ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৪/১২/২০২৩ ৯:২৩ এএম

# প্রথমবারের মতো মাত্র ৪৮ ঘন্টায় ৮২ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল মজুদ হলো স্টোরেজ ট্যাঙ্কে

গভীর সমুদ্র থেকে প্রথমবারের সৌদি আবর থেকে আমদানি করা ৮২ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল খালাস প্রক্রিয়া সফল হয়েছে। মাত্র ৪৮ ঘন্টায় ১৬ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজারের মহেশখালীতে স্থাপিত পাম্পিং স্টেশনের ট্যাঙ্কে এ তেল মজুদ করা হয়।
ইন্সটলেশন অব সিংগেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি তেল পরিবহনে এক নব দিগন্ত উন্মোচিত হবার পাশাপাশি সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইন্দোনেশিয়ার পতাকাবাহি জাহাজ এমটি-গামসুনুরো; বিশাল আকৃতির এই জাহাজের অবস্থান এখন বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে। তবে জাহাজটি খালি নয়, এই জাহাজযোগে সৌদি আবর থেকে আমদানি করা হয়েছে ৮২ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল।

সিঙ্গেল পয়েন্ট ম্যুরিং প্রকল্পের আওতায় বঙ্গোপসাগরে স্থাপিত হয়েছে বিশেষ বয়া; বয়ার পাশেই নোঙর করা এমটি-গামসুনুরো জাহাজ। বয়া থেকে জাহাজে সংযোগ করা হয়েছে দুটি পাইপলাইন। যার মাধ্যমে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে ৩৬ ইঞ্চি পাইপ লাইন দিয়ে ১৬ কিলোমিটার দূরে মহেশখালীতে নির্মিত স্টোরেজ ট্যাঙ্কে শুক্রবার শুরু হয় সৌদি আরব থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল খালাস কার্যক্রম। যা শনিবার (০২ ডিসেম্বর) রাতে খালাস কার্যক্রম শেষ হয়।
এসপিএম প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. শরিফ হাসনাত বলেন, ক্রুড অয়েল ট্যাঙ্কার যা এখন কমিশনিংয়ের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা অনেক বেশি ধারণ ক্ষমতার পাম্পিং স্টেশন। আমরা এসপিএম প্রজেক্ট যেটা বাস্তবায়ন করেছি সেটির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ক্রুড অয়েল খালাসের মাধ্যমে কমিশনিং কার্যক্রম শেষ করেছি। এটা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল, সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সফলভাবে এই কার্যক্রমের যাত্রা শুরু করলাম। এখন থেকে সব ধরণের জ্বালানি তেল সমুদ্র গভীরে স্থাপিত বিশেষ বয়ার মাধ্যমে অতি অল্প সময়ের মধ্যে খালাস করা হবে।
এর আগে আমদানি করা জ্বালানি তেল লাইটারেজ অপারেশনের মাধ্যমে খালাসে সময় লাগতো ১২ থেকে ১৪ দিন। কিন্তু বহির্বিশ্বের মতো তেল খালাসে নতুন প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করায় এখন মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় সফলভাবে খালাস হয় সৌদি আবর থেকে আমদানি করে ৮২ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল।
এসপিএম প্রকল্পের কর্মকর্তা মো. মোনজেদ আলী শান্ত বলেন, সৌদি আরব থেকে এমটি গামসুনুরো জাহাজ যোগে আমদানীকৃত ৮২ হাজার মেট্রিক টন এরাবিয়ান লাইট ক্রুড অয়েল শুক্রবার থেকে পাম্প শুরু করে। ‘ইন্সটলেশন অব সিংগেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইন’ প্রকল্পের আওতায় বঙ্গোপসাগরে স্থাপিত ভাসমান জেটি (এসপিএম বয়া) এর মাধ্যমে ৩৬ ইঞ্চি পাইপ লাইন দিয়ে ১৬ কি.মি. দূরে মহেশখালির কালারমারছড়াস্থ পাম্পিং স্টেশনে ক্রুড ট্যাঙ্কে জ্বালানি তেল জমা করা হয়। সমস্ত তেল খালাস শনিবার রাতে শেষ হয়। এরপর এসব জ্বালানি তেল পরিশোধনের জন্য ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাইনের মাধ্যমে ৯৪ কি. মি. দূরে চট্রগ্রামস্থ ইস্টার্ন রিফাইনারী লিমিটেড এ পাঠানো হবে।
জ্বালানি তেল খালাস প্রক্রিয়া পুরোদমে শুক্রবার শুরু হয়ে শেষ হয় শনিবার। পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা। আর পুরো কার্যক্রম তদারকি করেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ।
তিনি বলেন, এতোদিন বিদেশ থেকে যে তেল আমদানি করি তা মেন্যুয়েল পদ্ধতিতে খালাস করা হতো। এর ফলে প্রচুর তেল অপচয় এবং আর্থিক ক্ষতি হতো। এসপিএম প্রযুক্তি হওয়ার ফলে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

এ বি এম আজাদ আরও বলেন, ভবিষ্যতে এখানে আমাদের জ্বালানির স্টোরেজ যেটা রয়েছে সেটির সক্ষমতা আরো বাড়াব। এর ফলে সরকারের লক্ষ্য ৬০ দিনের জ্বালানি তেল মজুদ রাখার এই জায়গায় আমরা করতে সক্ষম হবো। এই প্রযুক্তি মাধ্যমে সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি তেল পরিবহনেও নৈরাজ্য কমবে। একই সঙ্গে পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি তেল পরিবহনে উন্মোচিত হবে এক নব দিগন্ত, যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে বাস্তবায়িত সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্পটি গেল ১৪ নভেম্বর গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পরীক্ষামূলক পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসি।
বিপিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রকল্পের আওতায় গভীর সাগরে বয়া স্থাপনের পাশাপাশি কালারমারছড়ার সোনারপাড়ায় তিনটি পরিশোধিত ও তিনটি অপরিশোধিত তেলের স্টোরেজ ট্যাংকসহ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। স্টোরেজ ট্যাংকগুলোতে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত তেল মজুদ রাখা হবে। প্রতিটি পরিশোধিত স্টোরেজ ট্যাংকারের ধারন ক্ষমতা ৬০ হাজার ঘনমিটার ও অপরিশোধিত স্টোরেজ ট্যাংকারের ধারন ক্ষমতা ৩৫ হাজার ঘনমিটার। এছাড়া ১৪৬ কিলোমিটার অফশোরে ও ৭৪ কিলোমিটার অনশোরসহ মোট ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। সমুদ্রের তলদেশের এই পাইপলাইনের মাধ্যমে শোর ট্যাংকে নেওয়া হচ্ছে আমদানি করা তেল।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে নেওয়া প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ায় চার দফা সংশোধন করে মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো হয়েছে। আর এতে ব্যয় বেড়েছে এক হাজার ২১৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা।

পাঠকের মতামত

রামুর ফতেখাঁরকুলে উপ-নির্বাচনে প্রতীক পেয়ে প্রচারনায় ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থী

রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের উপ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধি ৩ প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্ধ দেয়া ...

টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর মনিরুজ্জামানের সম্পদ জব্দ দুদকের মামলা

টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর মো. মনিরুজ্জামানের সম্পদ জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ স্পেশাল ...