প্রকাশিত: ১৭/০৭/২০২১ ৮:০৪ এএম

ইমাম খাইর::

কক্সবাজার শহরের ভয়ংকর কিলার ও সন্ত্রাসী আশরাফ আলী ওরফে আশু আলী (২৭) র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে।

শনিবার (১৭ জুলাই) ভোরে শহরের ৬ নং ওয়ার্ডের সাহিত্যিকা পল্লী বড়বিল মাঠে লাশটি দেখতে পায় স্থানীয়রা।

সে বিজিবি ক্যাম্প ফরেস্ট অফিস পাড়ার জাফর আলমের ছেলে।

সাহিত্যিকা পল্লী ও সমিতি বাজারের মাঝামাঝি আশু আলী বাহিনীর অভয়ারণ্য।

তার বাহিনীর প্রধান আমির খান ২০১৯ সালে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায়।

অবশেষে সেকেন্ড ইন কমান্ড আশরাফ আলী ওরফে আশু আলীও একই পথের পথিক হলো। এখবরে স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।

ফিরে দেখা:
২০১৭ সালে কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লী এলাকার শরাফত আলীর ছেলে আবদুল কাদের বাধা দিতে গিয়ে তার একটি হাত সন্ত্রাসীর ধারালো অস্ত্রের কোপে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এসব ঘটনার হোতা ছিল আশরাফ আলী ওরফে আশু আলী। আর পঙ্গুত্ববরণ করতে হয় আবদুল কাদেরকে।
পরের বছর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিজিবি ক্যাম্প ফরেস্ট অফিসের পেছনে কথা-কাটাকাটির জের ধরে আশরাফ আলী, আমির খান ও সরওয়াররা স্থানীয় মৃত আবদুল মোনাফের ছেলে বাদশার পা কেটে দেয়। ২০১৯ সালের দিকে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায় শহরের শীর্ষ অপরাধী আমির খান।
২০২০ সালের জুলাইয়ের দিকে শহরের সাবমেরিন এলাকায় বোনের বাসা থেকে বাবুর্চি হেলালকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে আশু আলী। হেলাল উদ্দিন বিজিবি ক্যাম্প এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে।
এরপর একই সালের সেপ্টেম্বরের দিকে রাজমিস্ত্রি শফিউল্লাহকে কুপিয়ে হত্যা করে আশু আলী ও সাদ্দাম গ্যাং। শফিউল্লাহ বিজিবি ক্যাম্প এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে।
২০২০ সালের ২২ নভেম্বর কক্সবাজার বাস টার্মিনাস্থল বিএডিসির খামার-সংলগ্ন সড়কে আশু আলীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন আনোয়ার হোছাইন। ঘটনার পরপরই আশু আলীর অন্যতম সহযোগী মৃত আবুল কালামের ছেলে সালমানসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। কিন্তু অধরা থাকে আশু আলী।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় মৃত মো. ইয়াছিনের ছেলে রুবেলকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে আশু আলী ও তার সক্রিয় সদস্যরা। ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি কক্সবাজার বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় দিনদুপুরে জান্নাতুল ফেরদৌস কেমি নামের এক কলেজছাত্রীকে ছুরিকাঘাতে আহত করে তার মোবাইল ফোন ছিনতাই করে ছটকে পড়ে আশু আলী চক্রের সদস্যরা।
২০২১ সালের জানুয়ারির দিকে বিজিবি ক্যাম্পের দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লী সমাজ কমিটির ধর্ম ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সাবুকে গুলি করে হত্যা করে আশু আলী।
আশু আলীর উত্থান : কক্সবাজার শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম চৌধুরী পাড়ার ফরেস্ট অফিসের পেছনে জাফর আলমের ছেলে আশরাফ আলী ওরফে আশু আলী। বর্তমান বয়স প্রায় ২৪ বছর। ১৬ বছর বয়সে আমিন খান (বন্দুকযুদ্ধে নিহত) গ্রুপের সক্রিয় সদস্য হিসেবে চুরি-ছিনতাই শুরু করে সে। আমির খানের ছিল প্রায় ১২ জনের একটি ছিনতাইকারী গ্রুপ। ছিনতাইয়ের পাশাপাশি একাধিক হত্যাকা-ের হোতাও তারা। পরে আমির খানের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবেও কাজ করত আশু আলী। কক্সবাজার শহরের বেশির ভাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটত তাদের হাতে। গত তিন বছরে আশু আলীর হাতে খুন হন প্রায় পাঁচজন। ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে শতাধিক। আহত হয়েছে হিসাবের বাইরে। এ ছাড়া ডাকাতি, অপহরণ ও চাঁদা আদায় রয়েছে অহরহ। বর্তমানে আশু আলীর গ্রুপে রয়েছে ৭ থেকে ৮ জন সন্ত্রাসী।
আশু আলীর সঙ্গে সাদ্দাম বাহিনীর প্রধান সাদ্দামের সঙ্গে রয়েছে গভীর সমন্বয়। সাদ্দাম হোসেন (২৮) শহরের রুমালিয়ারছড়া সমিতি বাজার এলাকার মৃত সালেহ আহমদের ছেলে। সাদ্দামের নামেও তিনটি হত্যা মামলাসহ ডজনখানেক মামলা রয়েছে। তার গ্রুপেও রয়েছে ৮ থেকে ১০ জন সক্রিয় সদস্য।
তাদের আস্তানা : কক্সবাজার শহরের বিশাল একটি পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকা হলো রুমালিয়ারছড়ার সমিতি বাজার, সিকদার বাজার, কক্সবাজার জেল কারাগারের পেছনের এলাকা, পল্লানিয়া কাটা, আমতলী পাহাড়ি এলাকা, সাতিহিত্যা পল্লীর ভেতরে, বিজিবি ক্যাম্পের পশ্চিমে ও আলীর জাহান গরুর হালদা এলাকা। এসব পাহাড়ি এলাকায় আশু আলী ও সাদ্দাম গ্রুপের আস্তানা।
দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া সমিতি বাজারে মামুনের একটি দোকান রয়েছে। মামুন দোকান থেকে আশু আলী ও সাদ্দাম বাহিনীর জন্য নিয়মিত খাবার সরবরাহ দেন তাদের আস্তানায়। এতে সহযোগিতা করেন সমিতি বাজার এলাকার আবদুল মাবুদের ছেলে তারেক। এমনকি অস্ত্রও সরবরাহ দেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ওই পাহাড়ি এলাকার বিশেষ করে জেল কারাগারের পেছনের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি তাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে কাজ করছে।
আশু আলী ও সাদ্দাম বাহিনীর কাছে সবাই অসহায়। তাদের হাতে জিম্মি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। কারো বাড়িতে মেহমান এলে ছিনতাইয়ের শিকার হয়। ঘর নির্মাণ করতে বা জায়গা ক্রয়-বিক্রয় করলে তাদের দিতে হয় নিয়মিত চাঁদা। এর বিরুদ্ধে কথা বলায় নিহত হয়েছে অনেকজন। আহত হয়ে অনেকেই এখন পঙ্গু। ভয়ে কেউ কথা বলে না। থানায় মামলা ও অভিযোগ রয়েছে ডজনের ওপর। শত শত ভুক্তভোগী অভিযোগ বা মামলাও করতে পারেনি। রাতের বেলায় তারা এলাকায় বিচরণ করে আর দিনের বেলায় ঘুমায়। একেক দিন একেক ঘরে তারা ঘুমায়। পাহারা দেন মহিলারা।
কয়েকজন পুলিশ সদস্য বলেন, তাদের গ্রেপ্তার করতে বেশ কয়েকবার অভিযানও চালানো হয়েছিল, কিন্তু দুর্গম এলাকা হওয়ায় সহজেই পালিয়ে যায় তারা। এলাকার চিহ্নিত কয়েক ব্যক্তি তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, কক্সবাজার শহরের ক্রাইমজোন হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া এলাকা, সমিতি বাজার, সিকদার বাজার ও জেল কারাগারের পেছনের এলাকা আশু আলী ও সাদ্দাম বাহিনীর রাজত্ব। এসব এলাকায় নিয়মিত হত্যা, ছিনতাই, অপহরণ, ডাকাতি, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের অপরাধ কর্মকা- চলে আসছে। এসব প্রতিরোধ করতে সবার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত দেড় বছর আগে দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া এলাকায় করা হয় কক্সবাজার শহর পুলিশ-ফাঁড়ি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আশরাফ আলী ওরফে আশু আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, ছিনতাই, অস্ত্র, ডাকাতি প্রস্তুতিসহ প্রায় ১২টি মামলা রয়েছে এবং সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, ডাকাতির প্রস্তুতিসহ প্রায় ৯টি মামলা রয়েছে।

পাঠকের মতামত

খেলাভিত্তিক শিক্ষায় ব্র্যাকের তথ্য বিনিময় অনুষ্ঠান

শিশুদের খেলাভিত্তিক শেখা, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ও মনোসামাজিক বিকাশ নিশ্চিতে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ...

১২ ফেব্রুয়ারি ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া ওয়াজ মাহফিল নিষিদ্ধ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ধর্মীয় প্রচার কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। ...

জামিন বাতিল, মহেশখালীর তোফায়েল হত্যা মামলায় ৭ জন কারাগারে

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ার মোহাম্মদ শাহ ঘোনা গ্রামের বাসিন্দা জুলাই অভ্যুথানে নিহত শহীদ তানভীর ছিদ্দিকীর ...

ফেসবুক পোস্ট দিয়ে ছাত্রশক্তি নেত্রীর পদত্যাগ‘জুলাইয়ে থানার বাইক চোরের কাছে অনেক সময় হেরে যাই’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্রশক্তি কক্সবাজার জেলা শাখার সদ্য ঘোষিত নতুন কমিটি’র ...