বিশেষ প্রতিনিধি::
কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরে অবস্থিত জামায়াত-শিবির ঘরনার বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্টান জমজম হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসার নামে রমরমা বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্বনামধন্য লেবাসের আড়ালে পৌরসভায় অবস্থিত জমজম হাসপাল নানা অনিয়ম-দূর্নীতির আকন্ঠে নিমজ্জিত রয়েছে। প্রাইভেট এই হাসপালটি উত্তর কক্সবাজারের সু-পরিচিত প্রতিষ্ঠান হিসাবে খ্যাতি পেলেও তার বাস্তব অবস্থা কাইদা ফলের মতো বলে ভূক্ত ভোগীরা জানিয়েছেন।
যে ভিত্তির উপর এই হাসপালটি দাড়িঁয়ে তাও খুব নড়বড়ে, তাসের ঘরের মতো! হাসপাতালের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এক সময়ের আলোচিত শিবির ক্যাডার ৯১সালে চকরিয়ার ইউএনও’র ওপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার অভিযুক্ত আসামি গোলাম কবিরের একক সিদ্বান্তে ভর্তি হওয়া রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের ঘটনায় গত একবছরে প্রতিষ্টানটির বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এখন জনমনে। একই সাথে হাসপাতালে চিকিৎসার পাশাপাশি সব ধরণের সেবা খাতে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য। হাসপাতালের নিজস্ব ফার্মেসীতে ওষুধ বিক্রিতেও চলছে চরম নৈরাজ্য। এতে করে বর্তমানে হাসপাতালে সুনাম ও নিরাপদ চিকিৎসা সেবা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের অসৎচারণ ও চিকিৎসকদের ভূল চিকিৎসার কারনে গত সাতমাসে শিশু, মহিলাসহ অন্তত ৮জন রোগী মারা গেছেন। এসব ঘটনায় হাসপাতালে একাধিকবার হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি রোগী নিহত হওয়ার ঘটনায় স্বজনদের পক্ষ থেকে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিকিৎসকসহ অন্তত ৯জনের বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়েছে আদালতে। অবশ্য হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা রোগীর স্বজনদের বিরুদ্ধে মামলা একটি মামলাও করেছে। পরে মোটা অঙ্কের দফারফার মাধ্যমে সম্প্রতি সময়ে মামলা গুলো নিস্পত্তি করেছে হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, চকরিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিসের পেছনে অবস্থিত জামায়াত শিবির ঘরনার বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্টান হাসপাতাল হাসপাতালটি প্রতিষ্টার পর টানা ১৫-২০বছর ধরে চিকিৎসা সেবায় রোগীদের মাঝে একটি নিরাপদ প্রতিষ্টান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তারপর থেকে এ হাসপাতালের সেবা ও সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল ভুমিকার কারনে ব্যবসায়িক উন্নতির মুখ দেখে প্রতিষ্টানটি। কয়েকবছরের ব্যবধানে হাসপাতালটি ১শ’ শয্যায় উন্নীত করা হয়। চিকিৎসার জন্য সংযুক্ত করা হয় উন্নত ও আধুনিকমানের সকল যন্ত্রপাতি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত দুইবছর আগে হঠাৎ করে হাসপাতালটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পর্দাপণ করেন এক সময়ের আলোচিত শিবির নেতা গোলাম কবির। এরপর বদলে যেতে থাকে হাসপাতালের সেবা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। বলতে গেলে সাবেক শিবির নেতা গোলাম কবির হাসপাতালটি পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে শুরু হয় নানা অঘটন। বিশেষ করে তাঁর অসৎচারণমুলক কথার্বাতার কারনে হাসপাতালে আগত রোগী ও তাদের স্বজনরা অতিষ্ট হয়ে উঠে। এরই মধ্যে রদবদল ঘটে হাসপাতালে চিকিৎসকের ক্ষেত্রে। পুরানো সব চিকিৎসককে বাদ দিয়ে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কবির এখানে যোগ করেন নতুন নতুন অদক্ষ একাধিক চিকিৎসককে। অভিযোগ উঠেছে, আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের মামলার খরচ যোগাতে কেন্দ্রীয় সিদ্বান্তের আলোকে কক্সবাজার থেকে বিপুল অঙ্কের টাকাও দিয়েছেন সাবেক শিবির নেতা গোলাম কবির। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বিষয়টি তদন্ত করলে উৎঘাটন করতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
স্থানীয়দের দাবি, এসব অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং জরুরী বিভাগে আগত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। ফলে অনভিজ্ঞ এসব চিকিৎসকদের ভূল চিকিৎসার কারনে বর্তমানে হাসপাতালটি রোগীর মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে চলছে। স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালের গেল সাতমাসে জমজম হাসপাতালে চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার কারনে নারী শিশুসহ অন্তত ৮জন রোগী মারা গেছেন। এসব ঘটনায় প্রতিকার চাইতে গেলে উল্টো হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কবিরের নির্দেশে তার অনুসারী কিছু উশৃঙ্খল কর্মচারী মারা যাওয়া রোগীর স্বজনদের উপর হামলা করেন। এতে ঘটেছে অনেক বিপত্তি। বিক্ষুদ্ধ হয়ে জনতা হাসপাতালে কয়েকদফা হামলা ও ভাঙচুর করেছে। কয়েকবার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কবিরকে ধরে উত্ত্যম মধ্যম দিয়েছে।
স্থানীয়রা দাবি করেন, গত রমজান মাসে উপজেলার পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের বাসিন্দা একব্যক্তি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু একদিন পর ওই ব্যক্তি চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসায় হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে রোগীর স্বজনদের বিরুদ্ধে উল্টো থানায় মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন হাসপাতালের এক কর্মকর্তা। পরে অবশ্য ওই মামলাটি আপোষ দেন হাসপাতালের লোকজন। অভিযোগ রয়েছে, এই রকম ঘটনা অহরহ ঘটছে এখন জমমজম হাসপাতালে।
স্থানীয় সুত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সর্বশেষ ৬ জুলাই জমজম হাসপাতালে শাহেনা বেগম (৪৫) নামের এক মহিলার মৃত্যু ঘটেছে চিকিৎসক আতাউর রহমানের ভুল চিকিৎসার কারনে। উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের জহির আহমদ পাড়ার মৃত আবুল বশরের স্ত্রী শাহেনা বেগম ঘটনার দিন সকাল ১১টায় বাড়ির আঙ্গিনায় শিম বীজ রোপন করেছিলেন। ওইসময় একটি বিষধর সাপ তার হাতে কামড় দেন। ওইসময় পরিবার সদস্য ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে জমজম হাসপাতালে ভর্তি করেন।
নিহত ওই মহিলার স্বজনদের দাবি, সাপে কাটা রোগীকে জমজম হাসপাতালে নিয়ে আসার সেখানে রোগীর অস্থিরতা বেড়ে গেলে চিকিৎসক চিকিৎসক আতাউর রহমান তাকে ঘুমের ইনজেকশন দেন। এরপর তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। এভাবে প্রায় ৩ ঘন্টা সময় অতিবাহিত হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, এরপর থেকে রোগীর কেবিনে চিকিৎসক আসেননি। একপযার্য়ে রোগীর মুখ থেকে লালা বের হলে তাৎক্ষনিক চিকিৎসা দেয়া ডাক্তার আতাউর রহমানকে ডাকতে যান স্বজনরা। কিন্তু নানা অজুহাত দেখিয়ে ওই চিকিৎসক রোগীকে দেখতে কেবিনে আসেনি। এতে স্বজনদের সন্দেহ হলে এরই এক পর্যায়ে বিকাল আড়াইটার দিকে হাসপাতালের অন্য চিকিৎসক রোগীকে দেখে মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এ ঘটনার পরপর নিহত শাহেনা বেগমের স্বজনদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে হাসপাতালের বেশকিছু আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসা এবং অবহেলার কারণেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
তবে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ও নিজের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে জমজম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কবির বলেন, জমজম হাসপাতালের চিকিৎসকরা ভর্তি হওয়া এবং জরুরী বিভাগে আগত রোগীকে সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা দিতে সবসময় সতেষ্ট থাকেন। সেখানে ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। কাজেই এখানে চিকিৎসায় ভুল বা অবহেলা করার অভিযোগটি সত্য নয়। তিনি গণমাধ্যমে পাঠানো লিখিত বিবৃতিতে বলেন, হাসপাতালের সুনাম বিনষ্টে একটি চক্র জড়িত রয়েছে। মুলত তাঁরা জমজম হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা এবং আমাকে জড়িয়ে এসব মিথ্যাচার করছে। তবে তাদের আনীত সব অভিযোগই অবান্তর এবং কল্পনাপ্রসুত।