
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, ৯৯৯-এ সার্বক্ষণিক মোবাইল টিম মাঠে থাকে। এমন তো হওয়ার কথা নয়। যদি কেউ দায়িত্বে অবহেলা করে, তাহলে ওই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা থেকে কক্সবাজারে ঘুরতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ‘ধর্ষণের শিকার’ নারীর অভিযোগ, জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চাইলেও তাৎক্ষণিক এগিয়ে আসেনি পুলিশ। পরে তিনি অভিযোগটি র্যাবকে জানান।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, কারও অবহেলা থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে বুধবার সকালে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে যান ওই নারী। ওঠেন শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে।
র্যাব জানায়, বিকেলে তারা যান সৈকতের লাবণী পয়েন্টে। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজি অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যান।
এ সময় আরেকটি অটোরিকশায় তাকে তুলে নেন তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তারা তাকে ধর্ষণ করেন।
এর পর তারা তাকে জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে নিয়ে যান। সেখানে তারা ইয়াবা সেবনের পর তাকে আবার ধর্ষণ করেন। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে রুম বাইরে থেকে বন্ধ করে তারা চলে যান।
জিয়া গেস্ট ইনের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে এক যুবকের সহায়তায় কক্ষের দরজা খোলেন ওই নারী। তারপর ফোন দেন ৯৯৯-এ।
এই হোটেল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে র্যাব। ছবি: নিউজবাংলা
ওই নারীর অভিযোগ, ‘৯৯৯-এ ফোন করার পর আমাকে ফোন দেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তা। তার নাম-পরিচয় না বললেও পুরো বিষয়টি আমি তাকে বলি। কিন্তু তিনি আমার কাছে না এসে উল্টে থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেন।
‘একপর্যায়ে আমি হোটেলে-মোটেল জোনে বসানো সাইনবোর্ড থেকে র্যাবের নম্বর পাই। যোগাযোগ করা হলে তারা দ্রুত এগিয়ে আসে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে জরুরি সেবার জন্য ফোন দিলে তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়ার কথা ছিল, সেটা আমি পাইনি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীরুল গিয়াস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিচ্ছি।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ৯৯৯-এ সার্বক্ষণিক মোবাইল টিম মাঠে থাকে। এমন তো হওয়ার কথা নয়। যদি কেউ দায়িত্বে অবহেলা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ফোন পাওয়ার পর র্যাব ওই নারীর স্বামী-সন্তানকে পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে উদ্ধার করে। পরে হোটেলের ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দুজনকে শনাক্ত করার কথা জানায় বাহিনীটি।
র্যাবের ভাষ্য, ওই দুই যুবক হলেন কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার আশিকুল ইসলাম ও আব্দুল জব্বার জয়া। আরেকজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
র্যাব জানিয়েছে, আশিক চার মাস আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তিনি ছিনতাই, মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তা জানান, গত বছর আশিকের নেতৃত্বে কয়েকজন এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে সবকিছু ছিনিয়ে নেন। এই মামলায় তিনি জেলে ছিলেন। চার মাস আগে জেল থেকে বের হওয়ার পর তাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে দেখা যায়।
আশিক এলাকায় মাদক কারবার ও যৌনকর্মী সরবরাহের কাজ করেন। জয়া তার অন্যতম সহযোগী।
কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খায়রুল ইসলাম সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। ওই নারী মামলা করবেন। মামলার প্রক্রিয়া চলছে। সুত্র: নিউজ বাংলা
পাঠকের মতামত