
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৩ ও ১৯ নম্বর ক্যাম্প ঘিরে গড়ে উঠেছে শত শত অবৈধ দোকান। আর এসব দোকান ঘিরে চলছে অবৈধ অর্থের রমরমা বাণিজ্য। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দিনদুপুরে এসব বাণিজ্য চলে আসলেও প্রশাসন রয়েছে নিরব ভূমিকায়।
অভিযোগে জানা যায়, উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বন বিভাগের জমিতে গড়ে উঠেছে শত শত অবৈধ দোকান ও বাজার। এসব বাজারে ভিড়ের কারণে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যদিও ক্যাম্প প্রশাসন নিয়মিত অভিযানের কথা বলেন, কিন্তু কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ফলে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অবৈধভাবে দখলদারেরা। বিশেষ করে, পালংখালী ইউনিয়নের ১৩ ও ১৯ নম্বর ক্যাম্পে এসব বাজার নিয়ে জনমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, পতিত সরকারের আমলের কিছু চিহ্নিত দখলবাজ এই দোকান বসিয়ে নিয়মিত মাসোহারা নিচ্ছেন। এসব টাকা কয়েক জায়গায় সমানভাবে বন্টন হয়। এসব অবৈধ বাজারের আয়কৃত অর্থ সব অবৈধ কার্যক্রমে ব্যবহার হলেও বৈধ ট্রেড লাইসেন্স ও কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র না থাকায় স্থানীয় সরকার ও উপজেলা পরিষদকে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ও কর ফাঁকি দিচ্ছে এই সিন্ডিকেট। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব বাজার হওয়ার পেছনে ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের দায় এড়ানোরও সুযোগ নেই। কারণ এসব বাজার করতে ক্যাম্প প্রশাসন কাগজে–কলমে লিখিত অনুমতি না দিলেও তা বন্ধে কার্যকরি কোন ভূমিকা দৃশ্যমান নয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৩তে মুদিদোকান, ফার্মেসি, কাঁচা বাজার, হোটেল, লাকড়ি দোকান, গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান, চায়ের দোকান, মাছ-মাংসের আড়ত, কাপড়, মোবাইল, জুয়েলার্সসহ বিভিন্ন রকমের দোকান বসানো হয়েছে। এসব দোকানের কোনোটিরই নেই বৈধ ট্রেড লাইসেন্স বা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন। এসব দোকানের মাসিক ভাড়া ৩-৫ হাজার টাকা। এই বিপুল অর্থের একটি টাকাও রাজস্ব পায়না সরকার। পুরাটাই লুটপাট করে চলে যাচ্ছে দখলবাজদের পকেটে। শুধু তাই নয়, চাঁদা আদায় এবং দোকান দখল ঘিরে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা এবং এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এতকিছু হলেও ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের নিরবতা সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এক সময় রোহিঙ্গা আগমনের পূর্বে তারা বন বিভাগের জায়গায় চারা রোপণ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু বর্তমানে অবৈধভাবে দোকানপাট ও বাজার গড়ে তোলে জায়গাগুলো জবরদখল করে ফেলেছে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট। ক্যাম্প প্রশাসনের গাফিলতির কারণে এখনো এসব সরকারি জমি এসব ব্যক্তিরা দখল করে রাখার সুযোগ পেয়েছে।
এদিকে বনবিভাগ উখিয়া রেঞ্জের পক্ষ থেকে ৩০–৪০ জনের একটি তালিকা ক্যাম্প প্রশাসনকে জমা দিয়েছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, বনবিভাগের জায়গার উপর অবৈধভাবে যে স্থাপনা ও অনুমতিবিহীন বাজার গড়ে উঠেছে, সেসব অভিযান করে উচ্ছেদ করা হবে। প্রাথমিকভাবে ক্যাম্প প্রশাসনকে বনবিভাগের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্প প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে অভিযান চালানো হবে।
এদিকে ১৩ ও ১৯ ক্যাম্প ইনচার্জ আল ইমরানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক কক্সবাজারে বলেন, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের অবগত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, বনবিভাগের সমন্বিত কমিটির সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে উচ্ছেদ করা হবে। এজন্য সবার সহযোগিতার প্রয়োজন আছে। তিনি বলেন, ক্যাম্পের ভিতর কোন কিছু করার সুযোগ নেই। করা মানে সম্পূর্ণভাবে বে-আইনি। যেহেতু বনবিভাগের জায়গা, সেহেতু তাঁদের থেকেই এই উদ্যেগ নিতে হবে। অবৈধ জায়গা দখলের বনবিভাগের তালিকা সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে জানান।
এ ব্যাপারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সাংবাদিকদেরকে বলেন, ক্যাম্পের ভিতর সব বাজার অবৈধ, কাউকে বাজার বসাতে অনুমতি দেওয়া হয়নি। এসব বাজার উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান হচ্ছে এবং এ অভিযান চলমান।
পাঠকের মতামত