উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩/১১/২০২২ ৯:০২ পিএম

ইন্ডিয়ান ওশেন রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওরা) মন্ত্রী সম্মেলনে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে তার ঢাকা সফরের আগ্রহের বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে দেশটি। সবকিছু ঠিক থাকলে ২৪ নভেম্বর আইওরা মন্ত্রী সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন তিনি। একইসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয় নিয়েও আলোচনা হচ্ছে দুইপক্ষের মধ্যে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

ল্যাভরভের এটি হবে প্রথম ঢাকা সফর। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের পক্ষে ভেটো দিয়েছিল রাশিয়া। এছাড়া অন্য অনেক কারণে রাশিয়া বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এরমধ্যে রয়েছে—নিউক্লিয়ার পাওয়ারপ্ল্যান্ট সহযোগিতা, গম ও সারসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। অপরদিকে এই সফরে বাংলাদেশ তার চাওয়া-পাওয়াগুলো রাশিয়ার সঙ্গে আরও দৃঢ়ভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হবে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের তাৎপর্য নিয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ। এটি কোনও গোপন বিষয় নয় যে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাশিয়া কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। এর ফলে যতটুকু দৃশ্যমান থাকা সম্ভব, রাশিয়া ততটুকু করতে চাইবে, সেটাই স্বাভাবিক।’

এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘে উত্থাপিত চারটি রেজুলেশনের মধ্যে দুটিতে বাংলাদেশ সমর্থন দিয়েছে এবং দুটিতে ভোটদানে বিরত ছিল। অবশ্যই এ বিষয়ে বাংলাদেশের আরও সক্রিয় সমর্থন চাইবে রাশিয়া বলে তিনি জানান।

শহীদুল হক বলেন, ‘ইউরোপের যুদ্ধে জড়িত বিভিন্ন পক্ষ অন্যান্য দেশের মতো রাশিয়াও বাংলাদেশের সমর্থন চেয়েছে এবং এটিই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সবসময়ের মতো একটি ভারসাম্যমূলক অবস্থান বজায় রাখার চেষ্টা করেছে।’

বাংলাদেশের প্রত্যাশা

২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে প্রায় ৮ লাখের মতো রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার অবস্থান বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। অনেক দেশ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক সমর্থন দিলেও রাশিয়া নিজের স্বার্থ বিবেচনা করে এ বিষয়ে মিয়ানমারকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক। বারবার এ বিষয়ে বলার পরেও অবস্থান পরিবর্তন করেনি রাশিয়া।

এ বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘মিয়ানমারের কাছে একদিকে ফাইটার প্লেনসহ আধুনিক অস্ত্র বিক্রি করছে রাশিয়া। অপরদিকে নিরাপত্তা পরিষদে এ বিষয়ে আলোচনায় একটি বড় বাধা দেশটি। ফলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কোনও ভূমিকা রাখার পরিবর্তে রাশিয়া মিয়ানমারকে সমর্থন করছে। (ল্যাভরভের) এই সফরে বিষয়টি বাংলাদেশের জোরালোভাবে তোলা দরকার।’

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ একটি প্রকল্প এবং এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যা যা করা দরকার, সেটি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তিনি।

সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এছাড়া জ্বালানি সহযোগিতার ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাবনাগুলোও ভালো খতিয়ে দেখা দরকার।’

চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপর রাশিয়ার প্রভাব আছে এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার জন্য মিয়ানমারকে উৎসাহিত করতে পারে রাশিয়া এবং এজন্য চাপ প্রয়োগের অনুরোধ করতে পারে বাংলাদেশ। এর ফলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার ভাবমূর্তির উন্নতি হতে পারে।’

পাঠকের মতামত

মোখায় মিয়ানমারে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ

ঘূর্ণিঝড় মোখায় মিয়ানমারে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ১২০ টন জরুরি মানবিক সহায়তা পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। প্রধানমন্ত্রী ...

রোহিঙ্গারা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য বড় সমস্যা -জাপানি রাষ্ট্রদূত

শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা অঞ্চলের শান্তি-স্থিতিশীলতার জন্য রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান প্রয়োজন বলে মনে করেন ঢাকায় ...

লোডশেডিং আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা

দেশজুড়ে আবারো বেড়েছে লোডশেডিং। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্যানুযায়ী, চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ...

এলপিজির দাম ১ হাজার ৭৪ টাকা

ভোক্তাপর্যায়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলপিজি) দাম কামানো হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ...