প্রকাশিত: ০৫/০২/২০১৭ ৪:৫৬ পিএম , আপডেট: ০৫/০২/২০১৭ ৪:৫৭ পিএম

আব্দুল কুদ্দুস, কক্সবাজার::
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় কলেজ কক্সবাজার সরকারি কলেজ। শিক্ষার্থী ১০ হাজার ২০৫ জন। বিপুলসংখ্যক এই শিক্ষার্থীকে পড়ানোর জন্য শিক্ষকের পদ আছে ৬৬টি। কিন্তু আছেন ৪৭ জন। অর্থাৎ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১: ২১৭। শিক্ষকেরা বলছেন, পুরোনো কাঠামো মানলেও এই মুহূর্তে কলেজে কমপক্ষে ৯৮ জন শিক্ষক থাকা দরকার। কিন্তু সরকারের কাছে বারবার শিক্ষক চেয়েও পাচ্ছে না কলেজটি। শিক্ষকসংকটের কারণে প্রতিদিনই শিক্ষকদের ক্লাস করাতে হিমশিম খেতে হয়। যেমন ইংরেজিতে শিক্ষক আছেন মাত্র তিনজন, গণিতে দুজন। গণিতের শিক্ষার্থী গিয়াস উদ্দিন বলেন, শিক্ষকসংকটের কারণে ক্লাস নিতে সমস্যা হয়। শুধু শিক্ষকসংকট নয়, আবাসন ও পরিবহনসংকট তীব্র। মোট শিক্ষার্থীর প্রায় অর্ধেক ছাত্র ও অর্ধেক ছাত্রী। কিন্তু ছাত্রদের জন্য নেই আবাসনের কোনো ব্যবস্থা। আর ২৬০ জন ছাত্রী থাকার জন্য আছে পৃথক দুটি চারতলা ছাত্রীনিবাস। নেই মিলনায়তন ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। গত বৃহস্পতিবার কলেজটিতে গিয়ে এমন আরও তথ্য পাওয়া গেছে। কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের লেখাপড়া ও ফলাফল ভালো হলেও আছে সমস্যার পাহাড়। দুর্গম এলাকার গরিব ছাত্রদের জন্য ২০০ আসনের একটি পাঁচতলা ভবন নির্মাণের জন্য কয়েক বছর ধরে লেখালেখি হচ্ছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ ও শ্রেণিকেক্ষর সংকট দূর করতে পাঁচতলাবিশিষ্ট পৃথক দুটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে অনেক আগে। এ ছাড়া শিক্ষকদের থাকার জন্য একটি ডরমিটরি, ক্যাম্পাসে একটি শহীদ মিনার ও মিলনায়তন দরকার। ১৯৬২ সালে প্রায় ১৮ দশমিক ৭৪ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত কলেজ ক্যাম্পাসটি সবুজে ঘেরা। ৪৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কলেজটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৯৮০ সালে কলেজটি জাতীয়করণ হয়। এখন উচ্চমাধ্যমিক ছাড়াও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে শিক্ষার্থী পড়ানো হয়। ১০টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও চারটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। আরও কয়েকটি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তবে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর মধ্যে শুধু উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও গণিতে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু আছে। পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স নেই। শিক্ষার্থী কাউসার জাহান বলেন, কলেজে প্রাণিবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স না থাকায় এই কলেজের বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের এইচএসসির পর বাধ্য হয়ে বাণিজ্য কিংবা অন্য বিভাগে যেতে হচ্ছে। অধ্যক্ষও বলেন, বিজ্ঞানের এসব বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালুর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে ২০১৩ সালে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। ফলে জেলায় বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। আবাসন ও পরিবহন সমস্যা বিজ্ঞান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সফিকা ইয়াছমিন বলেন, আবাসন সমস্যার কারণে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন পড়াশোনার জন্য তাঁকে মহেশখালী থেকে কলেজে আসা–যাওয়া করতে হচ্ছে। কারণ, শহরে আত্মীয়স্বজন নেই। টেকনাফ থেকে আসা ছাত্র মনজুর আলম বলেন, ১০০ কিলোমিটার দূর থেকে কলেজে আসা–যাওয়ার বিপরীতে প্রতিদিন খরচ হচ্ছে প্রায় ৩০০ টাকা। অথচ ছাত্রদের জন্য কোনো ছাত্রাবাস নেই। বাণিজ্যের একটি বিষয়ের স্নাতক (সম্মান) স্তরের শিক্ষার্থী ফারিহা বলেন, এই কলেজে জেলার টেকনাফ, উখিয়া, সাগরদ্বীপ মহেশখালী, কুতুবদিয়া উপজেলা ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলার শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করছেন। কিন্তু কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত পরিবহন নেই। ১৯৯১ সালে ইউএনএইচসিআর একটি চেয়ার কোচ দান করলেও সেটিও এখন অচল। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বাস উপহার দিলেও সেটি কেবল শহরের মধ্যে চলাচল করে। ইতিবাচক দিক কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানালেন, সমস্যা থাকলেও কলেজের ফলাফল ভালো হচ্ছে। গত বছরও এইচএসসিতে পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষাসমূহে প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করছেন। তবে এই ভালো ফলের পেছনে কলেজের পাশাপাশি প্রাইভেট ও কোচিং বড় ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া ওই জেলার তুলনামূলক ভালো ফল করা শিক্ষার্থীরা এই কলেজে ভর্তি হন—এটাও ভালো ফলের একটি কারণ। সুত্র প্রথম আলো

পাঠকের মতামত

র‍্যাগ ডে’র পরিবর্তে নসীহা প্রোগ্রাম করে প্রশংসায় ভাসছে শিক্ষার্থীরা

সম্প্রতি দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদায় অনুষ্ঠানে নাচ-গানের মাধ্যমে র‍্যাগ ডে পালনের এক নতুন কালচার চালু ...

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হলেন কক্সবাজারের সন্তান রেজাউল

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের নতুন চেয়রাম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন রেজাউল করিম। মঙ্গলবার (১৪ মে) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ...