ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৭/০৩/২০২৪ ৩:৫৭ এএম

# আইকনিক স্টেশনে ৩ মাসে ১০ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি

কক্সবাজার-ঢাকা রেলযাত্রা শুরু হয়েছে মাত্র ৩ মাস। এই তিন মাসেই শুধুমাত্র কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে ১০ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে ৬ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হলেও ফেব্রুয়ারি মাসে বিক্রি হয়েছে ৪ কোটি টাকার টিকিট।
এদিকে বিশ^মানের নান্দনিক আইকনিক রেলস্টেশন দেখে যাত্রীরা অবাক হলেও পূর্ণাঙ্গভাবে সুযোগ-সুবিধা চালু না হওয়ায় হতাশ অনেকেই। তবে ব্যবসায়ীদের আশা, সারাদেশের সঙ্গে রেল নের্টওয়াকে যুক্ত হওয়ায় কক্সবাজারে শিল্প কারখানা গড়ে ওঠার পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের আমূল পরিবর্তন ঘটবে। একই সঙ্গে তৈরি হয়েছে অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা। তবে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ট্রেনের গতি, যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি আয়ও বাড়বে বলে জানিয়েছেন স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন, যার সামনে মূল আকর্ষণ ঝিনুকের ফোয়ারা। চারপাশে পড়ছে স্বচ্ছ জলরাশি। এর মধ্যেই আসছে ট্রেন। ঝকঝকে আধুনিক এই স্টেশন অনেকটা উন্নত বিশ্বের বিমানবন্দরের মতো।

দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন; যা কক্সবাজারবাসির কাছে ছিল স্বপ্নের মত। নানা চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে শেষমেষ এই রেললাইনের কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের নভেম্বর। আর ১১ নভেম্বর এই রেলপথের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পহেলা ডিসেম্বর ২০২৩, বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে শুরু হয় ট্রেন চলাচল। প্রথমে কক্সবাজার এক্সপ্রেস যাত্রা করলেও যাত্রী চাহিদা তুঙ্গে হওয়ায় বাড়ানো হয় আরও একটি ট্রেন পর্যটক এক্সপ্রেস। কিন্তু তারপরও যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না ট্রেনের টিকিট। প্রতিনিয়ত ঢাকা-কক্সবাজার রুটে বাড়বে যাত্রী, যা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন; যেখানে টিকিট কাউন্টার, অভ্যর্থনা কক্ষ, লকার, শপিংমল, রেস্তোরা, তারকামানের হোটেল, মসজিদ, চলন্ত সিঁড়িসহ রয়েছে বিশ^মানের সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু ট্রেন চলাচলের ৩ মাস পার হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি এসব সুযোগ-সুবিধা। শুধুমাত্র একটি কক্ষে টিকিট কাউন্টার চালু করে কোন রকম চলছে টিকিট বিক্রি।
চট্টগ্রামের যাত্রী ইব্রাহীম বলেন, বর্তমানে ট্রেনের সংখ্যা হচ্ছে মাত্র দুটি। যার কারণে এখন পর্যাপ্ত টিকিট পাওয়া যায় না। সেটা চট্টগ্রাম থেকে হোক বা ঢাকা থেকেই হোক। আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, ট্রেন দুইটা হওয়াতে চট্টগ্রাম থেকে আমাদের নির্ধারিত সময়ে পাচ্ছি না। একটা ছাড়ে হচ্ছে ভোর চারটার সময়। যার কারণে হয় কি কেউ যদি হোটেলে উঠতে চাই, তখন সকাল ৭টা বা ৮টার সময় কক্সবাজারে নামে। তখন হোটেলের চেক ইনের সময় ১২ টা। সেক্ষেত্রে বেশ সমস্যা হয়ে যায়। আমি আশা করছি, আরো যদি কিছু ট্রেন বাড়ে সেক্ষেত্রে স্টেশনটা আরেকটু লোকারণ্য হবে। একই সঙ্গে চট্টগ্রামবাসী আমরা যারা আছি আমাদের জন্যও সুবিধা হবে।
সাকিবুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ট্রেন চালু হবে আমরা চিন্তাও করতে পারিনি। এখন স্বপ্নটা বাস্তবায়ন হয়েছে আর সবচেয়ে বড় কথা কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশন। ট্রেনের মাধ্যমে যাত্রাটা খুব আরামদায়ক হয়েছে এবং সময়ও সাশ্রয় হয়েছে। এটা সবার জন্য উপকার হয়েছে।
কুমিল্লার বাসিন্দা রাশেদ বলেন, আইকনিক স্টেশনের ভেতরে এখনো সবগুলো টিকিট কাউন্টার চালু হয়নি। স্টেশনের ভেতরে বসার কোনো আসনও নেই। স্টেশনের বাইরের দৃশ্য খুবই সুন্দর এবং আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু বাইরের পরিবেশগত এবং আশেপাশে যে ময়লাগুলো আছে এগুলোর জন্য একটু খারাপ লাগছে।
দিনাজপুরের বাসিন্দা রাইয়ান আহমেদ বলেন; আইকনিক স্টেশনের যে সুবিধাগুলি পাওয়ার কথা, যেমন রাতে থাকার জন্য যে সুবিধা, লকার, টিকিটের সুবিধা এখনো পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে যদি এইদিকটা সুদৃষ্টিতে দেখা হয় তাহলে জনগণের জন্য খুবই ভালো হবে।
স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও কক্সবাজারে গড়ে ওঠেনি কোন ধরণের শিল্প কারখানা। নামে মাত্র রয়েছে কিছু লবণ মিল ও চিংড়ি হ্যাচারি। তবে, শিল্প বিকাশে এবার আশার আলো দেখাচ্ছে কক্সবাজার রেলপথ। এর মধ্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা।
কক্সবাজারস্থ হোটেল কক্স টুডের ব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, কক্সবাজারে ট্রেন চালু হবার ফলে এখানকার পর্যটন শিল্প উপকৃত হচ্ছে। ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পর্যটন শিল্প। এই রেল লাইনের কারণে আগামী বিদেশি পর্যটকদের গন্তব্য হবে কক্সবাজার।
২০১০ সালে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প নেয়া হয়। তবে ভূরাজনৈতিক জটিলতায় কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটারের কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। এই রেলপথ উদ্বোধনের পর নতুন স্বপ্ন আগামীতে বাংলাদেশের ঘুমধুম থেকে মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং পৌঁছাবে তুরস্ক থেকে আসা আন্তর্জাতিক রেল সংযোগ।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, চীনের কুনমিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে এ রেললাইন। এতে দেশের রেল ও অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
এদিকে আগামী জুনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে শেষ হচ্ছে আইকনিক স্টেশনের কাজ। তারপর বাংলাদেশ রেলওয়ে তৃতীয় পক্ষকে হস্তান্তর করে স্টেশনের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু করবে বলে জানিয়েছে নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠান।
দোহাজারি-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্পের (আইকনিক স্টেশন বিল্ডিং) ম্যানেজার মো. আব্দুল জাবের মিলন বলেন, আইকনিক স্টেশন ভবনের নিচতলা হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে প্রাথমিক কার্যক্রমগুলো চলমান রয়েছে। আর বাকি ২ থেকে ৬ তলার কাজ এপ্রিল মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। সুযোগ-সুবিধা যেগুলো রয়েছে এবিষয় বাংলাদেশ রেলওয়ে কবে চালু হবে তা নির্ধারণ করবে। তবে যেটুকু জানি, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে আইকনিক রেলস্টেশন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে। তাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বার বারই পরিদর্শনে আসছে এবং বলছে, এই আইকনিক রেলস্টেশন পরিচালনার জন্য তৃতীয় কোন পক্ষকে হস্তান্তর করবে। তাই হয়তো বাংলাদেশ রেলওয়ে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করতে যাচ্ছে। আর এবছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। আশা করি, তার আগেই পুরো কাজ সম্পন্ন করে বাংলাদেশ রেলওয়ে হস্তান্তর করতে পারব।
আর আইকনিক স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গেলো ৩ মাসেই কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন থেকে টিকিট বিক্রি হয়েছে ১০ কোটি টাকার।
কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. গোলাম রব্বানী বলেন, ট্রেন চালু হবার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১০ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। এখন কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেস দুটি ট্রেন ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলাচল করছে। আশা করছি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আরও ট্রেন এই রুটে পাব। ঢাকা থেকে তুর্ণা ও মহানগর এই দুটি ট্রেন কক্সবাজারের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এছাড়া চাঁদপুর থেকে মেঘনাও এই রুটের সঙ্গে যুক্ত হবে। একই সঙ্গে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম কমিউটার ট্রেন চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।
স্টেশন মাস্টার মো. গোলাম রব্বানী বলেন, এখন সবার পছন্দের গন্তব্য কক্সবাজার। যারা কক্সবাজার আসতো না তারাও এখন ট্রেন চড়ে কক্সবাজার ভ্রমণে আসছে। তাই কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে। পর্যাপ্ত ট্রেন বা বগি না থাকাতে টিকিটও দেয়া যাচ্ছে না। তাই এই রুটে আরও ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো খুবই প্রয়োজন।
স্টেশন মাস্টার মো. গোলাম রব্বানী আরও বলেন, কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের পুরো প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তাই এখনো সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা যাত্রীরা পাচ্ছে না। তবে খুবই শিগগিরই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এতে করে ট্রেনের গতি যেমন বাড়বে ঠিক তেমনি যাত্রী সেবা থেকে শুরু করে বিশ^মানের সব সুযোগ-সুবিধা আইকনিক রেলস্টেশনে চালু হবে।
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

সোনাদিয়ায় প্যারাবনে চিংড়িঘের, বিএনপি-আওয়ামী লীগের ২০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন (ইসিএ) এলাকা প্রাকৃতিক প্যারাবন ধ্বংস, বাঁধ নির্মাণ, চিংড়িঘের ও ...