উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫/০৯/২০২২ ৬:৫৪ পিএম

২০১৮ সালে সম্মেলনের পর দু’জনের কমিটিতে সাড়ে ৪ বছর পার করে দিয়েছে কক্সবাজার জেলা যুবলীগ। অরাজনৈতিক মনোভাবের কারণে দীর্ঘ সময়েও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থ হয়েছেন সভাপতি-সম্পাদক, এমন অভিযোগ তৃণমূলের। ত্যাগীদের বাদ দিয়ে ‘মাই ম্যান’ ও সুবিধাভোগীদের দলীয় পদ দিতে স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের কারণে দু’জনের কমিটি দলীয় গঠণতান্ত্রিক নিয়মে পূর্ণ মেয়াদ পেরিয়ে বাড়তি আরও একবছর অতিক্রম করেছে। এই দীর্ঘ সময় অতিক্রম করলেও পূর্ণ কমিটি দাঁড় করাতে ব্যর্থ হন তারা।

দৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে যুবলীগের নেতৃত্ব। নিকট অতীতে সাংগঠনিক কোন প্রোগ্রাম নিয়ে যুবলীগের প্রাণঞ্চলতা জানান দেওয়া কিংবা সাজাতে ব্যর্থ তৃণমূল যুবলীগও। মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে আছে প্রায় সব উপজেলা-পৌর কমিটিও। এতে হতাশা সর্বত্র।

তবে, গত ২৮-২৯ ও ৩০ মে চট্টগ্রাম উত্তর-দক্ষিণ ও মহানগর যুবলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে ঝিমিয়ে পড়া যুবলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দেয়। প্রত্যাশা ছিলো দু’জনের কমিটিকে ব্যর্থ হিসেবে ধরে দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর পর ভেঙে সম্মেলন হবে। নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা কেন্দ্রে যোগাযোগের পর নেতৃবৃন্দের কাছে সম্মেলনের আশ্বাস পেলে শুরু হয় প্রাণচাঞ্চল্য। শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল-প্রতিবাদ সমাবেশ করে যুবলীগের সাধারণ নেতা-কর্মীরা। শহর যুবলীগের আহ্বায়ক শোয়েব ও জেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ ইফতেখারের নেতৃত্বে যুবলীগের বিপুল তৃণমূলকর্মী বিক্ষোভে অংশ নেন। এরপরই বিদ্যমান কমিটি নিয়ে চলে নানা সমালোচনা।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ জেলায় সর্বশেষ কাউন্সিলে যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর ও সাধারণ সম্পাদক হন শহীদুল হক সোহেল। সম্মেলনে তৎকালীন চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত দেন, জেলার বিদায়ী সভাপতি খোরশেদ আলম ও সাধারণ সম্পাদক মাবুর পরামর্শক্রমে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে কেন্দ্রে জমা দেবেন নব নির্বাচিত সভাপতি-সম্পাদক। কিন্তু বিদায়ী সভাপতি-সম্পাদককে পাশ কাটিয়ে অগোচরে সভাপতি-সম্পাদক বাটোয়ারায় নিজেদের অনুগত ৫০ ও ৫১ জন মিলিয়ে ১০১ সদস্যের একটি তালিকা কেন্দ্রে জমা দেন। ২০১৯ সালে জমা দেওয়া তালিকায় জামায়াত শিবিরের কর্মী, চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী, একাধিক মামলার আসামিসহ একেবারে অপরিচিত ও নতুন ব্যক্তিদের শনাক্ত করেন ত্যাগীরা। তালিকায় বাদ পড়েন ত্যাগীরাসহ বর্তমান সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে কাউন্সিলে প্রতিদ্বন্ধিতাকারীরা। এসব বিষয় লিখিতভাবে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগীয় দায়িত্ব প্রাপ্ত) শেখ ফজলে নাঈমকে জানানোর পর আলোর মুখ দেখেনি জেলা যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি।

গত সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও পৌর যুবলীগ আহ্বায়ক শোয়েব ইফতেখার বলেন, ‘দুই সোহেল সভাপতি-সম্পাদক হয়ে গত সাড়ে চার বছরে পৌরসভা ও উপজেলা কমিটিগুলোও গোছাতে ব্যর্থ হন, ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ দিয়েই চলছে সব পৌর ও উপজেলা কমিটি। সভাপতির অশালীন আচরণে দুঃসময়ে মাঠে থাকা অনেকে রাজনীতি ছেড়েছেন। ছাত্র ইউনিয়ন থেকে যুবলীগে আসায় ছাত্র ইউনিয়নকে সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় অনেককে যুবলীগ বানানোর চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে সভাপতির বিরুদ্ধে।’

জেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ ইফতেখার জিসান বলেন, ‘চলমান সভাপতি-সম্পাদকের প্রস্তাবিত কমিটিতে ত্যাগী, পরিশ্রমী, নিবেদিতপ্রাণ আদর্শবাদী নেতাকর্মী বাদ পড়েন। নিজেদের আজ্ঞাবহ চাটুকার লেভেলের কিছু ব্যক্তি ছাড়া সংগঠনের প্রকৃত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই বললে চলে। গত সাড়ে ৪ বছরে উল্লেখযোগ্য কোন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নেই। আওয়ামী লীগের দিবস ভিত্তিক কর্মসূচিতে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেওয়া ছাড়া আলাদা বড় মিছিলও করতে পারেননি তারা। মেয়াদের বেশি সময়েও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় হতাশ নবীনরা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যুবলীগের ত্যাগী অগণিত নেতা-কর্মী থাকলেও সংগঠন আজ অস্তিত্ব সংকটে।’

জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল্লাহ জানান, দায়িত্ব পেয়ে সংগঠন সুসংগঠিত না করলেও সভাপতি-সম্পাদক নিজেদের আখের গুছিয়েছেন ভালোই। ব্যর্থ কমিটি ভেঙে মাঠ পর্যায়ের ত্যাগীদের হাতে নতুন নেতৃত্ব তুলে দেওয়া দরকার।

জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মাবু বলেন, ‘‘অতীতে যুবলীগকর্মীদের সরব উপস্থিতিতেই মূলদলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড হতো। কিন্তু ২০১৮ সালে বাহাদুর-সোহেল কমিটির পর সংগঠনটি ‘সভাপতি-সম্পাদক লীগে’ পরিণত হয়েছে। এতে যারা যুবলীগ করেছেন এবং করতে আগ্রহী তারা খুবই হতাশ। বিরোধী দলের মতো ঝিমিয়ে রয়েছে যুবলীগ।’’

জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক সোহেল বলেন, ‘২০১৯ সালে কেন্দ্রে ১০১ জনের তালিকা পাঠিয়েছি। অনুমোদন না দিলে আমরা কী করতে পারি? মাদক ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও দখলবাজদের নয়, আমরা যাচাই-বাছাই করে গঠনতন্ত্র মেনে সক্রিয়দের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেলে সব উপজেলায় কমিটি গুছিয়ে জেলায় সম্মেলনের উদ্যোগ নেব।’

জেলা যুবলীগ সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর বলেন, ‘কেন্দ্রে পাঠানো তালিকায় নাম থাকা কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তাদের বাদ দিয়েও কমিটি অনুমোদন দেওয়া যায়। আর যেহেতু আমাদের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ-সেক্ষেত্রে প্রশ্ন এড়াতে, কেন্দ্র আমাদের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি দিলেও কোন সমস্যা নেই। তবে, স্বেচ্ছাচারিতা ও পদ বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।’

কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগীয় দায়িত্ব প্রাপ্ত) শেখ ফজলে নাঈম বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলায় কমিটি গঠন শুরু করেছি। কক্সবাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। পর্যটনসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ নানা বিষয় মিলিয়ে এখানে স্মার্ট ও ডায়নামিক নেতৃত্ব দরকার। চলমান কমিটির ব্যর্থতার অভিযোগগুলোসহ সবকিছু মাথায় রেখেই আমরা এগোচ্ছি।’

যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে ১০১ জনের একটি তালিকা আমরা পেয়েছি। তালিকায় কয়েকজনের বিরুদ্ধে দপ্তরে অভিযোগও এসেছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি। যাচাই-বাছাই করে গঠনতন্ত্র মেনে কমিটি দেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, যুবলীগ কক্সবাজার সদর ও পৌর কমিটি হয় ২০১৭ সালে। টেকনাফ উপজেলা কমিটিও একই বছরে এবং টেকনাফ পৌর কমিটি হয়েছে ২০১৮ সালে। উখিয়া ও পেকুয়া উপজেলা কমিটি গঠন হয়েছিল ২০১৫ সালে। রামু ও মহেশখালী উপজেলা এবং পৌর কমিটি হয় ২০১৬ সালে। কুতুবদিয়া উপজেলা কমিটি হয় ২০১৭ সালে। চকরিয়া উপজেলা কমিটি হয় ২০১৬ সালে এবং পৌর কমিটি হয়েছিল এরও এক বছর আগে ২০১৫ সালে।

ইত্তেফাক/এএএম
বিষয়:
কক্সবাজারসারাদেশ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
ছবি- প্রতীকী (সংগৃহীত)
কক্সবাজারে শিক্ষক হত্যা: একজনের ফাঁসি, অপরজনের যাবজ্জীবন
পা দিয়ে লিখছেন মানিক
এসএসসি পরীক্ষায় পা দিয়ে লিখলেন মানিক
লাম্পি স্কিন রোগে মরছে গরু, আতঙ্কে খামারিরা
লাম্পি স্কিন রোগে মরছে গরু, আতঙ্কে খামারিরা
রাজশাহীতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক
জনগণের স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবসা করা যাবে না : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
বেড়েছে দুর্যোগ, হুমকিতে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী
বেড়েছে দুর্যোগ, হুমকিতে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী
৩৩ কেজি ওজনের পোপা মাছ
৩৩ কেজি পোপা মাছের দাম হাঁকাচ্ছে সাড়ে ৭ লাখ
বৃষ্টির পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে খুলনার রাস্তাঘাট-ঘরবাড়ি
বৃষ্টির পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে খুলনার রাস্তাঘাট-ঘরবাড়ি
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল
রাশিয়ায় ফিশিং টুর্নামেন্ট শেষে দেশে ফিরলো বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল

রাজশাহীতে ৬১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:৩৭
ছবি- সংগৃহীত
রাজশাহী জেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ জনসহ ৬১ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন উৎসব মুখর পরিবেশে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন।

সহকারী রিটার্নিং অফিসার শহীদুল ইসলাম জানান, রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে ৭৬ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৬১ জন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও জমা দিয়েছেন চারজন। আর তিনটি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ১৮ এবং নয়টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৩৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

শহীদুল ইসলাম জানান, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যথাক্রমে আক্তারুজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার ইকবাল বাদল ও আফজাল হোসেন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর বাছাই এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ২৫ সেপ্টেম্বর। আগামী ১৭ অক্টোবর এই নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে।

সুত্র: ইত্তেফাক

পাঠকের মতামত

ঘটনাপ্রবাহঃ রাজনীতি

টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর মনিরুজ্জামানের সম্পদ জব্দ দুদকের মামলা

টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর মো. মনিরুজ্জামানের সম্পদ জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ স্পেশাল ...

রাজাপালং ইউপি’র উপ নির্বাচনে প্রতীক পেলেন চার চেয়ারম্যান প্রার্থী

উখিয়ার রাজাপালং ইউপির উপ নির্বাচনে অংশ নেওয়া চার চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনী প্রতীক পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১১ ...

আইনি লড়াইয়ে প্রার্থীতা ফিরে পেলেন হুমায়ুন কবির চৌধুরী

উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের উপনির্বাচনে মহামান্য হাইকোর্টের রাযে কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিস কর্তৃক বাতিলকৃত মনোনয়ন ...