বিভিন্ন সময় দেখা যায়, কোনো ধরনের নিয়ম-নীতি না মেনে একেকজন একেকভাবে পতাকা ওড়াচ্ছেন বা অর্ধনমিত রাখছেন। এক্ষেত্রে পতাকার রং, আকার-আকৃতি বা উত্তোলনের ধরনের মধ্যেও গরমিল দেখা যায়। এ গরমিল রোধে সরকার ‘জাতীয় পতাকা বিধিমালা’ যথাযথভাবে মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে।
সরকারি তথ্য বিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জাতীয় পতাকা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নির্দেশ করে। সকল সরকারি ভবন, অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকার নির্ধারিত ভবনে সকল কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বিধান রয়েছে। এছাড়া ঈদে মিলাদুন্নবি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও সরকার ঘোষিত অন্যান্য দিবসে সরকারি-বেসরকারি সমস্ত ভবন এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন ও কনস্যুলার অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা বাধ্যতামূলক।
এছাড়া শহীদ ও জাতীয় শোক দিবসসহ সরকার ঘোষিত অন্যান্য দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার বিধান রয়েছে। ১৯৭২ সালে প্রণীত ‘জাতীয় পতাকা বিধিমালা’য় জাতীয় পতাকা যথাযথভাবে ব্যবহারের বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। এ নির্দেশনা মেনে চলা প্রতিটি নাগরিকের অবশ্যই কর্তব্য।
বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪(১) অনুযায়ী, “প্রজাতন্ত্রের জাতীয় পতাকা হইতেছে সবুজ ক্ষেত্রের উপর স্থাপিত রক্তবর্ণের একটি ভরাট বৃত্ত।” অন্যদিকে পতাকাবিধিতে বলা হয়েছে, “পতাকার রং হবে গাঢ় সবুজ এবং সবুজের ভিতরে একটি লাল বৃত্ত থাকবে। জাতীয় পতাকার মাপ হবে, দৈর্ঘ্য ১০ ফুট হলে প্রস্থ হবে ৬ ফুট, লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে ২ ফুট, পতাকার দৈর্ঘ্যের সাড়ে ৪ ফুট ওপরে প্রস্থের মাঝ বরাবর অঙ্কিত আনুপাতিক রেখার ছেদ বিন্দু হবে লাল বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু।
ভবনে ব্যবহারের জন্য পতাকার বিভিন্ন মাপ হলো: ১০ ফুট বাই ৬ ফুট, ৫ ফুট বাই ৩ ফুট এবং ২৫ ফুট বাই ১৫ ফুট। মোটরগাড়িতে ব্যবহারের জন্য পতাকার বিভিন্ন মাপ হলো: ১৫ ইঞ্চি বাই ৯ ইঞ্চি এবং ১০ ইঞ্চি বাই ৬ ইঞ্চি। আন্তর্জাতিক ও দ্বিপক্ষীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য টেবিল পতাকার মাপ হলো: ১০ ইঞ্চি বাই ৬ ইঞ্চি।
জাতীয় পতাকা কোনো অবস্থাতেই সমতল বা সমান্তরালভাবে বহন করা যাবে না এবং উত্তোলনের সময় সুষ্ঠু ও দ্রুতলয়ে উত্তোলন করতে হবে এবং সসম্মানে অবনমিত করতে হবে। মোটরগাড়ি, নৌযান, উড়োজাহাজ ও বিশেষ অনুষ্ঠান ব্যতীত অন্যান্য সময় পতাকা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উত্তোলিত থাকবে এবং সূর্যাস্তের পর কোনো মতেই পতাকা উড্ডীন অবস্থায় থাকবে না।
কোনো কারণে পতাকার অবস্থা ব্যবহারযোগ্য না হলে তা মর্যাদাপূর্ণভাবে সমাধিস্থ করতে হবে। ২০১০ সালে প্রণীত সংশোধিত পতাকাবিধি অনুসারে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিধি ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড প্রদানের বিধান রয়েছে।
১৫ আগস্ট সমগ্র জাতি শ্রদ্ধাভরে ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহাপ্রয়াণ তথা জাতীয় শোক দিবস পালন করবে। তাই দেশ ও জাতির পিতার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা থেকেই জাতীয় শোক দিবসসহ সকল দিবসেই সরকার নির্ধারিত পতাকাবিধি অনুসরণ বাঞ্ছনীয়।
পাঠকের মতামত