিজা ঘর থেকে বেরিয়ে দিশেহারা হয়ে ঘুরতে থাকে। এভাবে সারাদিন ঘোরার পর রাত ১১টার দিকে আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সীতাকু- থানায় উপস্থিত হন। সেখানে গিয়ে খতিজা ডিউটি অফিসারের কাছে স্বামী হত্যার কথা জানায়। এ ঘটনা শুনে ডিউটি অফিসার বিস্মিত হয়ে তাকে ওসি ইফতেখার হাসানের কাছে নিয়ে যান। খতিজা তার কাছেও খুনের ঘটনা বর্ণনা করে বলে, আমি স্বামীকে হত্যা করেছি। আমাকে গ্রেপ্তার করুন।
সব শুনে ওসি ইফতেখার হাসান ওসি (তদন্ত) মোজাম্মেলের সাথে তাকে ঘটনাস্থলে পাঠান। রাত আনুমানিক ১টায় ওসি (তদন্ত) মোজাম্মেলের নেতৃত্বে পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থল মাদামবিবিরহাটের নাছির কন্ট্রাক্টরের ভাড়াবাড়িতে পৌঁছালে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে হত্যার পর লাশটি তোষক দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। খতিজার বর্ণনামতই মৃতদেহের মাথা, মুখ ও গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পরে লাশের সুরতহাল তৈরি করে রাত ২টায় জাহাঙ্গীরের লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। এদিকে এলাকাবাসী জানায়, বুধবার এই হত্যাকা- ঘটলেও গভীর রাতে পুলিশ আসার আগ পর্যন্ত কেউই এ ঘটনা জানতে পারেনি। অন্যদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে পুলিশ পরিবেষ্টিত খতিজা বেগম সাংবাদিকদের বলে, তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম ফেনী জেলার দাগনভুঁইয়া থানার ভবানীপুর গ্রামের আব্দুর রহিমের পুত্র। তিনি সম্পর্কে তার আপন খালাত ভাই হন। খতিজার প্রথম সংসার ভেঙে যাবার পর খালাত ভাই জাহাঙ্গীরের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয়ে ২০০০ সালের তাদের বিয়ে হয়েছিলো। সংসারে শাহীন (১৩) ও স¤্রাট (৩) নামক দুই পুত্র সন্তান আছে তাদের। জাহাঙ্গীর পেশায় ড্রাইভার। সীতাকু-ের মাদামবিবিরহাট এলাকায় আবুল খায়ের গ্রুপের একটি কারখানার গাড়িচালক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। খতিজার অভিযোগ, চাকুরি শেষে প্রতিরাতেই মাদকাসক্ত হয়ে ঘরে ফিরতেন জাহাঙ্গীর। এরপর স্ত্রী-সন্তানদের উপর অকথ্য নির্যাতন শুরু করতেন। এভাবে বছরের পর বছর জাহাঙ্গীরের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন তিনি। সর্বশেষ গত বুধবার রাতে একইভাবে মাদকাসক্ত হয়ে ঘরে ফিরে এসে স্ত্রী খতিজাকে মারধর শুরু করেন। তাকে হত্যা ছাড়া এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তির উপায় নেই ভেবে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অত্যাচার অশান্তি ঘটিয়ে এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর ঘুমিয়ে পড়লে ভোরে পাটা বাটার ভারি পাথর দিয়ে (শিল নড়া) তার মাথা ও গলায় আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয়। হত্যাকারী খতিজা আরো বলে, তাকে হত্যার পর তিনি দিশেহারা হয়ে পড়ে। সে জাহাঙ্গীরের লাশ তোষকে মুড়িয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে। পরে কি করবে, কোথায় যাবে এসব ভেবে ভেবে দুই সন্তানকে নিয়ে সারাদিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে থাকে। এক পর্যায়ে থানায় আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাত ১১টার দিকে সীতাকু- থানায় গিয়ে উপস্থিত হয়।
সীতাকু- থানার ওসি (তদন্ত) মোজাম্মেল হক পূর্বকোণকে বলেন, স্বামী জাহাঙ্গীরকে হত্যা করে নিজেই থানায় এসে আত্মসমর্পন করেছে স্ত্রী খতিজা বেগম। তার বর্ণনা শুনে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাটিয়ারীর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাজিমউদ্দিনসহ মান্যগণ্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে লাশটি উদ্ধার করেছি। পরে লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার হত্যাকারী খতিজাকে আদালতে পাঠানো হলে সেখানে সে বিচারকের সামনে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। সীতাকু- থানার ওসি মো. ইফতেখার হাসান পূর্বকোণকে বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। জাহাঙ্গীর ও খতিজার সংসারে দুটি পুত্রসন্তান আছে। ছোট ছেলেটির বয়স মাত্র ৩ বছর। গতকাল আদালত খতিজাকে জেলে প্রেরণ করলে ছোট ছেলে স¤্রাটকেও তার মায়ের সাথে দেওয়া হয়েছে। আর বড় ছেলে শাহীনকে (১৩) তার এক চাচার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।