ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৮/১১/২০২৫ ৮:৪৪ এএম

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ক্রমাবনতি সত্ত্বেও লন্ডন থেকে দেশে ফিরতে পারছেন না তার বড় ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

পরিবার ও দলীয় শীর্ষ সূত্র বলছে, ব্যক্তিগত ইচ্ছা, মানসিক চাপ এবং আবেগগত টানাপোড়েনের মধ্যে থেকেও সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সমীকরণ তাঁর দেশে ফেরার প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন। নিউমোনিয়া ও একাধিক অঙ্গের জটিল পরিস্থিতির কারণে তাঁর চিকিৎসা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। লন্ডনে অবস্থান করে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান সার্বক্ষণিকভাবে চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তবুও বাস্তবতা হচ্ছে সকল চেষ্টা সত্ত্বেও তিনি মায়ের পাশে আসতে পারছেন না।

দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথ রুদ্ধ করতে একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক সক্রিয়তা এখনো অব্যাহত। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক তাঁর বিরুদ্ধে কৌশলগত বাধা তৈরি করে যাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, বেনজির ভুট্টো থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পর্যন্ত যেভাবে নেতারা হত্যার শিকার হয়েছেন তাতে তারেক রহমানের নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

বিএনপির এক স্থায়ী কমিটির সদস্য মন্তব্য করেন, “তারেক রহমানের নিরাপত্তা শুধু দেশের বিষয় নয়, আন্তর্জাতিক হিসাব-নিকাশের বিষয়ও যুক্ত আছে। একটিমাত্র ভুল সিদ্ধান্ত বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।”

এই ঝুঁকির কারণে তার ফেরার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনা, অস্ত্র লাইসেন্সের আবেদন এবং গুলশানের বাসভবনে বিশেষ নিরাপত্তা বলয় তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে এখনো এসব প্রস্তুতি সম্পূর্ণ নয়।

এ ছাড়া তারেক রহমান বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন (আইএলআর) স্ট্যাটাসে রয়েছেন। দেশে ফিরতে হলে ট্রাভেল পাসসহ একাধিক প্রশাসনিক ধাপ অতিক্রম করতে হবে। তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলোর বিচারিক পরিস্থিতি কীভাবে পরিচালিত হবে এ নিয়েও রয়েছে বড় অনিশ্চয়তা।

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ড. পিনাকী ভট্টাচার্যের দাবি, অতীতে বহিষ্কার এড়াতে তারেক রহমান ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন বলেও ধারণা রয়েছে, যার আইনি জটিলতাও ফেরার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।

দলীয় অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও একটি বড় বিষয়। পিনাকীর বিশ্লেষণে বলা হয়—দেশে ফিরলে দলের ভেতরকার দ্বন্দ্ব, মনোনয়নসংক্রান্ত টানাপোড়েন, চাঁদাবাজি ও সাংগঠনিক দুর্বলতা মোকাবিলা করা তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। নির্বাচনপূর্ব মুহূর্তে তাঁর উপস্থিতি দলীয় বিদ্বেষ আড়াল করলেও সংগঠন পরিচালনায় ব্যবস্থাপনাগত ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

সম্প্রতি তারেক রহমানের বক্তব্য নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, “রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গণভোট এখন মূল বিষয় নয়; কৃষকের ক্ষতি পোষানো বা আলুর দাম নিয়ন্ত্রণই জরুরি।”

ড. পিনাকী এটিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সংকট বলে মন্তব্য করেন। তাঁর মতে, “৫ আগস্টের বিপ্লব ছিল মর্যাদা, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার প্রশ্নে বাজারমূল্যের কারণে নয়। জনগণকে মাত্র ভোক্তা হিসেবে দেখলে তা হবে অরাজনৈতিককরণ।”

এই তাত্ত্বিক বিতর্কও তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে রাজনৈতিক সময় নির্ধারণে প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।

সবশেষে সবচেয়ে মানবিক সংকটটি হলো মায়ের জীবনসংকট। পরিবার সূত্র জানায়, তারেক রহমান প্রায় প্রতিদিনই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন, চিকিৎসকদের সঙ্গে রাতভর কথা বলছেন। তাঁর মনের ইচ্ছে একটাই মায়ের কাছে ফিরতে চান। কিন্তু নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক চাপ ও আইনি রাজনৈতিক বাস্তবতা তাঁকে থামিয়ে রেখেছে।

পরিবারের এক সদস্য বলেন, “উনি ফিরতে চান। কিন্তু পথটাই বন্ধ হয়ে আছে। নিরাপত্তা না পেলে তাকে দেশে আনা সম্ভব নয়।”

দলীয় সূত্র বলছে, সব বাধা অতিক্রম করে আগামী মাসে তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বুলেটপ্রুফ গাড়ির অনুমোদন, বাসার সংস্কার, নিরাপত্তা বলয় সবকিছু দ্রুতগতিতে চলছে। তবে পিনাকীর মত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাধা, নিরাপত্তা ও আইনি জটিলতা সমাধান না হলে তাঁর ফেরা আরও দীর্ঘসময় পিছিয়ে যেতে পারে।

এদিকে খালেদা জিয়ার মারাত্মক শারীরিক সংকটের মধ্যেই দেশজুড়ে তারেক রহমানের ফেরার অপেক্ষায় নেতাকর্মীরা উদ্বিগ্ন সময় পার করছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ফিরতে পারবেন কি না এই প্রশ্নের উত্তর এখনো সময়ই বহন করে নিয়ে যাচ্ছে।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী অবকাঠামো তৈরির নীতিগত অনুমোদন

বিশ্বব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করা হবে। আন্তর্জাতিক ...

‘দেশি মুরগি খেতে না পারা’ আলোচিত শিক্ষিকার ছয়তলা নিজস্ব ভবন রয়েছে

ঢাকায় শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি-দাওয়ার আন্দোলনে অংশ নিয়ে আলোচনায় আসেন শিক্ষিকা শাহিনুর আক্তার শ্যামলী। এক গণমাধ্যমে তিনি ...