প্রকাশিত: ১২/০৭/২০১৭ ৯:৪৬ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৪:৫১ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৬ এবং ৫৭ ধারা কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে করা হয়নি। এটা সাধারণ দন্ডবিধি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার যাত্রা শুরু করার আগে থেকে এই আইনটি করা হয়েছিল। এটা কিন্তু সাংবাদিকদের জন্য করা হয়নি। সেখানে ডিজিটাইজেশনের ফলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রয়োগ করে যদি কেউ আইন বিরোধী কর্মকান্ড করে সেটার জন্যই এই আইনটি করা হয়েছে।’

বুধবার জাতীয় সংসদে সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট পীর ফজলুর রহমানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাইজেশনের ফলে তথ্য-প্রযুক্তি স্পেসে যদি কেউ অপব্যবহার করে, উস্কানি দেয়, চরিত্র হনন করে, বাংলাদেশের দন্ডবিধিতে এবং সংবিধানে যেগুলোকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার ব্যাপারে ক্ষতি হতে পারে অথবা সাম্প্রদায়িক উস্কানি হতে পারে, বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে, যেগুলো আইন দ্বারা আমাদের দন্ডবিধিতে বিধিবদ্ধ করা আছে। সেখানে যদি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রয়োগ করে কেউ চরিত্র হনন করে, পরনিন্দা করে, মিথ্যাচার করে, বিশৃঙ্খলা তৈরি করে, ধর্মীয় বিদ্বেষ তৈরি করে সেই ক্ষেত্রেই আইনটি প্রয়োগ হয়।’

তিনি বলেন, ‘কেউ যদি অনলাইনে বা সামাজিক গনমাধ্যমে এরকম কাজে লিপ্ত লিপ্ত হয় তার ক্ষেত্রে এ আইনটি প্রয়োগ হয়। এটা সাংবাদিকদের জন্য প্রয়োগ হয় এ কথাটা ঠিক না। যে কোনো নাগরিক, যিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফেসবুকে, টুইটার এসব জায়গায় যদি সে চরিত্র হনন করে কোন পোষ্ট দেয় তাহলে কিন্তু এ আইনের আওতায় আসে। এটা ১৬ কোটি মানুষের জন্য।’

তিনি বলেন, ‘এ আইনটা করা হয়েছে আমাদের সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান করারর জন্য, নারীর সম্মান রক্ষা করার জন্য, শিশু নিরাপত্তা বিধান করার জন্য, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধান করার জন্য, রাষ্ট্রের পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য, ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের আচার- অনুষ্ঠান নিরাপত্তা বিধান করার জন্য। এইক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটলেই কিন্তু কেবল আইনটা প্রয়োগ করা হয়।’

এটা নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই আইনে যারা গ্রেফতার হয় তারা কিন্তু একটা পর্যায়ে জামিনযোগ্য। যারা এই আইনে গ্রেফতার হয়েছে সবাই কিন্তু জামিন পেয়েছেন। নিম্ন আদালতে জামিন পায়না, উচ্চ আদালতে জামিন পায়।’

তিনি বলেন, ‘তারপরেও যে অভিযোগ সাংবাদিকদের কাছ থেকে এসেছে আমরা প্রত্যেকটা ঘটনা তলিয়ে দেখেছি। কোনো যায়গায় এ আইনের যদি বরখেলাপ হয় বা কোনোরকম হয়রানির ব্যাপার হয় সেটা তথ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপ করে। আমরা সাথে সাথেই এটা দেখি এবং বিচারকরাও যদি কোনো মিথ্যাচার হয়ে থাকে দেখে জামিন দিয়ে দিচ্ছে।’

অনেক সাংবাদিক নিগৃহীত হচ্ছে এ কথাটা ঠিক নয় বলে দাবি করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই মুহুর্তে বাংলাদেশে ২৮০০ এর অধিক নিবন্ধিত পত্র-পত্রিকা আছে, ১৮০০ এর অধিক অনলাইন পত্রিকা এবং পোর্টাল চলছে। প্রতি জায়গায় যদি ১০ জন সাংবাদিক হিসেব করা হয় তাহলে দেখা যাবে বহু সাংবাদিক কাজ করছে। সেদিক থেকে যদি দেখা হয় খুবই নগণ্য, ২-১ জন এ আইনে গ্রেফতার হয়েছেন এবং আদালতে যাওয়ার পরে ২-১ দিনের ভেতর জামিন পেয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘তারপরেও আমরা আমাদের সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সমগ্র ডিজিটাল অপরাধ মোকাবেলা করার জন্য একটি সমন্বিত ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট তৈরি করার খসড়া চলছে। এ আইনে আমরা সবাই অংশগ্রহণ করছি। সেই আইনটা আসার পরে আইনমন্ত্রী এবং আমাদের সরকার বিচার-বিশ্লেষন করে দেখবে ৫৭ ধারার এ আইনটা রাখা দরকার আছে, নাকি নাই।’

তিনি আরও বলেন ‘তবে এ আইনটা মানবাধিকার বিরোধী বলে আমি মনে করি না। বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে যদি সাংঘর্ষিক হয় এতদিন কেউ উচ্চ আদালতে গেলে এটা বাতিল হয়ে যেত। আজ পর্যন্ত কেউ উচ্চ আদালতে যেয়ে এ আইনটাকে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক প্রমান করতে পারেনি। আইনটা সাংবাদিকদের জন্য করা হয়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা এবং নাগরিক নিরাপত্তার জন্য করা হয়েছে।’

পাঠকের মতামত