প্রকাশিত: ১৭/০৯/২০২১ ৮:৩৭ এএম

মিয়ানমারের সামরিক সরকার সাড়ে সাত মাস পার করলেও কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়ে তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ এখনও তৈরি হয়নি বাংলাদেশের।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে একথা বলেন।

তিনি বলেন, “চীনের সাথে ত্রিপক্ষীয় যে আলাপ হয়েছিল, আমরা এখন তো আপনারা জানেন, মিয়ানমারে নতুন সামরিক সরকার এবং ওই সরকারের সাথে এখন পর্যন্ত আমাদের ডাইরেক্ট কোনো সম্পর্ক তৈরি হয় নাই।”

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রায় চার বছর আগে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের যখন চুক্তি হয়েছিল, তখন দেশটিতে ক্ষমতায় ছিল অং সান সু চির নির্বাচিত সরকার।

চলতি বছরের শুরুতে চীনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রক্রিয়ায় আশার আলো দেখা গেলেও ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে ক্ষমতার পটপরিবর্তনে সেটি থমকে যায়।

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মোমেন বলেন, “চীন আমাদেরকে বলেছিল, যে সামরিক সরকার এসেছে, ওরা প্রথমত স্ট্যাবিলাইজ হওয়ার চেষ্টা করছে। যখন তারা স্টাবিলাইজ হবে, তখন তারা এই আলোচনা আবার শুরু করবে।”

দীর্ঘ দিনের চার লাখের সঙ্গে গত চার বছর ধরে আরও সাত লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করছে বাংলাদেশ।

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্টের পর মিয়ানমারে নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসে তারা।

এদের ফেরত নিতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার চার বছরেও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আটকে থাকার মধ্যে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে ভূমিকা রাখতে চাইছিল দুই দেশের ‘বন্ধু’ চীন।

সর্বশেষ গত ১৯ জানুয়ারি মিয়ানমারের সঙ্গে চীনে মধ্যস্থতায় ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বাংলাদেশ।

ওই বৈঠকের পর বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

কিন্তু ত্রিপক্ষীয় সেই উদ্যোগের বাস্তবায়ন শুরুর আগেই ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সু চি সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন ঘিরে চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে এক প্রশ্নে সেই ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের অগ্রগতি না থাকার কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “ইউএনের ক্রেডেশিয়াল কমিটি এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি যে, মিয়ানমারের জাতীয় ঐকমত্যের সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করতে দেবে মিয়ানমারের হয়ে জাতিসংঘে, নাকি মিয়ানামারের সামরিক সরকার বা অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করতে দেবে।

“সুতরাং জাতিসংঘ এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি, কারা মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করবে। এই বিষয়টা সেটেল হওয়ার পর, তারপর একটা সম্ভাবনা হতে পারে, তাদের সাথে বা ত্রিপাক্ষিক কোনো আলোচনার। আমরা অপেক্ষা করছি, তাদের সেই সিদ্ধান্তের জন্য।”

সাড়ে সাত মাসে আলোচনা না থাকলেও প্রত্যাবাসন করার বিষয়ে ’আশাবাদী’ হওয়ার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “নতুন যে সামরিক সরকার মিয়ানমারে এসেছে, তারা জনসম্মুখে বলেছে, আগের সরকারে বাংলাদেশের সাথে, প্রতিবেশীর সাথে যে চুক্তি হয়েছিল… যে তিনটা চুক্তি আমরা করেছিলাম, তারা সেগুলো অনার করবে।

”এবং বলেছে যে, বাংলাদেশের সাথে তারা দ্বিপাক্ষিকভাবে আলোচনা করবে। পরে এর সমাধান খুঁজবে। সুতরাং আমরা এখনও আশাবাদী।”

করোনাভাইরাস মহামারী ও আফগানিস্তান সঙ্কটের কারণে রোহিঙ্গা ইস্যু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অগ্রাধিকার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।

উত্তরে তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুটা হারিয়ে যায়নি। আপনাদের সাধুবাদ জানানো উচিত, রোহিঙ্গা শব্দটা সারা পৃথিবীর সবাই জানে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব সবাই জানে রোহিঙ্গা কী জিনিস। …আমাদের বিভিন্ন রকম কাজের কারণে, প্রচারণার কারণে রোহিঙ্গা নামটি বিশ্ব নেতাদের কাছে পরিচিত। এটা আমি মনে করি, একটা বড় অর্জন। এরা যে নির্যাতিত হয়েছে, সেই চিত্রটাও সারাবিশ্ব এখন জানে। এগুলোতে কোনো ঘাটতি নাই।

“আমি আশাবাদী, যদিও এখনও কেউ যায় নাই, আমার আশা একদিন না একদিন এরা ফেরত যাবে।”

মিয়ানমার থেকে বিতাড়নের দুই বছর পূর্তিতে রোববার কক্সবাজারে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে সমাবেশ করে রোহিঙ্গারা। ছবি: কেএম আসাদ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নতুন কোনো প্রস্তাব জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ তোলা হবে কি না- এ প্রশ্নে মোমেন বলেন, “আমাদের প্রস্তাব তো ইতোমধ্যে টেবিলে আছে। আসিয়ান একজন নতুন বিশেষ দূত বানিয়ে তারা একটি উদ্যোগ নিয়েছে, তাদের সাথে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ হচ্ছে এবং আমরা তাদের সাথে আলাপ করছি।

“রোহিঙ্গার উপরে আমরা যে সাইড ইভেন্টটা করব, সেখানে মোটামুটিভাবে অনেকগুলো দেশ স্বেচ্ছায় আমাদের সাইড ইভেন্টে যোগ দেবে।”

জাতিংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের আয়োজনে ‘রোহিঙ্গা ক্রাইসিস: ইম্প্যারেটিভস ফর এ সাসটেইনেবল সল্যুশন’ শীর্ষক একটি সভা হবে।

ওই সভা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে এই অনুষ্ঠান আয়োজনে ওআইসি, আসিয়ান ও ইউরোপীয় দেশগুলোর পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ছাড়াও গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং ওআইসি অনুষ্ঠানটির সহ-আয়োজক।

“আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার পঞ্চম বছরে পদার্পণ করেছি কিন্তু পাঁচ বছরে একজনকেও মিয়ানমারে পাঠানো সম্ভব হয়নি। অথচ বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন এক নম্বর অগ্রাধিকার ইস্যু।”

এই আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের এই বক্তব্যই বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে।

“শুধু কথা বলে নয়, সত্যিকার অর্থে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিশ্ব যেনো আমাদের পাশে দাঁড়ায় বাংলাদেশ সেই আহ্বান জানাব।

পাঠকের মতামত

বাণিজ্য মেলা দেখে থেকে ফেরার পথে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের আরোহী তিন বন্ধু নিহত

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের আরোহী তিন বন্ধু নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ...

যে কারনে তারেক রহমানকে ধন্যবাদ দিলেন মিজানুর রহমান আজহারী

চট্টগ্রামে মাহফিলে বক্তব্যকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইসলামী স্কলার মিজানুর রহমান আজহারী। ...