প্রকাশিত: ০৭/০৭/২০১৭ ৭:৪৭ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:১১ পিএম

মোঃ রেজাউল করিম, ঈদগাঁও::
বৃহত্তর ঈদগাঁওতে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে রাতে বৃষ্টি হওয়ায় আবারো পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে চলছে ত্রাণ তৎপরতা। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতূল বলে অভিযোগ বানভাসী লোকজনের। বিভিন্ন সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিরা ব্যক্তিগত তহবিল থেকে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ তৎপরতা চালালেও সরকারী কোন ত্রাণ বা বরাদ্ধ এখনো পর্যন্ত আসেনি। পাহাড়ী ঢল ও ভারী বর্ষণের পানিতে স্থানীয় যোগাযোগ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যার ক্ষত শুকানো শীঘ্রই সম্ভব না বলে মনে করছেন সচেতন মহল। আবার হাতে গোনা দুয়েক বস্তা শুকনো খাবার বিতরণ করে জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মীরা সেলফিবাজিতে মেতে উঠেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। জালালাবাদে ভারী বর্ষণের ১ম দিন বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে যেতে না যেতেই ঈদগাঁও-ফরাজী পাড়া সড়কের ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে পরপর দুটি ভাঙ্গনে উক্ত সড়ক দিয়ে এখনো যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক, সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, কউক চেয়ারম্যান, সাবেক সাংসদ লুৎফর রহমান কাজল, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জি.এম রহিম উল্লাহ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, জেলা জামায়াত আমির মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমানসহ অনেকেই বন্যা দূর্গত এলাকা পরিদর্শন ও কেউ কেউ নাম মাত্র ত্রাণ বিতরণ করেছেন। ঈদগাঁও চাঁন্দেরঘোনা-মেহেরঘোনার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্œের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন। কালিরছড়া ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় কয়েকশ ঘর পানিবন্দী থাকায় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন রায়হানুল কবির। ঈদগাঁও মাছুয়াখালীতে নব প্রতিষ্ঠিত রতœগর্ভা রিজিয়া আহমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চারদিকে পানি এখনো থৈ থৈ করছে। সংবাদকর্মী মিছবাহ উদ্দীন জানান, ভারী ও টানা বর্ষণে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে ঈদগাঁওর বিভিন্ন গ্রামের সড়ক-উপ সড়ক। ওজান থেকে নেমে আসা ঢলে বিধ্বস্থ হয়েছে ঘরবাড়ি। ভেঙ্গে গেছে কয়েকটি কালভার্ট ও ব্রীজ। চান্দেরঘোনা পূর্ব পাড়ার একমাত্র পারাপারের তক্তার সাঁকোটি বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়ায় হাজারো লোকজন পানিবন্দী রয়েছেন। এলাকাবাসী, সাধারণ লোকজন ও ছাত্রছাত্রীদের চলাচলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অতিবৃষ্টির ফলে কালিরছড়া বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলে জানালেন মোহাম্মদ তৌহিদ। জেলা প্রশাসক দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঈদগাঁও-পোকখালী সড়কের লরাবাক এলাকার ভাঙ্গনসহ বন্যা কবলিত যোগাযোগ অবকাঠামো পুনঃস্থাপনে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন। জনগণ ও যানবাহন চলাচলের সুবিধা সৃষ্টি করতে তিনি জনপ্রতিনিধিদের নজরদারী রাখার পরামর্শ দেন। ফরাজী পাড়ার কামরুল আহসান শোভা অবিলম্বে তার দূর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো, বেড়ীবাঁধ মেরামতসহ ফরাজী পাড়া রাস্তার যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃ প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়েছেন। অনেকে জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের লোক দেখানো সেলফিবাজি না করে বন্যা দূর্গতদের সহযোগিতার আহবান জানিয়েছেন কেউ কেউ। বন্যায় প্লাবিত পালাকাটা ও বটতলী পাড়ার মানুষের মাঝে লুৎফর রহমান কাজলের পক্ষে ত্রাণ বিতরণ করেছেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। বন্যা ও বৃষ্টির পানি ঢুকায় বৃহষ্পতিবারের অর্ধ বার্ষিকের ১ম দিনের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষে সহকারী প্রধান শিক্ষক এম. মোখতার আহমদ। চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ ফেইসবুকে অভিমানী স্ট্যাটাসে বলেন, ঈদগাঁওর ৬ ইউনিয়নের বন্যা কবলিত মানুষের কি কোন নাগরিক অধিকার নেই? থাকলে বঙ্গবন্ধুর নৌকা ও শেখ হাসিনার দয়ায় যারা আজ এ পর্যন্ত তারা আজ কোথায়? কোথায় তাদের মানবতা? নেত্রী কি তাহলে ভুল করেছেন? নাকি আপনারা নেত্রীর সাথে মুনাফেকী করেছেন? তিনি আরো জানান, সেখানকার কার্পেটিং সড়কটি নতুন করে ভেঙ্গে যাওয়ায় ৫টি ওয়ার্ডের অনেক বাড়িতে চুলায় আগুন জ¦ালানো সম্ভব হয়নি। ইসলামাবাদের গজালিয়ায় পানিবন্দী মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন স্থানীয় মেম্বার ও এক সমাজসেবক। বিএনপির পক্ষ থেকেও সেখানে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। শিবির সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জি.এম রহিম উল্লাহ সদর উপজেলার বন্যা প্লাবিত এলাকা ও জালালাবাদের ভাঙ্গন ও বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন। কালিরছড়া বৃষ্টির পানিতে টালমাটাল বলে জানালেন মানবাধিকার কর্মী মো. এহেছান। বাজারের ডা. জানে আলম জানান, ঈদগাঁও বাজারের শাপলা চত্বর বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছিল। সংবাদকর্মী আবদুল আলিম নোবেল জানান, কক্সবাজার সদর উপজেলা গেইটসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির একই চিত্র। পরিকল্পিত নগরায়নের পদক্ষেপ না নেয়ায় এ অবস্থা বলে জানান তিনি। ইসলামাবাদের নুুরুল ইসলাম জানান, ঢলে ঈদগাঁও নদীর ঝুলন্ত ব্রীজের অবস্থা টলমলে। চারদিকে পানি আর পানি বলে জানালেন ইব্রাহিম মনছুর। গজালিয়ার নাজিম উদ্দীন দুঃখ করে বলেন, বাসস্টেশনের লাল ব্রীজের পিলার ঈদগাঁওবাসীর জন্য অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে। নতুন পুরাতন ২টি ব্রীজের পিলার থাকায় বন্যার সময় পানির ¯্রােতে বাঁধা পড়ে। এর আগে বাঁশবাগান চরের কারণে কিছুটা বাঁধা পড়ে ¯্রােতে। যার কারণে খোদাইবাড়ী, ওয়াহেদর পাড়া, ইউছুপেরখীল, পাঁহাশিয়াখালী, ভোমরিয়াঘোনা, কানিয়াছড়া, পালাকাটা, বৃহত্তর মাইজ পাড়া, নতুন মহাল, নাইক্ষ্যংদিয়াসহ অনেক এলাকা প্লাবিত ও মানুষের চরম ক্ষতি হচ্ছে। কালিরছড়ার ছাত্রনেতা ফরিদুল আলম জানান, ঈদগাঁও ইউনিয়নের ৫, ৬ নং ওয়ার্ড বন্যার পানিতে, ভুতিয়ার পাড়া, চরপাড়া, উত্তর পাড়ার একাংশ প্লাবিত হয়েছে। শওকত আলীর মতে, বন্যা কবলিত লোকজনের যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। তাদের দিন যাচ্ছে অনাহারে, অর্ধাহারে। তিনি বানভাসী মানুষের সহায়তায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। এদিকে সর্বশেষ বৃহষ্পতিবার ঈদগাঁওর বন্যা কবলিত এলাকায় মানুষের মাঝে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ ও শুকনো খাবার বিতরণ করেন বর্তমান সাংসদ। তিনি এ কাজে নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ খবর নিলেও ঈদগাঁও ৪নং ওয়ার্ডের রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কোন খোঁজ খবর নেননি বলে কথিত নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকে। তারা নিজেরাই স্ব উদ্যোগে গাছের সাঁকো তৈরি করেছেন। তবে এ এলাকায় উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। ঈদগাঁও সাংগঠনিক উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণে আসেন জেলা আমির, রামু উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. হাসান, ঈদগাঁও আমির ছলিম উল্লাহ জিহাদী, সেক্রেটারী মাওলানা নুরুল আজিম, সেক্রেটারী এমদাদ, কর্ম পরিষদ সদস্য ইউছুপ, শহর শিবির সেক্রেটারী তৈয়ব উদ্দীন, ঈদগাঁও থানা সভাপতি জুবায়ের, আতা উল্লাহ, সাবেক ছাত্রনেতা সরওয়ার প্রমুখ।

পাঠকের মতামত

রামু সহিংসতার ১২ বছর আজ

মামলায় আসামী করা হয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের, প্রত্যাহারের দাবি রামু সহিংসতার ১২ বছর আজ। ঘটনার পর ...

ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে মিয়ানমারের ১২০ সেনা ও সীমান্তরক্ষী সদস্যকে

দুই দেশের দূতাবাসের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নাগরিকদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত ...