শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার::
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে একসঙ্গে দু’শতাধিক প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে লাখো মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হয় সাগরতট। ১১ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকালে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ মিলনমেলা বসেছিল। বিগত দু’দিন মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মঙ্গলবার সৈকতের বালিয়াড়িতে সকল ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে সম্প্রীতির এক সেতু বন্ধন তৈরী হয়। একই সাথে ভক্ত, পূজার্থী ও দর্শনার্থী ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিপুল সংখ্যক পর্যটক বিজয়া দশমীর প্রতিমা বিসর্জনে সামিল হন। আর এ বন্ধনে সকলেই এক সুরে প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার। শেষ আরতী, ঢোলক বাদ্যির তালে তালে ‘মা দুর্গার জয়’ এই শ্লোগানে মুখরিত ছিল সাগরতট। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় মাতৃবিদায়ের বিষাদপূর্ণ অশ্রু অঞ্জলির মাধ্যমে সাগরের জলে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানান।
প্রতিমা বিসর্জনের আগে সৈকতের মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার এমপি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অপশক্তি মনে করেছিল কয়েকজন পুরোহিতকে হত্যা করলে দেশে সম্প্রীতি বিনষ্ট হবে। কিন্তু প্রতিমা বিসর্জনে কক্সবাজার সৈকতে সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতি তাদের ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণিত করেছে। দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তাই, এখানে দেশী কিংবা বিদেশী কোন নাগরিকের নিরাপত্তার ঝুঁকি নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সব সম্প্রদায়ের মানুষের নিরাপদ ঠিকানা। তার হাত ধরেই দেশে দারিদ্রদতা কমেছে, বেড়েছে সরকারি কর্মচারিদের সুযোগ সুবিধা ও প্রত্যন্তাঞ্চলে কমিউিনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক স্বাস্থ্য সেবা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করলে সম্প্রীতির এ দেশে জঙ্গীবাদের ঠাই কখনো হবে না।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাড. রনজিত দাশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, রামু-কক্সবাজার আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ, কক্সবাজার জেলা পরিষদ প্রশাসক মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, অ্যাড. তাপস রক্ষিত, ট্রাষ্টি অধ্যাপক চন্দন কান্তি দাশ, ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র এএসপি হোসাইন মোঃ রায়হান কাজেমী, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম রহিম উল্লাহ।
পরে পুরোহিতের মন্ত্র পাঠের পর ধারাবাহিক প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় সমুদ্রের উত্তাল ঢেউতে।
কক্সবাজারের টেকনাফ, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলা ছাড়া জেলার পাঁচ উপজেলাসহ প্রতিবেশী পার্বত্য জেলা বান্দরবান, লোহাগাড়া, নাইক্ষংছড়ি ও লামা থেকে প্রায় দু’শতাধিক প্রতিমা সৈকতে বিসর্জন দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা।
তিনি বলেন, সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারের সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার প্রত্যয় ঘোষণা হল। এতে সামিল হয়েছিল সকল ধর্মের মানুষ। মঙ্গলবার সকালেও ২৮৬ পূজামন্ডপে লাখো মানুষের ঢল নামে। ভক্ত, পূজারি মন্ডপগুলোতে ঘুরে ঘুরে মা দূর্গার প্রতি শেষ বার ভক্তি কামনা করেন।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রনজিত দাশ বলেন, সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারের সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার প্রত্যয় ঘোষণা করা হবে এখানে। এ অনুষ্ঠানে সব ধর্মে মানুষের শামিল হওয়ার আহবানও জানান তিনি। শেষে আরতী, ঢোলক বাদ্যির তালে তালে মা দুর্গা কি জয় এই শ্লোগানে মুখরিত থাকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।
অনুষ্ঠানে অতিথিদের সম্মামনা ক্রেস্ট তুলেদেন সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি দীপক দাশ ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা। এসময় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ নানান পেশাজীবি মানুষ ও পর্যটকরা উপস্থিত ছিলেন।