প্রকাশিত: ০৪/০৬/২০১৭ ৯:০৫ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:০২ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
কক্সবাজার বিমানবন্দরে বর্তমানে ‘ড্যাস-৮’ ধরনের মাঝারি আকৃতির বিমান চলাচল করে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত হলেও এই বিমানবন্দরে বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআরসহ ভারী বড় আকৃতির বিমান ওঠা-নামা করতে পারবে। সাধারণত বোয়িং বিমানগুলোর যাত্রী ধারণক্ষমতা সাড়ে তিনশ থেকে সাড়ে চারশ।
বিশ্বের প্রায় সকল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাধারণত শহরের উপকণ্ঠে হয়ে থাকে। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, শহরের নাগরিক জীবনে পরোক্ষ প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে ভারী বিমানের অবতরণ এবং উড্ডয়নকালে আশপাশের বিশাল এলাকা জুড়ে বিকট শব্দ ও কাঁপনের সৃষ্টি হয়। যা এক ধরনের বিরূপ পরিবেশের সৃষ্টি করে বলে সচেতন মহল মনে করেন।
উদারহরণ হিসেবে তারা বলছেন, ঢাকার পুরাতন বিমানবন্দর ছিলো তেজগাঁওয়ে। পরবর্তীতে ঢাকা শহরের আয়তন বেড়ে যাওয়ায় এবং ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে পড়ায় আট কিলোমিটার দূরে বর্তমান অবস্থানে সরিয়ে নেয়া হয়।
কক্সবাজার শহর সংলগ্ন বিমানবন্দরে ভারী বিমান চলাচলে জনস্বাস্থ্যে এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা? এমন প্রশ্নে, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য তার কাছে নেই। তদুপরি তেমন কিছু হলে, আগে কেনো চিন্তা করা হয়নি- বলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন।
জানা গেছে, মানুষের সর্বোচ্চ সহনশীল শব্দের মাত্রা ৫৫ ডেসিবেল।
এদিকে ইংল্যান্ডে এক গবেষণা বলা হয়েছে, ভারী বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নের পথে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৬৩ ডেসিবেলেরও বেশী মাত্রার শব্দ সৃষ্টি করে। এছাড়া আশপাশের এলাকাজুড়ে কম্পন অনুভূত হয়ে থাকে। এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়মিত হয়ে থাকলে দু’ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় বলে চিকিৎসকেরা বলছেন। প্রথমত, উচ্চশব্দ তরঙ্গের কারণে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগজনিত সমস্যা দেখা দেয়। দ্বিতীয়ত, ঘুমে ব্যাঘাত ঘটা, বিশেষ করে শিশু-বৃদ্ধ ও রোগীদের ক্ষেত্রে।
এদিকে কক্সবাজারের সচেতন মহল মনে করেন, খুরুশকূলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করা হলে, এই প্রশ্নটি দেখা দিতো না। সম্প্রতি এক আলোচনায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল ফোরকান আহমদও উল্লেখ করেছেন, খুরুশকূলেই উপযুক্ত হতো কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সাধন কুমার মোহন্তের মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, বোয়িং বিমানের অবতরণ ও উড্ডয়নকালে যে শব্দ হয় এবং কম্পন সৃষ্টি হয়ে থাকে তা আমাদের দেশের মতো শব্দবহুল দেশে সহনীয়। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশে অনেক আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে। বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক বলেন, ভবিষ্যতে যদি সমস্যা বড়ো হয় তাহলে বিমানবন্দর অন্যত্র সরিয়ে নেয়া যেতে পারে।
জানা গেছে, রানওয়ে সম্প্রসারণের পাশাপাশি ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দূরত্ব পরিমাপক সরঞ্জাম, ডপলার ওমনি ডিরেকশন রেঞ্জ, অগ্নিনির্বাপক যান ক্রয় ও রানওয়ের ধারণক্ষমতাও বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ অবতরণ ব্যবস্থা ও স্বয়ংক্রিয় মেটিওরোলজিক্যাল পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে আধুনিক টার্মিনাল ভবন, ট্যাক্সিওয়ে, অ্যাপ্রোন ও বোর্ডিং ব্রিজসহ লাইটিং ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার থেকে পিক আওয়ারে একসঙ্গে ৮-১০টি উড়োজাহাজ ওঠানামা করতে পারবে।
উল্লেখ্য, ৬ই মে ২০১৭ কক্সবাজার বিমানবন্দরে প্রাধানমন্ত্রীকে নিয়ে নামলো বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ। সুপরিসর বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজে চড়ে কক্সবাজার পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে দেশের প্রধান পর্যটন নগরীতে বড় আকারের উড়োজাহাজ চলাচলের সূচনা হলো। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার আগে এটিই প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট।
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়া হয় ২০০৯ সালে। ওই বছর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন হয় ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি। এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ। এর মধ্যে কেবল রানওয়ের দৈর্ঘ্য বেড়েছে আড়াই হাজার ফুট।এতে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের ১৬২ আসনের উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণের সক্ষমতা অর্জন করেছে বিমানবন্দরটি।
কাজ শেষ হলে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৯ হাজার ফুট। বর্তমানে ওই রানওয়ের দৈর্ঘ্য আছে ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট। আর রানওয়ের প্রস্থ ১৫০ ফুট থেকে বাড়িয়ে ২০০ ফুট করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথম পর্বের কাজ সম্পন্ন । অভ্যন্তরীণ এ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করতে কাজ চলছে। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তখন বড় উড়োজাহাজও উড্ডয়ন-অবতরণ করতে পারবে।

পাঠকের মতামত