প্রকাশিত: ১৭/০৪/২০১৭ ১:০৯ পিএম

তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার ::

‘১৯৯৫ সালের শেষ দিকের অথবা ১৯৯৬ সালের জানুয়ারির ঘটনা। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা সদরে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানের সঙ্গে দেখা হয় স্থানীয় আনসার-ভিডিপিকর্মী জসিম উদ্দিনের। সঙ্গে ছিলেন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জঙ্গি শায়খ আবদুর রহমান ও বরিশালের একটি মাদরাসার অধ্যক্ষের ছেলে। এই তিন জঙ্গি মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ওয়ালাদং পাহাড় ঘুরে সবেমাত্র এসেছিলেন উখিয়া বাসস্ট্যান্ডে। তাঁদের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় তিনজনকেই ধরে উখিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়।

বর্তমানে উখিয়া উপজেলা আনসার-ভিডিপি কম্পানি কমান্ডার হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে আলাপে এসব কথা বলেন। তিনি জানান, হরকাত নেতা মুফতি হান্নান সে সময় বলেন, ‘আমরা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকার বাসিন্দা। এ রকম উঁচু পাহাড় দেখিনি, তাই দেখতে এসেছি। আনসার-ভিডিপি কমান্ডার জানান, মূলত কক্সবাজার-বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নিয়েই ছড়িয়ে পড়ত দেশে-বিদেশে। মুফতি হান্নানসহ অন্য জঙ্গি নেতাদেরও প্রশিক্ষণের শুরু ছিল মিয়ানমার সীমান্তের অরণ্যে। তবে থানায় তাদের ধরিয়ে দেওয়ার পর কী হয়েছিল মনে নেই তাঁর।

তবে এ ঘটনার পরপরই ১৯৯৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের থাইনখালী ওয়ার্ডের লণ্ডাখালী নামক এক দুর্গম পাহাড়ে আবিষ্কৃত হয় হুজির প্রশিক্ষণ ঘাঁটি। বাংলাদেশে জঙ্গি প্রশিক্ষণের সর্বপ্রথম ঘাঁটি আবিষ্কারের ঘটনা এটিই। সেখান থেকে একসঙ্গে আটক করা হয়েছিল ৪১ জন হরকাত জঙ্গিকে। উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। দুর্গম পাহাড়ি ঘাঁটি থেকে সেই সময় হরকাত নেতা মুফতি হান্নানসহ বহু জঙ্গি পালিয়ে যায়। তবে আটক ৪১ জঙ্গির মধ্যে মুফতি হান্নানের তিন সহযোগী—গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার বোরহানুদ্দিন, কাশিয়ানীর আবুল হোসেন ও গোপালগঞ্জ সদরের খালেদ সাইফুল্লাহ।

কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের পালংখালী ইউনিয়নের পশ্চিমে তেলখোলা সড়ক দিয়ে ছয়-সাত কিলোমিটার দুর্গম পথ পাড়ি দিলেই পাহাড়ি লণ্ডাখালী গ্রাম। এসব পাহাড়ে আগে অনেক গাছগাছালি থাকলেও এখন নেই। তবে জঙ্গিদের আস্তানার স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে এখনো। জঙ্গিরা সেখানে যেসব সুড়ঙ্গে থাকত তারও কিছু রয়েছে। তারা যে পাহাড়ি ছড়ার পানি ব্যবহার করত সেটিও রয়েছে। লণ্ডাখালী গ্রামের রশিদ আহমদ (৬৫) বলেন, ‘আমি এসব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। আজ থেকে ১৯-২০ বছর আগে এ পাহাড়েই অস্ত্র নিয়ে মুজাহিদরা (স্থানীয়ভাবে জঙ্গিরা মুজাহিদ নামে পরিচিত) ট্রেনিং দিত। তাদের সংখ্যাও বেশি ছিল। রোহিঙ্গারাও এখানে ট্রেনিং দিত। ’ একদিন পুলিশ এসে অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে তাদের ৪০-৪১ জনকে ধরে নিয়ে যায়। পাহাড়ে এখনো তাদের অসংখ্য চিহ্ন রয়েছে।

কক্সবাজারের উখিয়ার জঙ্গি প্রশিক্ষণ ঘাঁটি এলাকার পাশের গ্রাম থাইনখালীর বাসিন্দা আনসার-ভিডিপি কম্পানি কমান্ডার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মূলত রোহিঙ্গাদের সেবার নামে এ দেশে জঙ্গিবাদের ভয়াবহ উত্থান ঘটে। সেটা টের পেয়েই ১৯৯৬ সালে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী থাইনখালী অরণ্যে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ও সেনা গোয়েন্দারা আবিষ্কার করেন বিশাল জঙ্গি প্রশিক্ষণ ঘাঁটি। মুফতি হান্নানের হরকাতুল জিহাদের ‘তালেবানরাই’ সেখানে প্রশিক্ষণ নিত। পাহাড়ের চারটি বড় গুহায় অবস্থান নিয়ে ভারী অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিত তারা। ’ এ-সংক্রান্ত মামলায় ১৯৯৮ সালের ৩ মে গ্রেপ্তার ৪১ জন জঙ্গির প্রত্যেকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয়।

এ মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা কক্সবাজার জেলা ডিবির তত্কালীন ওসি, এখন অবসরপ্রাপ্ত ছগির আহমদ তালুকদার গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, অভিযানের সময় হরকাত জঙ্গি মুফতি হান্নান ওরফে বোমা হান্নানসহ কমপক্ষে ২০-২৫ জঙ্গি পালিয়ে গিয়েছিল পাহাড়ি গুহা থেকে। তবে হাতেনাতে আটক ৪১ জঙ্গির বিরুদ্ধেই সে সময় চার্জশিট দেওয়া হয়।

সুত্র, কালেরকন্ঠ

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়োগ, পরীক্ষায় অনুপস্থিত থেকেও উত্তীর্ণ!

কক্সবাজারে স্বাস্থ্য সহকারীসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষাকে ঘিরে গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষা ...

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যশোরে ৮.৮ ডিগ্রি, টেকনাফে সর্বোচ্চ ৩১

শীতের তীব্রতা বাড়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে দেশের ...

১৩ রোহিঙ্গার জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি, ইউপি উদ্যোক্তার স্বামী কারাগারে

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ভুয়া সিল–স্বাক্ষর ব্যবহার করে ১৩ জন রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্মনিবন্ধন তৈরির ...