মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা-পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকায় আতঙ্কিত রোহিঙ্গাদের পালিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় আসা অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার এ দুই উপজেলার দুটি শিবিরে প্রায় ১ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা এসেছে বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র বলেছে।
দুপুরে উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত শিবিরে আশ্রয় নেন রাখাইন রাজ্যের নাকপুরা গ্রামের বৃদ্ধ নুরুল আজিম। সঙ্গে আছেন স্ত্রী, তিন মেয়ে ও ছয় নাতি।
নুরুল আজিম বলেন, গত সোমবার রাতে সেনা ও পুলিশ তাঁদের গ্রামে ঢুকে গুলিবর্ষণ করে। এতে তাঁর দুই ছেলে নিহত হয়। এরপর প্রাণ বাঁচাতে তিনি সবাইকে নিয়ে উখিয়ায় পালিয়ে আসেন। তিনি বলেন, রাখাইনে অতিরিক্ত সেনা ও পুলিশ আনা হচ্ছে।
নাফ নদী অতিক্রম করে গতকাল ভোররাতে টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা বস্তিতে আশ্রয় নেন রাখাইনের মাংগালা ও বুচিদং এলাকার ৩৮ জন নারী, পুরুষ ও শিশু। তাঁদের কয়েকজন হলেন সনজিদা খাতুন, মাবিয়া খাতুন, শবমেরাজ, ফয়েজ উল্লাহ, হাবিব উল্লাহ, সাদ্দাম হোসেন।
টেকনাফ ও উখিয়ার সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা বলেন, তিন দিন ধরে নাফ নদীর ওপারে রাখাইন রাজ্যের নাইছাপ্রু, গজরবিল, কাওয়ারবিল, জামবনিয়া, রাইম্যাবিল, শিলখালী, খেয়ারিপ্রাং, নাকপুরাসহ বিভিন্ন গ্রামে দিন ও রাতে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এতে নাফ নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া বাংলাদেশি জেলেরা আতঙ্কিত থাকছেন।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে লেদা রোহিঙ্গা বস্তির ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন বলেন, রাখাইন রাজ্যের ওয়াবেগ সেনা ব্যাটালিয়নে ও বুচিডং সেনা ব্যাটালিয়নে নতুনভাবে সেনা আনা হয়েছে। এ ছাড়া আটটি বিজিপির ছাউনিতে আগের সদস্যদের সঙ্গে অতিরিক্ত সদস্য যোগ দিয়েছে।
রাখাইন রাজ্যে সেনা ও পুলিশের সদস্য বাড়ানো প্রসঙ্গে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আল জাহিদ বলেন, ‘বিষয়টি আমরাও শুনেছি। এ ব্যাপারে আরও অনুসন্ধান চলছে। সীমান্তে নজরদারি আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।’
গত ৯ অক্টোবর রাখাইন রাজ্যে তিনটি সীমান্ত ছাউনিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ৯ পুলিশসহ ১৮ ব্যক্তি নিহত হন। এরপর মিয়ানমারের সেনা, পুলিশ রাজ্যটিতে রোহিঙ্গাদের দমন-পীড়ন শুরু করে। নিহত হয়েছে শতাধিক রোহিঙ্গা। ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
বিভিন্ন সূত্র বলেছে, গতকাল প্রায় ৭০০ জন রোহিঙ্গা টেকনাফের লেদা এবং প্রায় ১ হাজার জন উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে এসেছে। এ ছাড়া আরও ৩০০ রোহিঙ্গা কক্সবাজার শহরের দিকে চলে গেছে।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, শিবিরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা তাঁকে জানিয়েছেন, টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে সব মিলে নতুন করে ঢুকেছে ৩৫ হাজারের মতো রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এর বাইরে টেকনাফ ও উখিয়ার চারটি শিবিরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে আরও পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা।