প্রেমের টানে স্বামী-সংসার ছেড়েছিলেন জাহানারা (৩৫)। জাত-পাত ভুলে বিয়েও করেছিলেন প্রেমিক চন্দনকে। চন্দন তার নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন সোহান। চন্দন ওরফে সোহানকে বিয়ে করে জাহানারা তার আগের পক্ষের তিন ছেলেমেয়েকেও নিয়ে আসেন নতুন সংসারে। নতুন স্বামী তাকে কথা দিয়েছিলো পিতৃস্নেহেই তাদের দেখাশোনা করবে। কিন্তু বিয়ের পরই চন্দনের আসল রূপ ধরা পড়ে জাহানারার কাছে। তিনি বুঝতে পারেন বিয়ের আগে দেয়া প্রতিশ্রুতি শুধুই মন ভোলানোর জন্য। চন্দন ওরফে সোহান ছিল নেশাখোর। এ নিয়ে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো তাদের। জাহানারাকে প্রায়ই মারধর করতো। নিজে কোনো কাজ করতো না। নেশার টাকাও নিতো জাহানারার কাছ থেকেই। এই নেশাকে কেন্দ্র করেই জাহানারার শরীরে এসিড ঢেলে দিয়েছে স্বামী সোহান। স্ত্রীকে দগ্ধ করে পালিয়ে যাওয়ার সময় মায়ের ওপর অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে জাহাঙ্গীর ওই এসিড ছুড়ে মারে সোহানের ওপর। সোহানও পাল্টা এসিড ছোড়ে ছেলে জাহাঙ্গীরের ওপর। এতে তিনজনই এসিড দগ্ধ হয়েছেন। গত শনিবার কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এই ঘটনা ঘটে। ওইদিন রাতেই ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তাদের। বর্তমানে তারা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বার্ন ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, এসিডে জাহানারার শরীরের ৪০ শতাংশ, স্বামী সোহানের ১২ শতাংশ এবং ছেলে জাহাঙ্গীরের ৬ শতাংশ ঝলসে গেছে। এরমধ্যে জাহানারার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি বর্তমানে সন্তান সম্ভবা।
সূত্র জানায়, গত ৫-৬ বছর আগে জাহানারা ভৈরব থানায় রান্নার কাজ করতেন। ওই সময় তার স্বামী (সাবেক) বাচ্চু মিয়া কাজ করতেন একটি খাবার হোটেলে। এক ছেলে ও দুই মেয়ের সংসার ছিল তাদের। এই সময় চন্দন নামে এক কাপড়ের দোকানের কর্মচারী চন্দনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে জাহানারার। চন্দন ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। কিন্তু জাহানারাকে বিয়ে করার জন্য তিনি নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন সোহান। চন্দনের সঙ্গে বিয়ের পর জাহানারার সঙ্গে আগের স্বামী বাচ্চু মিয়ার ডিভোর্স হয়ে যায়। তিন সন্তানকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন জাহানারা। কিন্তু বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন চন্দন ওরফে সোহান নেশাগ্রস্ত। তিনি কাপড়ের দোকানের কাজও ছেড়ে দেন। স্ত্রীকে সন্দেহের চোখে দেখতে থাকেন। ছেলেমেয়ের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন। জাহানারা থানার কাজ ছেড়ে দিয়ে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। তিনি টঙ্গী থেকে কাপড় এনে ভৈরবে নিয়ে বিক্রি করতেন। এই করে যে আয়-রোজগার হয় তার সবই স্বামী সোহানের হাতে তুলে দেন। স্বামী ওই টাকায় ইয়াবা সেবন করে। টাকা না দিলে জাহানারার ওপর চলে শারীরিক নির্যাতন। জাহানারার আগের পক্ষের ছেলে জাহাঙ্গীর এখন পিকআপ চালায়। গত শনিবার সোহান বাড়ি ফিরে ঘরের মধ্যেই ইয়াবা সেবন করছিলেন। জাহানারা স্বামীকে বলেন, বাসায় ছেলেমেয়েরা থাকে। বাইরে গিয়ে নেশা করে আসতে। এ নিয়ে শুরু হয় কলহ। এর এক পর্যায়ে বিদ্যুৎ চলে গেলে সোহান একটি মগে রাখা এসিড স্ত্রী জাহানারার মাথার ওপর ঢেলে দেয়। মায়ের চিৎকার শুনে ছুটে আসে ছেলে জাহাঙ্গীর। এ সময় সোহান তার মায়ের ওপর এসিড ঢেলে পালিয়ে যাচ্ছিলো। এরপর ওই মগে রাখা বাকি এসিড সোহানের ওপর ছুড়ে মারে সে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীরও এসিড দগ্ধ হয়। পরে তাদেরকে শনিবার গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এসিডে জাহানারার মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্নস্থান দগ্ধ হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জাহানারার ফুফাতো বোন শারমিন জানান, আমি সত্য ঘটনা বলায় আমার বিরুদ্ধে বদনাম করছে সোহান। জাহাঙ্গীর বলেন, এসিডের মগটি বাক্সের নিচেই রাখা ছিল। আমরা ভেবেছিলাম ওতে পেট্রল রেখেছে। কিন্তু পরে বুঝেছি ওটা এসিড। সে আরো জানায়, তার মায়ের সঙ্গে বিয়ের পর থেকেই সোহান তার ও তার বোনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। জাহানারা বর্তমানে গর্ভবতী।