ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৬/০৩/২০২৫ ১০:৩৯ এএম

প্রস্তুতি নিলেও ওমরাহ পালন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশির। সৌদি আরব সরকার ওমরাহ ভিসা কমিয়ে দেওয়ায় এই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

উড়োজাহাজের টিকিট, সৌদি আরবে বাড়ি বা হোটেল বুকিং দিয়েও নির্ধারিত সময়ে ভিসা না পাওয়ায় ওমরাহ পালনে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের পাশাপাশি ওমরাহ এজেন্সিগুলোও আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছে। এয়ারলাইনসগুলোও সমস্যায় পড়ছে। হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ঢাকায় সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করলেও এখনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।

Pause

Mute
Remaining Time -9:56

Close PlayerUnibots.com
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সূত্র বলছে, সম্প্রতি সৌদি আরব ওমরাহ ভিসায় কোটা ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এর প্রভাব বাংলাদেশি ওমরাহ যাত্রীদের ওপরও পড়েছে। আগে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ ওমরাহ ভিসার আবেদন অনুমোদিত হলেও রমজান মাসের শুরুতে এই হার নামে ৮-১০ শতাংশে। রমজানের শেষ দিকে তা আরও কমে ২-৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

হাব বলছে, ওমরাহ পালনে ইচ্ছুক ৩৫ থেকে ৪০ হাজার বাংলাদেশি ভিসার জন্য উড়োজাহাজের টিকিট ও হোটেল বুকিং করেছেন। তাঁদের অনেকে পরিবারসহ ওমরাহ পালনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা নির্ধারিত সময়ে ভিসা পাননি। ভিসা না পাওয়ার বিষয়টি জেনে আরও অন্তত ৫৫ হাজার ব্যক্তি ওমরাহ যাত্রার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। অবশ্য তাঁরা উড়োজাহাজের টিকিট বুকিং দেননি।

ভিসা না মেলায় ওমরাহপ্রত্যাশীদের মতো ওমরাহ এজেন্সিগুলোও বড় আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছে। কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওমরাহ যাত্রীর জন্য আগাম টিকিট ও হোটেল বুকিং দেয় এজেন্সিগুলো। ক্ষতির কারণে কিছু এজেন্সি এই পরিস্থিতিতে কার্যক্রম স্থগিত রাখার চিন্তা করছে। এয়ারলাইনসগুলোরও একই অবস্থা। কারণ, যাত্রীরা ভিসা জটিলতার কারণে টিকিট বাতিল করছেন বা ফ্লাইট পুনর্নির্ধারণ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

হাবের মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, সৌদি সরকারের আকস্মিক সিদ্ধান্তে ওমরাহ যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। ভিসা জটিলতায় শত শত এজেন্সি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনেক এজেন্সি আগে থেকে টিকিট কেটেছে, সৌদি আরবে হোটেল ও বাসা ভাড়া করেছে। কিন্তু ভিসা না পাওয়ায় সব বুকিং বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছে, যা বিপুল আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংকট সমাধানে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাব সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়েছে। তবে এখনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, সৌদি সরকার ওমরাহ ভিসার ক্ষেত্রে সম্প্রতি কোটার ব্যবস্থা চালু করেছে। এতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিসা বরাদ্দ হচ্ছে। তবে এ সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি।

বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা ও ধর্মীয় স্থানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অতিরিক্ত জনসমাগম ও ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ এড়াতে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়।

কয়েক ওমরাহ যাত্রী বলেন, তাঁরা মাসখানেক আগে আবেদন করেও ভিসা পাচ্ছেন না। এতে আর্থিক ও মানসিক চাপে আছেন।

বেশ কয়েকটি ওমরাহ এজেন্সির অভিযোগ, ওমরাহ ভিসার কোটা ব্যবস্থায় বাংলাদেশিদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে খুব কম। ইতিমধ্যে প্যাকেজ বুকিং নেওয়া থাকলেও ভিসা না পাওয়ায় ওমরাহ যাত্রীদের যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে তারা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

হাব ওমরাহ ভিসার অনুমোদন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে।

সূত্র বলেছে, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ওমরাহ ভিসার বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। ঢাকার সৌদি দূতাবাসকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, সৌদি আরব বাংলাদেশিদের জন্য ওমরাহ ভিসা পুরোপুরি বন্ধ করেনি। ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের হজ ও ওমরাহ এজেন্সিগুলোকে সৌদি এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে ভিসাপ্রক্রিয়া সহজ হয়।

এদিকে ওমরাহ ভিসার খরচ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সাধারণ সময়ে একটি ওমরাহ ভিসার খরচ ছিল ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমান সংকটের কারণে একেকটি ভিসার জন্য ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ছে, তা-ও পাওয়া নিশ্চিত নয়। প্রতি ১০ জন আবেদনকারীর মধ্যে বড়জোর একজন ভিসা পাচ্ছেন।

ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন ১৮ মার্চ মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান, সৌদি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ওমরাহ ভিসা বন্ধ না করার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত বিষয়টি ধর্মসচিবকে নিশ্চিত করেছেন। টিকিট সংগ্রহকারী কোনো ওমরাহ যাত্রী ভিসা না পাওয়ার কারণে সৌদি আরব যেতে না পারলে তাঁকে বিধি মোতাবেক টাকা ফেরত দিচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। সাউদিয়াসহ অন্যান্য এয়ারলাইনসকেও একইভাবে ভিসা জটিলতায় ওমরাহ পালনে যেতে না পারা যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

ধর্ম উপদেষ্টা জানান, বিমানের টিকিট সংগ্রহকারী যাত্রীরা যাতে রমজান মাসেই ওমরাহ পালন করতে যেতে পারেন, সে লক্ষ্যে জেদ্দায় বাংলাদেশ হজ কাউন্সিলর সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় চার শতাধিক সৌদি ওমরাহ কোম্পানিকে বিভিন্ন দেশের এজেন্সির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ওমরাহ কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে। এই কোম্পানিগুলোর অনুকূলে প্রতিবছর ওমরাহ যাত্রীর কোটা নির্ধারিত থাকে। এই নির্ধারিত কোটা শেষ হয়ে গেলে ওই কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসা প্রদান কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। বাংলাদেশে অনুমোদিত ওমরাহ এজেন্সির পাশাপাশি সৌদি আরবের নুসুক অ্যাপের আইডি ও পাসওয়ার্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান ওমরাহ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। আজকের পত্রিকা

পাঠকের মতামত

আরো ১২০ টন ত্রাণ নিয়ে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ

মায়ানমারের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে মানবিক সহায়তা সামগ্রী নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ‘বানৌজা ...

রোহিঙ্গা সংকট: বাংলাদেশকে অব্যাহত সহায়তার আশ্বাস ইউএনএইচসিআরের

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশকে বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকটে অব্যাহত সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। ...

ট্রাম্পের দুই কর্মকর্তার সফর,শুল্ক, সহায়তা ও রোহিঙ্গা ইস্যু তুলবে বাংলাদেশ

ট্রাম্প প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার আসন্ন সফর নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের ...

শিগগিরই সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গার নাম যাচাই বাছাই শুরু করবে মিয়ানমার: ড. খলিলুর রহমান

আগামী দুই বছরে চেয়ারম্যান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিমসটেককে আরও কার্যকর ও গতিশীল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ...