
সম্প্রতি কক্সবাজারে এক নারী পর্যটককে ধর্ষণের অভিযোগে হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা; নড়েচড়ে উঠেছিল পুলিশ-প্রশাসনও। তবে ঘটে যাওয়া সেই চাঞ্চল্য ঘটনার কথা ভুলে এ বছরের শেষ দিন ও নতুন বছরের আগমনে ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ উপলক্ষে পর্যটন নগর কক্সবাজারে যেতে শুরু করেছে পর্যটকরা। শীতের হিমেল হাওয়া ও শিশিরভেজা বালিয়াড়ি মেতে উঠবে পর্যটকদের পদচারণায়। এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি নারী পর্যটকদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানান উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজারে সাড়ে ৪শ’ আবাসিক হোটেলে প্রায় দেড় লাখ লোক রাত্রিযাপন করতে পারবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি হোটেলে সিসিটিভি ক্যামেরা নিশ্চিত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এজন্য বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সাদা পোশাকধারী পুলিশ সবসময় মাঠে থেকে দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি বলেন, কক্সবাজারে প্রত্যেক পর্যটন জোনে টুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। স্বাস্থ্যবিধি মানা ও পর্যটকদের নিরাপত্তায় কয়েক স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে টুরিস্ট পুলিশ। তবে এবারেও সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে যে, উন্মুক্ত স্থানে থার্টিফাস্ট নাইটের কোনো আয়োজন করা যাবে না। তাই কক্সবাজারেও উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না বলে জানান তিনি।
পর্যটন সেল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান জানান, পর্যটকদের সেবার মান বাড়াতে এবং সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একাধিক বৈঠকে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শুধু থার্টিফার্স্ট নাইট বা বর্ষবরণ নয়, ভরা পর্যটন মৌসুমে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মনিটরিং কমিটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবেন।
ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার সভাপতি আনোয়ার কামাল জানান, এবারে ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ উপলক্ষে এ পর্যন্ত ৭০-৮০ ভাগ রুম বুকিং হয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় সৈকতে উন্মুক্ত স্থানে কোনো আয়োজন হচ্ছে না। তাই এবার কক্সবাজারে পর্যটক আগমন আশানুরূপ হবে না। নতুন বছর ভালোভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস এবার একটি বিশেষ ছাড় দিচ্ছে। তা হচ্ছে রুমে দুজনের জায়গায় তিনজন, তিনজনের জায়গা চারজন। এভাবে প্রতিটি রুমে অতিরিক্ত পর্যটক থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এজন্য অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়া হবে না। নিয়ন্ত্রিত মূল্যে সব রুম বুকিং দেওয়া হচ্ছে। তিনি কোনো দালালের মাধ্যমে হোটেল বুকিং না দেওয়ার জন্য পর্যটক অতিথিদের প্রতি অনুরোধ করেন।
আবাসিক হোটেল অফিসার্স অ্যাসোশিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ জানান, এখন সব হোটেল অনলাইনে বুকিং নিচ্ছে। তাই কোনো দালালের কাছে না গিয়ে সরাসরি হোটেল বুকিং দিলে সাশ্রয় রেটে রুম দেওয়া সম্ভব।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে শহরের সন্ত্রাসী আশিক ঢাকা থেকে স্বামী-সন্তান নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে আসা এক নারী পর্যটককে তুলে নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। পরে কক্সবাজারের হোটেল জিয়া গেস্ট ইন থেকে র্যাব ধর্ষিতা নারী পর্যটককে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজার সদর থানায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভিকটিমের স্বামী। এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন— আশিকুর রহমান ও তাঁর তিন সহযোগী ইস্রাফিল খোদা ওরফে জয় ও মেহেদি হাসান ওরফে বাবু এবং হোটেল ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটন। আসামিদের মধ্যে জিয়া গেস্ট ইনের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে ওইদিন বৃহস্পতিবার রাতেই গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এরপর গতকাল রোববার দুপুরে তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান। গ্রেপ্তার ওই তিনজন হলেন— আবুল কাশেমের ছেলে রেজাউল করিম (২৫), মৃত মুক্তার আহমদের ছেলে মামুনুর রশীদ (২৮) এবং মৃত সালেহ আহমেদের ছেলে মেহেদী হাসান (২১)। পরে রোববার রাতে মাদারীপুরের মোস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণকাণ্ডের প্রধান আসামি ও মূলহোতা আশিকুল ইসলাম আশিককে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ নিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল ছয়জনে।
পাঠকের মতামত