হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া ::
মিয়ানমারের মিয়াজামপ্রু মাদ্রাসার মুহাদ্দেস মাওলানা সাবের হোছেন (৭৫) তার ছেলে ও পুত্র বধুকে হারিয়েছে। আরাকান সেনাবাহিনীর নিমর্ম নির্যাতনের শিকার মৌলভী আরিফুল উল্লাহ(৩৫) জানান, তার বড় ভাই মৌলভী একরামকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে বর্মী সেনারা। জাম্বুনিয়ার রাঙাবাড়ি গ্রামের বশির রাফাইল্ল্যার পুত্র দিল মোহাম্মদ (৪৫), এজাহার মিয়ার ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৫০), মোহাম্মদ হাসেমের বাড়ীঘর পুড়িয়ে দেওয়ায় নিঃস্ব হয়ে এপারে পাহাড় ও নাফ নদী পেরিয়ে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছে।
সরেজমিন কুতুপালং বস্তি এলাকা গিয়ে আগত নির্যাতিত মুসলিম রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে এসব নির্যাতনের তথ্য জানা গেছে। রেহেনা (৩৫) তার সম্ভ্রম হারিয়ে চার সন্তানকে কোলে নিয়ে ২ দিন পায়ে হেঁটে লম্বাবিল সীমান্ত দিয়ে নাফ নদী পার হয়ে কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তাকে বর্মী সেনারা বিবস্ত্র করে পালাক্রমে গণধর্ষন করেছে। রহিমা খাতুন (৩০) , দিলদার বেগম (২৫), আমির হোছন (২৪), জোবাইদা (৩৫), মমতাজ বেগম (৪০), ছৈয়দ নুর (৩০), তসলিমা (২০), মুমেননেছা (১৮) ও মরিয়ম খাতুন (২৩), ফাতেমা খাতুন (২৮) সহ ৩০ জনের একটি দল গতকাল শনিবার ভোর রাতে কুতুপালং বস্তিতে এসেছে।
তারা সাহায্য সহযোগীতা না পেয়ে ক্ষুধার জ্বালায় কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের কুতুপালং বস্তি এলাকায় রাস্তার পাশে ভিক্ষুকের মতো রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ দু’পয়সা সাহায্যের আশায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে আছে। এসব রোহিঙ্গা নারী-শিশুরা ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় উখিয়া স্টেশনের অলিতে গলিতে ভিক্ষা করছে। এদের মানবিক বিপর্যয় ঘটছে। যাদের একটু টাকা পয়সা আছে তারা কক্সবাজার-চট্টগ্রাম পাড়ি জমাচ্ছে। অন্যরা এখনো বস্তিতে খোলা আকাশের নীচে প্রচন্ড ঠান্ডায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
কুতুপালং এলাকার নুরুল হক জানান, দোকানে বসে চা নাস্তা করব এমন পরিবেশও এখানে নেই। দোকানে নাস্তা করতে বসলেই আগত ছোট ছোট রোহিঙ্গা শিশুরা পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। এদের নিষ্পাপ শিশুগুলোর মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। নিজে না খেয়ে শিশুদের নাস্তা খাওয়ালাম। অনেকেই নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। কিন্তু প্রকৃত রোহিঙ্গারা সেই সাহায্য পাচ্ছে না। শিক্ষক কমরুদ্দিন মুকুল বলেন, স্কুলে যাওয়ার পথে রাস্তার পাশে রোহিঙ্গা শিশুদের বসে থাকতে দেখা যায়। কোন গাড়ী থামলেই তারা ছুটে আসেন সাহায্যের আশায়।