এম এম কবীর, পরিবর্তন ::
সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সঙ্গে পুলিশের বিশেষ শাখার উপপরিদর্শক (এসআই) আকরাম হোসেন লিটনের স্ত্রী বনানী বিনতে বশির বন্নির পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে এই রকম সংবাদ প্রকাশকে আজগুবি ও ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই দেখছে বন্নির পরিবার ও নিকট আত্মীয়রা। আকরামের রেখে যাওয়া সম্পদ আত্মসাতের জন্য তার বোনেরা এ সমস্ত মিথ্যা কুৎসা রটনা করছে। যা বন্নির জন্য এখন পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বন্নির বাবা বশির আহম্মেদ জানালেন, আকরাম সড়ক দুর্ঘটনার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে তার রেখে যাওয়া নগদ অর্থ ও সম্পদের লোভে প্রথমে আমার বোনের ছেলে সাদিমুল হক মুনের সাথে পরকীয়ার কথা বলে ঝিনাইদহ আদালতে ৪ জনকে আসামি করে তাঁর বোনেরা মামলা করেন। এখন আবার নতুন করে বাবুল আক্তারের সাথে পরকীয়ার গল্প তৈরি করে আমার মেয়ের মানহানি করছে নিহত আকরামের স্বজনরা।
বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বাবুল আক্তারের পরকীয়া ও এসআই হত্যা নিয়ে বন্নির পরিবার ও নিকট আত্মীয়দের সাথে প্রতিবেদকের কথা হলে তারা পরিবর্তন ডটকম কে জানান, বাবুল আক্তার যতদিন চাকরি করেছেন তার মেধা ও যোগ্যতা দিয়েই করেছে। কারও উপকার করতে না পারলেও ক্ষতির চিন্তা ভাবনা করেনি কখনও। তার স্ত্রী নিহত হওয়ার পর সন্তানদের কথা চিন্তা করে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চাকরি করছেন। এখন একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে তার বাকী সম্মানটুকুও কেড়ে নিতে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বাবুল যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছিলেন তখন বনানী নামের মেয়েটির বয়স ৩ থেকে ৪ বছর হবে। এ রকম একটি ছোট বাচ্চাকে জড়িয়ে অসম প্রেমের গল্প বানাচ্ছে সম্পদ লোভী নিহত আকরামের স্বজনরা। মিডিয়ার সামনে অসম প্রেমের গল্প বানিয়ে একেক বার একক ধরণের কথা বলছে। এখন তারা আকরাম হত্যার সাথে বাবুলকে জড়িয়ে নতুন আজগুবি গল্প তৈরিতে ব্যস্ত যা সত্যিই দুঃখজনক।
বাবুল আক্তারকে নিয়ে এই ধরনের সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে তারপরও আপনারা কোন প্রতিবাদ কিংবা মন্তব্য করছেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বাবুল আক্তারের ছোট ভাই এ্যাড. হাবিবুর রহমান লাবু বলেন, এগুলো যারা করছে তারা বাবুল আক্তার সম্পর্কে না জেনে শোনে এক তরফা ভাবেই অসৎ উদ্দেশ্যে করছেন। তিনি মিডিয়া ও আকরামের স্বজনদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারা অনুসন্ধান করে সঠিক তথ্য তুলে ধরুন। এক তরফা কথা শোনলে আসল তথ্য গোপনেই থেকে যাবে। ছোট কাল থেকে বাবুলের বন্নির সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে যে দাবি তোলা হচ্ছে তা সত্যি দুঃখজনক। ১৯৯০ সালের দিকে আমার ভাই বাবুল আক্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থেকে পড়াশোনা করতো।
নিহত আকরামের স্ত্রী বন্নির বাবা বশির আহম্মেদের সাথে পরিবর্তন ডটকমের কথা হলে তিনি জানান, আমার চাকরি জীবনে বাবুল বা বাবুলের পরিবারের সাথে কখনও দেখা বা সাক্ষাত হয়নি। তাছাড়া আমি শুনতে পাচ্ছি বাবুলের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ খুলনা জেলায় কর্মরত ছিলেন। ইতি পূর্বে একটি পত্রিকায় উল্লেখ করা হয় তখন আমরা সাতক্ষীরায় ছিলাম। এখন আবার বলছে খুলনার কথা। এরপর আবার না জানি অন্য কোন জেলার কথা বলে।
তার মেয়ের সঙ্গে বাবুলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল কিনা? এ বিষয়ে বশির আহম্মেদ বলেন, আমি যখন ১৯৮৫ সালে খুলনায় চাকরি করি তখন আমার মেয়ে বন্নির জন্ম হয়। এখন আপনারাই বলেন, সদ্য জন্ম নেয়া একটি মেয়ে কিভাবে প্রেম করে তা আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন?
মুঠোফোনে কান্না জড়িত কন্ঠে বন্নির বাবা আরো বলেন, আমার মেয়েটি স্বামী হারিয়ে এমনিতেই বিপদগ্রস্ত তার ওপর স্বামীর সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে পড়ে লেগেছে তার বোন ও বোন জামাইরা। জানাজা শেষ করেই নিহত আকরামের বড় বোন জামাই আব্দুর রশিদের পুত্র ও তার সহযোগীরা আমার ওপর আক্রমণ করে মারপিট করার চেষ্টা করে। ওই সময় তাদের হামলা ঠেকাতে গিয়ে আমার শ্যালক নাজমুল, শরিফুল ও আমার চাচাত ভাই কলেজ প্রভাষক ওহিদুর রহমান রক্তাক্ত ও জখম হয়েছে। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ২০১৫ সালে মাগুরা প্রেস ক্লাবে নিরাপত্তা চেয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করি।
বাবুল আক্তারকে জড়িয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় পরকীয়ার সম্পর্ক আছে এমন সংবাদ প্রকাশিত হলে, আমার মেয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিল যে বাবুল নামে কাউকে সে চিনে না বা তার সাথে কোন ধরণের সম্পর্ক নেই। এমন কি তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে মোবাইল নম্বার ট্রেকিং করে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্যেও চ্যালেঞ্জ করে বন্নি। তারপরও নিহত আকরামের বোনেরা আমার মেয়ের নামে বিভিন্ন অপপ্রচার করছে। তবে তাদের উদ্দেশ্য একটি কথা বলতে চাই আকরাম নিহতের পর নানান অভিযোগ করার পরও ফরেনসিক রিপোর্টেও সত্য উদঘাটন হয়েছিল। এখন আবার ওই চক্রটি হয়তো কারো ইন্ধনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
আকরাম মারা যাওয়ার পর অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে আমার মেয়েকে। এ নিয়ে বন্নিকে হত্যা করার হুমকিও দিয়েছিল তারা। আমাদেরকেও নানান সময়ে হুমকি দিত। কেন হুমকি দিত এ ব্যাপারে তিনি বলেন, সম্পদের লোভেই ওইসব কর্মকাণ্ড করেছিল আকরামের বোনেরা। তাই তাদের নামে ঝিনাইদহ সদর থানায় জিডি করি যার নাম্বার ৮৫৮/১৫, এছাড়া ঢাকা শাহবাগ থানায় ও একটি জিডি করা হয়। আর আকরাম মারা যাওয়ার আগে ঢাকাতে একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করে রেখে ছিল যা তার একমাত্র মেয়ের নামে আছে। আকরাম তার স্ত্রীর নামে কিছু রেখে যায়নি। কিন্তু আকরামের পরিবার ফ্লাটটিও আকরামের মিশন থেকে আনা টাকা আত্মসাৎ করার জন্য নতুন করে ফন্দি করছে।
বিভিন্ন পত্রিকায় আকরামের রিনির দেয়া বক্তব্য প্রকাশের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, আকরাম মারা যাওয়ার পর থেকেই আমি ও আমার মেয়ে বন্নি আকরামের দাফন হওয়ার আগ পর্যন্ত এক সঙ্গেই ছিলাম। যারা বলছে আমি ও আমার মেয়ে লাশের সাথে ছিলাম না তাদের জ্ঞাতার্থে বলতে চাই, লাশ দাফনের পরপরই পারভীন রিনির বড় বোনের ছেলে আমাদের বেশ কয়েকজনকে মেরে রক্তাক্ত করেছিল। কলেজ প্রভাষক ওহিদুর রহমানকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আমি চিকিৎসা করিয়েছিলাম। আকরামের মেয়ের নামে ফ্ল্যাটটি নেয়া এবং তার জমানো কিছু টাকা পয়সার লোভেই আজ তারা (আকরামের বোনেরা) নানান ধরণের কুৎসা রটনা করে যাচ্ছে যা সত্যি বেদনাদায়ক। আকরাম কিভাবে মারা গিয়েছে সব ডকুমেন্ট নিয়ে কারো কোন সন্দেহ নেই। সবাই সবকিছুই জানে। তবে এতোদিন পর বাবুল আক্তারকে জড়িয়ে কেন গল্প তৈরি করা হচ্ছে সেটা চিন্তার কোনো বিষয় নয়। কারণ একটাই অর্থ সম্পদের লোভেই তারা এটা করছে। বাবুলের সাথে যদি আমার মেয়ের পরকীয়া থেকে থাকেই তাহলে বন্নি যে মোবাইলে কথা বলত সেটা ট্র্যাকিং করে বের করুক। তবে আমার মেয়ের সাথে বাবুল নামের কারো পরিচয় ছিলনা এবং নেই। হত্যা কিংবা পরকীয়ার প্রশ্নই আসেনা।
সুত্র;;পরিবর্তন