ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৬/০৩/২০২৪ ১০:৩০ এএম

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া এলাকার শুক্কুর আলী। ২০২০ সালে তিনি দুই কেজি গাঁজাসহ রেজুখাল এলাকা থেকে আটক হন। পরে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় বিচারাধীন অবস্থায় তিনি কারাগারে যান। দুই মাস জেলে থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে আঞ্চলিক ইয়াবা কারবারের অন্যতম এক হোতার সঙ্গে। এক সময় সেই সখ্য পরিণত হয় ব্যবসায়ী ঘনিষ্ঠতায়। গাঁজার চেয়ে ইয়াবার কারবারে লাভ বেশি—শুক্কুর আলী সেই ‘শিক্ষা’ পান ওই হোতার কাছ থেকে। এরপর কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে জড়িয়ে পড়েন ইয়াবার কারবারে। ওই চক্রের কাছ থেকেই তিনি প্রথম ২০ হাজার ইয়াবা পান। তাকে বলা হয়, ১০ হাজার পিসের পাইকারি দাম যা আসে, তা দিলেই হবে। বাকি ১০ হাজারের লাভ পুরোটাই তার।

কারাগারে গিয়েই মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার রাজা মিয়াও। গাঁজা সেবনে আসক্ত ছিলেন তিনি। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে একদিন ধরা পড়লে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের মাধ্যমে তাকে তিন মাসের জন্য জেলে পাঠানো হয়। আদালতে তিনি কথা দেন, কারাগার থেকে নিজেকে শুধরে ফিরবেন। আদালতও তাকে নতুন জীবনে ফেরানোর জন্য কম সাজা দিয়ে জেলে পাঠান। রাজা মিয়া জানান, জেলে যাওয়ার পর তার পরিচয় হয় মাদক ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বন্দিদের একটি গ্রুপের সঙ্গে। ক্রমেই বুঝতে পারেন তারা জেলে বসে জেলার মাদক নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করছেন।

রাজা মিয়া বলেন, জেলে ওই মাদক চক্র নতুন নতুন লোক টার্গেট করে এবং তাদের মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত করে থাকে। তাদের নজর থাকে ছোটখাটো মাদক মামলায় জেলে যাওয়া অপেক্ষাকৃত তরুণদের দিকে। প্রথমে তাদের মাদক কারবারের প্রস্তাব দেওয়া হয়। অধিকাংশই প্রস্তাব মেনে নেন। যারা মানেন না, তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কারবারে যুক্ত করা হয়। তিনি বলেন, তিন মাস জেল খেটে বের হওয়ার পর থেকেই মাদকের ওই নেটওয়ার্কের লোকজন তার পিছু নেয়। কয়েকবার সামনাসামনি, কয়েকবার টেলিফোনে তাকে কীভাবে কোথায় দেখা করে চালান নিতে হবে, সেই নির্দেশনা দেন। এরপর তিনি জড়িয়ে পড়েন মাদক কারবারে।

জানা যায়, কারাগারে যাওয়া বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ী নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিয়ম করেন; ব্যবসার নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন; ছোট কারবারিদের বড় ব্যবসায়ী হতে উৎসাহিত করেন। তারা বোঝান, কম দামি মাদকের ছোট চালানও পুলিশ ধরে, বড়টাও ধরে। তাহলে বড়টাই ভালো। এভাবেই এক সময় গাঁজা ব্যবসায়ীও হয়ে ওঠেন বড় মাদক কারবারি, সেখান থেকে হয়ে যান মাদক সম্রাট। এ ছাড়া কারাগারের ভেতরে থেকেই অনেক মাদক ব্যবসায়ী তাদের কারবার নিয়ন্ত্রণ করেন। কারাগারেও চলে মাদক গ্রহণ।

বাইরে থেকে সবাই জানেন কারাগার হচ্ছে সংশোধনাগার। যার মাধ্যমে অপরাধীরা নিজেদের অপরাধের রাস্তা থেকে ফিরে এসে নিজেদের করে তুলবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কারাগার থেকে বের হয়ে যেখানে একজন অপরাধীর অপরাধ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কথা, সেখানে কারাগার থেকেই তিনি বের হচ্ছেন আরও বড় অপরাধী হয়ে।

কারা কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, কারাগারে যত বন্দি রয়েছে, তার মধ্যে শতকরা ৩৫ জন মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। এর মধ্যে কেউ মাদকসেবী, কেউ কারবারি। এসব বন্দির বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিভিন্ন সময় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি এবং আদতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

কারাগারে মাদকের প্রবেশ ঠেকানো এবং মাদকসেবীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আনতে ২০১৬ সালে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল কারাগারেই তৈরি করা হবে মাদক নিরাময় কেন্দ্র। মাদকাসক্ত বন্দিদের যেন মানসিক বিকাশ হয় এবং তারা যেন পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন, সেজন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। দেশের সব কারাগারের কর্মকর্তাদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এসব কিছুই হয়নি এবং অবস্থারও পরিবর্তন ঘটেনি।

কারাগারে থাকা মাদকাসক্তদের চিকিৎসার জন্য মাদকাসক্ত কারাবন্দিদের জন্য হাসপাতাল তৈরিরও উদ্যোগ নিয়েছিল কারা কর্তৃপক্ষ। সে পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৫০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করা হয়। এক কারা কর্মকর্তা জানান, কারাগারে মাদকের ব্যবহারের কারণে এই উদ্যোগ তেমন সফল হয়নি। কারাগারে মাদক ঠেকানোর বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হলেও একটা পথ বন্ধ হলে অন্য পথ ব্যবহার শুরু করেন কারাগারে থাকা অপরাধীরা।

এদিকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কারাগারে থাকা মাদক কারবারিদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন তথ্য গ্রহণের কার্যক্রম শুরু করে। গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন কারাগারে সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চালায় ডিএনসি। তবে মাদক কারবারিদের শোধরাতে এত পদক্ষেপ নেওয়া হলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।

এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ কালবেলাকে বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে অবস্থার পরিবর্তনে আমরা কাজ শুরু করব। সুত্র: কালবেলা

পাঠকের মতামত

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথে ওভারপাস ফাঁকা, হাতিরা আসে না

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথে বন্যপ্রাণী রক্ষায় গড়ে তোলা হয়েছিল এশিয়ায় সর্বপ্রথম ‘এলিফ্যান্ট ওভারপাস’। উদ্দেশ্য ছিল– বন্যহাতির জীবন ...

রামুতে যুবলীগ নেতা আটক

রামুতে অপারেশন ডেভিল হান্টে যুবলীগ নেতা সরওয়ার কামালকে আটক করেছে রামু থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (১৩ ...