এ. এম হোবাইব সজীব::
অপেক্ষার পালাবদল শেষে মহেশখালী উপজেলার বহুল আলোচিত ইউনিয়ন কালারমারছড়া বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল দীর্ঘ ৭ বছর পর ৪ আগষ্ট শুক্রবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিএনপির নেতাদের মর্যাদার লড়াই গতকাল শুক্রবার। বিএনপি’র এই সম্মেলন ঘিরে এখন উজ্জীবিত স্থানিয় নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে কালারমারছড়া দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকা নেতাকর্মীদের মাঝে ফিরে এসেছে চাঙ্গাভাব। আগামীতে নেতৃত্বে কে আসছেন এ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা সমালোচনা। কে ছিলেন তৃণমূল নেতাদের পাশে । আর কে ছিলেন না এনিয়েও নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সম্মেলনে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা চাপিয়ে দেওয়া কমিটি নয় প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচন করতে চান। প্রায় ৭ বছর পর আজ কালারমারছড়া বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ লক্ষ্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কালারমারছড়া বিএনপি। সম্মেলনকে সফল ও সার্থক করতে আসছেন জেলা ও উপজেলা বিএনপির অর্ধ ডজন নেতাকর্মী।
সূত্র জানায়, গত ২১ ও ২৮ জুলাই সম্মেলনের তারিখ ঘোষনা করা হলেও স্থান নির্ধারন ও দুই প্রার্থী টপ দুই পদে আসীন হবে না জেনে নিশ্চিত হয়ে ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি পুনরায় ঘটনের তদবির চালায়। এবং দুই গ্রুফের রশি টানাটানি কারণে সম্মেলনের তারিখ পেছালে । উপজেলার নেতাদের সাথে দফায় দফায় বেঠক করার পর শেষ বেলায় এসে অনুষ্ঠানের স্থান নির্ধারন করা হয়েছে ইউনিয়নের উত্তর ঝাপুয়া। ৪ আগষ্ট বিকেল ৪ টার সময় কালারমারছড়া সরদাঘোনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। এর পর একে একে অনুষ্ঠান স্থলে কালারমারছড়া বিএনপিকে উজ্জীবিত করতে বক্তব্য রাখবেন আগত নেতারা। এতো কিছুর পরও কালারমারছড়াবাসী ও কাউন্সিলরদের মাঝে অজানা ভয় ও আতংক বিরাজ করছে বলে জানা যায়। কোন কোন প্রার্থীর পক্ষে অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকা করছেন অনেকে।
অপরদিকে পাশ্ববর্তী পেকুয়া উপজেলা বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষনা হলে একদিনের মাথায় পদত্যাগের ঘোষনা দিয়েছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু। গত বুধবার দুুপর একটার দিকে এ জনপ্রিয় নেতা শাফায়েত আজিজ রাজু তাঁর ফেসবুক ওয়ালে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষনা দিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। তৃর্ণমুলের নেতাকর্মীদের ধারণা ত্যাগি এ নেতাকে যথাযত মূল্যায়ন না করায় তিনি স্ব-ইচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। কালারমারছড়া বিএনপির কমিটিতে যদি ত্যাগি নেতাদের মূল্যোয়ন করা না হয় তা হলে কালারমারছড়া বিএনপি পেকুয়ার অবস্থা হবে বলে এমন কথার উদয় হচ্ছে বিএনপি ঘরণা নেতাকর্মীদের কাছে ।
সচেতন কাউন্সিলরদের মতে, এবারের সম্মেলন ও কাউন্সিলে বড় ধরনের কোন দূর্ঘটনা ঘটলে কালারমারছড়া বিএনপি ইতিহাসের আস্থাকুড়ে নিক্ষেপ। রচিত হবে এক কলংকিত ইতিহাস। সুনাম হারাবে কালারমারছড়া ইউনিয়ন বিএনপি।
তবে এ সম্মেলনকে ঘিরে একদিকে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করলেও রয়েছে নানা রকম জল্পনা ও কল্পনা। এনিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির তৃর্ণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও বাঁধভাঙ্গা আনন্দ দেখা দিয়েছে। সূত্র জানায়, কালারমারছড়া উত্তর ঝাপুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান,তারা দীর্ঘদিন নেতৃৃৃৃৃৃৃৃত্ব দেখেছেন। হয়েছেন নেতাদের রাজনৈতিক কোন্দালের বলি। বিভিন্ন ভাব হয়রানিও হয়েছেন। নেতারা অনেকে পাশে দাঁড়াননি তাদের । এ জন্য কারও দ্বারা ব্যবহ্নত না হয়ে তৃণর্মূলের সাথে যোগাযোগ রাখে এমন নতুন মুখের স্বপ্ন দেখছেন তারা। এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসাবে মাঠে নেমেছেন ডজন খানিক প্রার্থী। এ ডজন খানেক প্রার্থীকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে নানা আলোচনা। তবে এ দুই পদের পিছিয়ে নেয় কেউ। নিজেদের জয় নিশ্চিত করতে কাউন্সিলদের ধারে ধারে সমান তালে চলছে জোর লবিং। তবে তৃর্ণমূলের নেতারা বলছেন, অতীত মনে রেখে দলকে সামনে অগ্রসর করতে যারা গত কমিটির শীর্ষ আসনে যারা ছিল দলের কেন্দ্রীয় কমসূর্চিতে যাদের দেখা মিলেনি তাদেরকে যেন পুনরায় শীর্ষ দুই পদে স্থান দেওয়া না হয়। যদি তারা স্থান পায় কালারমারছড়া বিএনপিতে ভাঙ্গনের সুর বইবে এটাই নিশ্চিত।
সম্মেলনকে ঘিরে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিএনপির ঘরনার অনেকে স্ট্যাটাট দিয়ে মন্তব্য করায় ঝড় উঠেছে। জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র-সহসভাপতি আতাউল্লাহ বোখারি বলেন, আমি বিএনপির অঙ্গ সংগঠন কালারমারছড়া যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করে জানতে পেরেছি , টানা ৭ বছর ধরে সম্মেলন না হওয়ায় কালারমারছড়া মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিক অবস্থা খুবই নাজুক। তাই সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে কাউন্সিলর’রা নেতা নির্বাচিত করলে সময় উপযোগি ও গুরুত্বপূর্ণ কমিটি হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
সভাপতি ও সম্পাদক পদের প্রার্থীদের মধ্যে কয়েকজন প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নিজের আখের গোছানো ও বিগত সময় ওয়ার্ড কমিটি দেওয়ার নামে পকেট কমিটি দেওয়া ও দলের শৃংঙলা ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। এসব খতিয়ে দেখে সভাপতি, সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে একটি সময় উপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ কমিটি অনুমোদন দেবেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা এডভোকেট নুরুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক আবুবক্কর ছিদ্দিক। এখন সবার দৃষ্টি তাদের দিকে।
নেতা-কর্মীরা জানান, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী কাউন্সিলরদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। সম্মেলনকে ঘিরে সভাপতি পদে ৩জন এরা হলেন, মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র- সহসভাপতি ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান আহবায়ক আবু তাহের চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সহ- সভাপতি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এখলাছুর রহমান, যুগ্স আহবায়ক ডা: মনছুর । এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে ৪ জন প্রার্থী। এরা হলেন, কালারমারছড়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জসিম উদ্দিন চৌধুরী,যুগ্ম আহবায়ক আব্দু শুক্রুর ও যুগ্ম আহবায়ক মোঃ জাকারিয়া, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম । সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, উপজেলা বিএনপির সদস্য এনামুল হক, ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি সালাহ উদ্দিন নূরী পিয়ারু, সাবেক ছাত্র নেতা কামরান হিল্লোল, সাবেক যুবদল নেতা আকতার কামাল , মোঃ রেজাউল করিম।
সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০০৯ সালে কালারমারছড়া ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত কমিটি কাযক্রম ঝিমিয়ে পড়ায় উপজেলা বিএনপির নেতারা ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত করে দেন। তবে গত বছরে শেষের দিকে সাবেক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুতাহের চৌধুরীকে আহবায়ক ও আলহাজ্ব এখলাছুর রহমানকে যুগ্ম আহবায়ক করে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
এর পর থেকে গত ৭ বছর দেখা মিলেনি সম্মেলনের। দলে যথাযত মূল্যায়ন না থাকায় হতাশ হয়ে পড়ে সিনিয়র নেতা কর্মীরা। যার ফলে
এসব নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যক্রম থেকে অনেকটাই দুরে সরে যান। দীর্ঘ ৭ বছর পর সম্মেলনের কথা শুনে ফের চাঙ্গা হয়েছে জড়ে পড়া এসব নেতাকর্মীরা।
তৃণমূলের নেতারা অভিযোগ করেছেন, ২০০৯ সালে ঘোষিত কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক কোন সময় এক টেবিলে বৈঠক হয়নি, যার কারণে অভিবাবক বিহীন ও দায়সারাভাবে চলছিল কালারমারছড়া ইউনিয়ন বিএনপি।
সভাপতি পদে তিন জন হেভিওয়েট প্রার্থী থাকলে ও সম্পাদকের পদের ৪ জন হেভিওয়েট প্রার্থীরা নিজের অবস্থান জানান দিতে কৌশলে প্রচারনা চালাচ্ছেন। তবে সম্পাদক প্রার্থী জসিম উদ্দিন চৌধুরী তার আর্দশ পিতা সাবেক কালারমারছড়া ইউনিয়ন বিএনপির সফল সভাপতি বর্ষিয়ান রাজনৈতিকবিদ মোক্তার আহমদ চৌধুরী ও তার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে সম্পাদক পদে আসীন হতে পারেন এমন কথা শউর হয়েছে বিএনপির নেতা কর্মীদের কাছ থেকে। তবে দেখা যাক কে হচ্ছেন সভাপতি ও সম্পাদক।
মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুবক্কর ছিদ্দিক বলেন, আমরা সম্মেলন স্থলে গিয়ে সবার সাথে পরামর্শ করে সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচন করব। যদি প্রার্থীদের বুঝিয়ে সম্ভাব না হয় নতুন সিন্ধান্ত নিয়ে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন করার পরিক্লপনা রয়েছে।
পাঠকের মতামত