
মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্র বিশেষ রঙে করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যাতে একনজর দেখলেই তাদের পরিচয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়। স্বল্প সময়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করারও নির্দেশ দেন তিনি। প্রতিটি মন্ত্রণালয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
গতকাল কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে ঢাকায় ফেরার আগে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার সার্কিট হাউসে এক বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের জন্য বুথ বাড়ানোরও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত থেকে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ১০টি বুথে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন করা হয়। আজ বুধবার থেকে আরো ১০টি বুথ খুলে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কক্সবাজারের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বুথ আরো বাড়িয়ে দ্রুত নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করার জন্য। আমরা ১০টি বুথ দিয়ে শুরু করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর আরো বাড়ানো হচ্ছে।
৩০টি বুথ খুলে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। ’
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, স্বরাষ্ট্রসচিব (জননিরাপত্তা বিভাগ) মোস্তফা কামাল উদ্দীন, আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী বিকেল পৌনে ৩টা থেকে সোয়া ৪টা পর্যন্ত সেখানে বৈঠক করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। সভায় থাকা এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, সার্কিট হাউসে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন রোহিঙ্গাদের কেন্দ্র করে কোনোভাবেই যেন জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। সে জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে সমন্বয় করে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি।
বৈঠকে একপর্যায়ে এক কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের আইডি কার্ড কেমন হবে তা দেখান প্রধানমন্ত্রীকে। তাতে দেখা যায়, সাদা কাগজে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের পরিচয় লিখে প্রিন্ট দিয়ে সেটি লেমিনেটিং করে দেওয়া হবে। দেখে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন পরিচয়পত্রটিতে রঙিন কাগজ দেওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন করে এটি তৈরি করতে হবে যাতে রং দেখলেই বোঝা যাবে কার্ডটি রোহিঙ্গাদের।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ কখনো ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না। যেসব রোহিঙ্গা এ দেশে এসেছে তারা যেন রিলিফ, স্বাস্থ্যসেবা, পানিসহ প্রয়োজনীয় সেবা পায় সেদিকে নজর রাখারও নির্দেশ দেন তিনি। একপর্যায়ে বৈঠকে উপস্থিত থাকা সবার উদ্দেশে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কেন্দ্র করে যেন কোনোভাবেই জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে জন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। জঙ্গিবাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের কেন্দ্র করে যাতে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে তৎপর থাকারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
পাঠকের মতামত