ঢাকা: বিভিন্ন কারণে জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার নেতাকর্মী বিদেশ পাড়ি জমিয়েছেন। কেউ নিজ উদ্যোগে গিয়েছেন আবার নিরাপত্তাহীনতায়
অনেক নেতাকে বিদেশ যেতে দলের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া জুনিয়র নেতাদের মধ্যে বিদেশে স্কলারশিপসহ
বিভিন্ন ভাবে পড়তে যাওয়ার পরিমাণও বেড়েছে অস্বাভাবিকহারে। জামায়াত ও শিবিরের থানা, মহানগর ও কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে
কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। ছাত্রশিবিরের খিলক্ষেত থানার একটি ওয়ার্ডের সভাপতি ছিলেন তিনি। কয়েক বছর আগে গভীর রাতে পোস্টার
সাঁটানোর সময় ছাত্রলীগের থানা সভাপতি তাকে হাতেনাতে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পরে অবশ্য ছাড়া পনা তিনি। ছাড়া পাওয়ার মাসের
মধ্যেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে কানাডায় হোটেল ম্যানেজমেন্টে অনার্স পড়তে পাড়ি জমান। ঢাকা মহানগর উত্তরের
আরেক নেতা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ালেখা শেষে চাকরি করছিলেন। একবার জেল খেটে কয়েকটি মামলা মাথায় নিয়েই পাড়ি জমিয়েছেন
রাশিয়ায়। একই মহানগরীর কয়েকজন নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র স্কলারশিপ নিয়ে তুরস্ক, মালয়েশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে চলে গেছেন
২/৩ বছর আগে। ঢাকা মহানগর পূর্বের শিবির নেতা ছিলেন মো. মুস্তাকিম। ২০১৩-১৪ সালে একবার জেলে গিয়েছিলেন তিনি। পরে পারিবারিক
সিদ্ধান্তে চলে গেছেন মালয়েশিয়ায়। একই রকম এই মহানগরীর ওয়ার্ড, থানাসহ মহানগর পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাও মালয়েশিয়া, তুরস্ক,
কানাডাসহ বেশ কয়েকটি দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ঢাকা কলেজ শাখার একজন শিবির নেতা বলেন, ঢাকার এমন কোনো সাংগঠনিক থানা পাওয়া
যাবে না যেখানে অন্তত ২/৩ জন নেতা গত ৪/৫ বছরের মধ্যে বিদেশে পাড়ি জমাননি। যারা একবার বিদেশ যাচ্ছেন মামলা, গ্রেপ্তারসহ ও
ক্রসফায়ারের ভয়ে এসব নেতাকর্মীরা দেশে ফিরছেন না। তবে আগামীতে কখনও ক্ষমতা পরিবর্তন হলে হয়তো তারা সবাই দেশে ফিরবেন। আবার
অনেকে হয়তো নির্বাচনের আগে পরিবেশ ভালো হলেও ফিরতে পারেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিবির নেতা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের
অনেক নেতা অনেকগুলো মামলা নিয়ে বিদেশ চলে গেছেন। কেউ কেউ আগামীতে মামলা খাওয়ার আশঙ্কায় স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশ চলে গেছেন।
শিবিরের সাবেক একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, একটি দলের নেতাকর্মীরা কে বিদেশ যাচ্ছেন কে আসছেন এতোকিছু খবর রাখা কোনো সংগঠনের
পক্ষে সম্ভব হয় না। তারপরও সংগঠনের পক্ষ থেকে কাউকে বিদেশ যেতে বলা হয় না। কেন্দ্রীয় নেতাদের কারো নিরাপত্তা নিয়ে খুব বেশি সমস্যা
মনে হলে সেটা আলাদা কথা। কিন্তু শিবিরের নেতাকর্মীরা অনেকে নিজের চেষ্টায় বিদেশে গিয়েছেন। সারা দেশ থেকে যেসব নেতা বিদেশ গিয়েছেন
তারা সংগঠনের কাছে অনুমতি নিয়ে যাননি। তাহলে কিভাবে হিসাব করবো কতগুলো নেতাকর্মী বিদেশ গিয়েছেন।
শিবিরের সাবেক এক কেন্দ্রীয় নেতা ও বর্তমান সমন্বয়ক বলেন, সংগঠনের সিদ্ধান্তে কাউকে দেশের বাইরে পাঠানো হয়নি। তাই আগামী নির্বাচনকে
সামনে রেখে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও সংগঠনের সরাসরি কোনো হস্তক্ষেপ বা পরিকল্পনা নেই। গত কয়েক দিন আগে দলীয় ফোরামে
বিদেশ যাওয়া নেতাকর্মীদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে তিনি বলেন, সরকারের রোষানলে পড়ে রাজনৈতিক
ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে অনেক ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন এটা ঠিক। এখন কেউ যদি তার নিজ দায়িত্বে দেশে
আসে বা দলের পক্ষে কাজ করে সে ক্ষেত্রে সংগঠন স্বাগত জানাবে। কতো লোক দেশের বাইরে অবস্থান করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
সংগঠনের সিদ্ধান্তে যেহেতু তারা যাননি তাই তার সংখ্যা বলা মুশকিল। এটা শুধু জামায়াত বা শিবির থেকে নয় বিএনপি বা অন্যান্য দল থেকেও
গেছে। তিনি আরো বলেন, যারা এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন তাদের পরিবার-পরিজন ও ব্যবসা-বাণিজ্য দেশেই রয়েছে। তারা আজ হোক
কাল হোক দেশে আসবেন। এখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কোনো প্রয়োজন নেই।
সুত্র: প্রাইমনিউজ
পাঠকের মতামত