প্রকাশিত: ২১/১০/২০১৭ ৭:৩৪ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১১:৫৭ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
রাখাইনে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের ওপর স্মরণকালের সবচেয়ে মানবিক দুর্গতি নেমে এসেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গোঁড়ামি ও একরোখা মনোভাবের কারণে। সে জাল থেকে বের হয়ে আসা তো দূরের কথা রোহিঙ্গাদের দুরাবস্থার বিষয়টি ভ্রুক্ষেপও করছেন না মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী নোবেলজয়ী অং সান সু চি। বৈশ্বিক পরিসরে সমালোচনার পাশাপাশি মিয়ানমার রাষ্ট্রের মানবিক বোধের চূড়ান্ত অবক্ষয় নিয়ে সবাই সোচ্চার। যতটা সোচ্চার বিশ্ব ততটাই উট পাখির মতো মাথা গুঁজে আছে দেশটির জনগণ। উল্টো রোহিঙ্গাদের বিতাড়নে সরকারের পক্ষে তাদের অবস্থান, এমন সংবাদ পরিবেশন করেছে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা বিভিন্ন সময়। কিন্তু এ ধ্বংসস্তুপ থেকেই রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলার জন্য দল গড়ছেন এক সময়ের ছাত্রনেতা ও গণতন্ত্রকর্মী কো কো জি।

সম্প্রতি জাপানি একটি সংবাদমাধ্যম প্রকাশিত একটি নিবন্ধে নতুন দল গঠনের খবরটি সামনে আসে।

রাখাইন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘জাতিগতভাবে নির্মূল’, ‘গণহত্যা’ বললেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বারবারই এসব অভিযোগ হিসেবে উড়িয়ে দিয়ে কানে তোলেনি। সু চির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি। নির্বিকার থাকার পাশাপাশি জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বিষয়টি নিয়ে সেনাবাহিনীর গৎবাঁধা বক্তব্যগুলোই আওড়েছেন প্রকারান্তরে। এটি কোনো কার্যকর বক্তব্য নয় বলে বিশ্বে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ ছাড়া তিনি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বললেও স্পষ্ট কিছু বলেননি।

এসব মোটেও ইতিবাচকভাবে নিতে পারেননি কো জি। অং সান সু চির রোহিঙ্গানীতির প্রতিবাদেই দল গঠনের বিষয়ে জাপানি সংবাদমাধ্যমকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের শেষ নাগাদ তার নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে।’

সামরিক সরকারের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা পালন করা এ নেতা রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের পাশাপাশি মিয়ানমারে ‘জবাবদিহিতামূলক বহুদলীয় গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

গণতন্ত্র ও তাঁর দল কেমন হবে এসব বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র মানে বহুদলীয়। গণতন্ত্রের প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে। আমাদের জনগণও ভোটদানে উৎসাহী ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশের জন্য একটি জবাবদিহিতামূলক সরকার তৈরি করতে চাই।’

আশির দশকে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন কো কো জি। ১৯৮৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সামরিক শাসনামলের সময় বিভিন্ন অভিযোগে দীর্ঘ ১৭ বছর কারাগারে বন্দি রাখা হয় তাকে। পাঁচ বছর আগে মুক্তি পাওয়া এ নেতা ২০১৫ সালের নির্বাচনে সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি থেকে প্রার্থী হবেন বলা হলেও পরে তার প্রার্থিতা তখন নিশ্চিত হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি সপ্তাহে নিপ্পন ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে জাপান সফর করেছিলেন কো জি। সফরে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে মিয়ানমারের সংকট নিয়ে কথা হয় এ নেতার। এ সময় তাদেরকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে অবহিত করে টোকিওতে থাকা মিয়ানমারের নাগরিকদের মধ্যে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন তিনি। তবে দলের বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেননি।

প্রতিবেদনের বলা হয়, নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির পর কো কো জি মিয়ানমারের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। তিনি ‘৮৮ জেনারেশ স্টুডেন্ট’ নামে একটি দলের মাধ্যমে বিস্তৃত পরিসরে পরিচিতি লাভ করেন। সামরিক সরকার পতনে তার অবদান অনস্বীকার্য। সু চি’র সহযোগিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি।

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কো জি বলেন, রোহিঙ্গারা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারে। এরপর তারা রাষ্ট্র থেকে সব সুযোগ-সুবিধা পাবে। সব নাগরিকই ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের কাছে সমান সুবিধা উপভোগ করবে। যারা আইন লঙ্ঘন করবে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৩০টি পুলিশ পোস্টে একযোগে হামলা করে দ্য আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। এরপরই শুরু হয়ে যায় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান। খুন, ধর্ষণ, হত্যা চলতে থাকে নির্বিচারে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় প্রায় ২৮৮টি গ্রাম। এ অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বার বার রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনের মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে চাপ দিলেও দেশটির কর্মপরিক্রমা বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা যায়, সমস্যা সমাধানে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই দেশটির পক্ষ থেকে। কো কো জি’র রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা তাই ব্যতিক্রম কিছুর বার্তা হয়েই এলো বলা চলে।

পাঠকের মতামত

স্বাভাবিক পথে সেন্টমার্টিনে যাচ্ছে খাদ্যপণ্য, টেকনাফে ফিরছে যাত্রী

অবশেষে স্বাভাবিক হচ্ছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে নৌযান চলাচল। দীর্ঘ ৩৩ দিন পর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে যাতায়াত করছে ...