প্রকাশিত: ১৬/০৩/২০১৭ ১০:৫৮ এএম

তৌহিদুল ইসলাম:
বছরের শুরুতে র‌্যাব-৭ এর কক্সবাজার ক্যাম্পের সদস্যরা চারটি বড় ধরণের সফল অভিযান করেছে। এইসব অভিযানের দিয়ে বড় ধরণের নাশকতার হাত থেকে কক্সবাজারবাসীকে বাঁচিয়ে দিলো র‌্যাব- এমনটি মনে করছেন সচেতন মহল। র‌্যাবের এই সফল অভিযানের ফলে স্বস্তি বোধ করছে সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে আতঙ্কে রয়েছে অপরাধীরা।
জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ জাতীয় স্বাধীনতা দিবস প্যারেডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) আত্মপ্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠানগ্ন থেকে অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বাংলাদেশের এই এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। তারই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৭ এর সিপিসি-২ (কক্সবাজার ক্যাম্প) চলতি বছরের জানুয়ারিতে কক্সবাজারে ৩টি অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে উদ্ধার করে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম এবং আটক করে দাগী অপরাধীদের। এতে করে জনমনে স্বস্তি ও অপরাধীদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
র‌্যাব সূত্র মতে, পৃথক ২টি অভিযানে র‌্যাব-৭ সিপিসি২ চাঞ্চ্যলকর টেকনাফের নয়াপাড়া আনসার ক্যাম্পের অস্ত্র লুটের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী নুরুল আলমকে গ্রেফতার করে এবং উদ্ধার করে আনসার ক্যাম্প থেকে লুটকৃত সব অস্ত্র । গত ১৭ জানুয়ারি খুরস্কুুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে পাইপ বোমা তৈরীর ৭৮ টি লোহার কেচিং সহ বোমা তৈরীর সরঞ্জাম। জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখ মহেশখালীর পাহাড়ি এলাকায় অস্ত্র কারখানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান অস্ত্র, গুলি এবং অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জামসহ ২ জন অস্ত্র তৈরীর কারিগরকে গ্রেফতার করে র‌্যাব সদস্যরা।
র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া আনসার ক্যাম্পে হামলা দেশের একটি বহুল আলোচিত ঘটনা। এই হামলায় সন্ত্রাসীরা একজন আনসার সদস্যকে গুলি করে হত্যা করে এবং লুট করে ১১টি অস্ত্র এবং ৬৭০ রাউন্ড গুলি। এই ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত কুতুপালং এলাকা থেকে ৫ জনকে আটক করে র‌্যাব-৭ সিপিসি২। আটকৃতদের তথ্য মতে ৯-১০ জানুয়ারি র‌্যাব অভিযান চালিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের পুরান পাড়া এলাকাস্থ দুইটি স্থান থেকে নয়াপাড়া আনসার ক্যাম্পের লুটকৃত ১১টি অস্ত্রের মধ্যে ৫টি অস্ত্র ( ১টি ৭.৬২ মিঃমিঃ এসএমজি বডি নম্বর-১৭১৩৮১৩৫, ১টি ৭.৬২ মিঃমিঃ রাইফেল বডি নম্বর এ-১০১২৭২৫৩ এবং ৩টি ৭.৬২ মিঃমিঃ এম-২ রাইফেল বডি নম্বর যথাক্রমে- ০৩৬৭৭, ০২৫০৭, ০৫৭৮৩) এবং লুটকৃত ৬৭০ রাউন্ড গুলির মধ্যে ১৮৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। উক্ত অভিযানে অস্ত্র লুটের সঙ্গে জড়িত আরও ৩ জনকে আটক করে র‌্যাব। এছাড়াও ১ টি বিদেশী ৭.৬২ মিঃ মিঃ পিস্তল, ১ টি বন্দুক, ৩ টি ওয়ান শুটারগান এবং বিভিন্ন প্রকার ২৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে র‌্যাব গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আনসার ক্যাম্পের অস্ত্র লুটের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও আনসার ক্যাম্প কমান্ডার পিসি আলী হোসেনকে গুলি করে হত্যাকারী নুরুল আলম (২৮) কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প থেকে আটক করে । তার দেওয়া তথ্য মতে র‌্যাব গত ০১ মার্চ নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু পশ্চিমকুল এলাকা হতে আনসার ক্যাম্প থেকে লুটকৃত অবশিষ্ট ০৬টি অস্ত্র ( ০১টি ৭.৬২ মিঃমিঃ এসএমজি বডি নং-১০১৩৬৫৬৮, ১ টি ৭.৬২ মিঃমিঃ এম-২ রাইফেল বডি নং-০১৩৩৯, ৪টি ৭.৬২ মিঃমিঃ চায়না রাইফেল বডি নং যথাক্রমে- এ ৩৩৩৭৪, ১০১২১৫৩২, এ১২০০৬, ২২০০৮২৭৯) সহ ০২টি ম্যাগাজিন এবং ০৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে।
কক্সবাজার জেলা অপরাধ জোন খ্যাত মহেশখালী উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প। তাই এই এলাকার শৃংখলা রখায় র‌্যাব-৭ বদ্ধপরিকর। চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি র‌্যাব-৭ মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালীর পাহাড়তলী এলাকায় অস্ত্র কারখানায় অভিযান চালিয়ে ২২টি দেশীয় অস্ত্র (১৪ টি একনলা বন্দুক, ৬ টি ওয়ান শুটার গান, ১ টি থ্রী কোয়ার্টার বন্দুক, ১ টি দেশীয় রাইফেল) ও ২২ রাউন্ড গুলি (১৭ রাউন্ড শর্টগানের তাজা গুলি, ৪ রাউন্ড ৩০৩ রাইফেলের গুলি, ১ রাউন্ড শর্টগানের গুলির খলি খোসা) এবং ৩৩ টি বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জামা (১ টি ড্রিল মেশিন, ৩ টি বন্দুক তৈরীর পাইপ, ১৫ টি হেসকু বে¬ড , ৫টি রেত, ২টি প¬াস, ১টি এয়ার মেশিন, ৫টি ছেনা, ১টি সান পাথর ইত্যাদি) উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় মোঃ আব্দুল মাবুদ ও মোঃ আবু তাহের নামে দুইজন কারিগরকে। এই কারখানায় তৈরি অস্ত্র দেশে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয় বলে জানাযায়।
অন্যদিকে গত ১৭ জানুয়ারি খুরুশকুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা যোগে নাশকতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বোমা তৈরীর সরঞ্জাম বহন করে নিয়ে যাওয়ার সময় র‌্যাব দুই জনকে আটক করে। উদ্ধার করা হয় পাইপ বোমা তৈরি করার জন্য ৭৮ টি লোহার কেচিং এবং বিস্ফোরক দ্রব্যের নাম সম্বলিত ১ টি তালিকা। তালিকাটি দেখে এবং গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তালিকায় উল্লেখিত বিস্ফোরক দ্রব্যেগুলি দিয়ে তাদের নাশকতা করার পরিকলল্পনা ছিলো। এছাড়াও র‌্যাব-৭ বিপুল পরিমান মাদক দ্রব্যসহ অসংখ্য মাদক ব্যবাসীয়দের আটক করেছে।
সাধারণ লোকজন বলছেন, ২০১৭ সালের এই সব উল্ল্যেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ অভিযানের ফলে পর্যটন রাজধানী হিসেবে খ্যাত কক্সবাজারকে বড় ধরনের নাশকাতার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল র‌্যাব।
জানতে চাইলে র‌্যাব-৭ এর কক্সাবাজার ক্যাম্পের কোম্পানী অধিনায়ক মেজর রুহুল আমিন বলেন, ‘ র‌্যাব কোন অপধাধ সংঘটিত হওয়ার আগে র‌্যাবের ঘোয়েন্দা নজরদারি মাধ্যমে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করে। পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃংখল রাখার জন্য অপাধারীদের বিরোধে র‌্যাবে অভিযান অব্যাহত থাকবে। সিবিএন

পাঠকের মতামত

জামিনে মুক্তি পেলেন উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন, গ্রামে আনন্দের বন্যা

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মঙ্গলবার ...

কক্সবাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প থেকে ৪৪০৯ জনের নাম বাতিল

কক্সবাজারে জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্পে (খুরুশকুল) পুনর্বাসনের চার হাজার ৪০৯ জনের তালিকা বাতিল করা হয়েছে। ...

জনগণ সচেতন হলে মব-চাঁদাবাজি বন্ধ হবে: কক্সবাজারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘জনগণ সচেতন হলে মব ভায়োলেন্স ...