পেকুয়া উপজেলা সদরে জলাধার সংকটের মাঝে একের পর এক পুকুর জলাশয় ভরাট চলছে। এতে সুপেয় পানি সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে বলে অভিমত স্থানীয় পরিবেশবাদীদের। আর ফায়ার সার্ভিসের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত জলাশয়গুলো ভরাটের কারণে অগ্নিকান্ডে তাৎক্ষণিকভাবে পানি সংগ্রহ করা দুরূহ হয়ে পড়বে এমনটি বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য মতে উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে গত দুই যুগে ১২টি অধিক পরিবেশবান্ধব ছোট বড় পুকুর ভরাট করা হয়েছে। ভরাট করা হয়েছে জলাশয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলোও। ভূমিদস্যুরা বহুতল ভবন করার উদ্দেশ্যে পেকুয়া উপজেলা চৌমুহনীস্থ পুরাতন জমিদার বাড়ির একটি শতবর্ষী পুকুর রাতের আঁধারে ভরাট করছে। দিনের বেলায় যাতে চোখে না পড়ে দিয়ে রাখা হয়েছে অস্থায়ী উচু প্রাচীর।
প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন অনুসারে জলাশয় ভরাট করা বেআইনি হলেও প্রশাসনের নাঁকের ডগায় একশ্রেণীর লোক কৌশলে পুকুরের কিয়দাংশ ইট, কংকর, মাটি ও ময়লা আবর্জনা দিয়ে ভরাট করায় পুকুরটির ঐতিহ্য হারাতে বসেছে অন্যদিকে প্রতিনিয়ত এ জলাশয় ব্যবহারকারী শত শত জনমানব বিপাকে পড়েছেন। পুকুরটি ভরাট করায় স্থানীয়রাও ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন। তাছাড়া অগ্নি নির্বাপণের জন্য ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের জন্য পুকুরটি সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পেকুয়া পুরাতন জমিদার বাড়ির পুকুরটি এখন সম্মূখভাগ থেকে ভরাট করা হচ্ছে। জমিদার বাড়ির কয়েকজন পুকুরটির অংশীদার হলেও ভরাটর করা হচ্ছে কেবল মোছাদ্দেক হোসেন মানিক মিয়ার অংশ। অন্যদের কারো কোনো মাথাব্যথা নেই এব্যাপারে। মানিক মিয়া থেকে পুকুরের ওই অংশ কিনে নিয়ে ভরাট করছেন একটি স্থাপনা নির্মানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার লোহাগাড়া উপজেলার জৈনিক হাসানুর রশিদ। এব্যাপারে তিনি বলেন, সম্পত্তির বৈধ মালিক হতে অনুমতি নিয়ে ভবন নির্মাণের জন্য পুকুর ভরাট করছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নোটিশ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন এতে আইনি কোন জটিলতা নেই।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০) এর ৬(ঙ) অনুযায়ী জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধাসরকারি এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুসারে কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। ওই আইনের ৫ ধারা মতে প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না বা উক্তরূপ জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তরও করা যাবে না। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ এর ৮ ও ১২ ধারার বিধানমতে, কোনো ব্যক্তি এই বিধান লঙ্ঘন করলে ৫ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে অথবা উভয়দন্ডে দন্ডনীয় হবে। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী যে কোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ। জলাশয় ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ নম্বর ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতির জন্য কঠোর ব্যবস্থা ও বিধ্বংসী কর্মকান্ডর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বিভিন্নস্থানে ভরাটকারীরা পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্বিঘেœ ভরাট কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে জমিদার বাড়ির ওই পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন বলে জানিয়েছেন পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশ।
এ সংগঠনের পেকুয়া উপজেলা শাখার সভাপতি মাসউদ বিন জলিল বলেন, শতবর্ষী এই পুকুর ভরাট করা পরিবেশের আইনের সরাসরি পরিপন্থী কাজ। পরিবেশ দূষণ ও সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী কেউ পুকুর ভরাট করতে পারে না উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, কেউ পুকুর ভরাট করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। আমরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অনতিবিলম্বে এই পুকুর ভরাট বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।
এব্যাপারে মোছাদ্দেক হোসেন মানিক মিয়া বলেন, পুকুরে আমার অংশ বিক্রি করে দিয়েছি। এখন তা ভরাট হচ্ছে কিনা আমার জানা নেই।
এব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার শাখার পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, পুকুর ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে জড়িতদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। একমাসের মধ্যে স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়া হলে আমরা আইনগত ব্যবস্থাসহ মামলা করতে বাধ্য হব।
পাঠকের মতামত