উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪/১২/২০২২ ১০:১৪ এএম

সরকার কৃষি ও কৃষক বাঁচাতে বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা সারে ভর্তুকি দিয়ে আমদানি করলেও বিতরণ, বরাদ্দে নানা অনিয়মের কারণে সুফল পাচ্ছেনা কৃষক। বরাদ্দকৃত সার না পেয়ে শীতকালীন সবজি ও আগাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয়ে জেলার লক্ষাধিক কৃষক। সরকার বরাদ্দ প্রদান করলে ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের গাফেলতির কারণে গ্রাহক পর্যায়ে সার না পৌছায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গেল নভেম্বরে জেলায় টিএসপি সারের বরাদ্দ ছিল ১৭৪৭ মেট্রিক টন। এরমধ্যে উত্তোলন করা হয় ১৩৮৩ টন। বরাদ্দকৃত সার থেকে অনুত্তোলীত রয়ে যায় ৩৬৪ টন যা বস্তা হিসাবে ৭২৮০ বস্তা যার মূল্য ৭২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে টিএসপির ব্যাপক চাহিদার কারণে উক্ত সার বরাদ্দ প্রদান করা হলেও উক্ত ৭২৮০ বস্তা টিএসপি সার গুদামে ও নেই, কৃষকরাও পায়নি। ফলে টিএসপি সারের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। কক্সবাজার বিএডিসির সহকারী পরিচালক মোঃ ইকবাল বাহার বলছেন আমাদের গুদামে ধারণ ক্ষমতা কম থাকায় সার গুদামজাত করতে পারিনি এবং বর্তমানে গুদামে কোন টিএসপি সারের মজুদ নেই। ডিলাররা সার উত্তোলন না করায় টিএসপি সার চলে গেছে। তবে অনুত্তোলিত ৭২৮০ বস্তা টিএসপি সারের হদিস দিতে পারেনি খোদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের জেলা ইউনিটের সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদুল হক জানান, গেল নভেম্বর মাসে কক্সবাজার জেলার জন্য ৭৪৭ টন টিএসপি সার বরাদ্দ দেয়া হয়। উক্ত সার অপর্যাপ্ত হওয়ার কারনে আরো ১০০০ টন সার অতিরিক্ত বরাদ্দ সহ মোট ১৭৪৭ টন বরাদ্দ দেয়া হয়। উক্ত সার ১৬৮ জন ডিলারকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে উত্তোলনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।কক্সবাজার ৬ নং ঘাট সংলগ্ন বিএডিসি বাফার গুদাম থেকে সার উত্তোলন করতে গিয়ে ডিলাররা ১৩৮৩ টন সার উত্তোলন করতে পারলেও মজুদ না থাকায় ৩৬৪ টন সার উত্তোলন করতে পারেননি। ফলে সার সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

# বিএডিসির সার গুদামে নানা অনিয়ম
# টাকা দিলে মেলে তিউনিসিয়ার টিএসপি
# গুদামে ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি জরুরি
# ডিলার- কৃষকরাই ভুক্তভোগী

বিএডিসির গুদাম থেকে সার উত্তোলন করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে ডিলাররা এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। নিজেদের অনুকূলে বরাদ্দকৃত সার আনতে গিয়ে দিতে হয় মোটা টাকা। টাকা দিলে মিলে চাহিদা মত সার। গুদামে দায়িত্বরত স্টোর কিপার রাকিবুল এনামের হাতে নিগৃহীত হতে হয় ডিলারদের।
মহেশখালীর ডিলার ভগিরত দে জানান, আমার জন্য বরাদ্দকৃত সার তুলতে গিয়ে গুদামের স্টোর কিপার রাকিবুল এনাম আমার সাথে দূরব্যভবহার করেছেন। আমাকে মানহীন টিএসপি সার দিতে চাইলে আমি তিউনিসিয়া থেকে আমদানিকৃত টিএসপি সার বরাদ্দ দিতে বললে নানা হয়রানি করে। এক পর্যায়ে তেড়ে আসে। মরক্কোর আমদানিকৃত সারের চাহিদা কৃষকদের মাঝে না থাকায় সেটি কিভাবে বিক্রি করব বলুন। তিউনিসিয়া থেকে আমদানিকৃত টিএসপি সার গুদামে দায়িত্বরত টাকা দিলে পাওয়া যায়। টাকা না পেলে সংকট দেখিয়ে ডিলারদের তাড়িয়ে দেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন আমার জন্য বরাদ্দকৃত সার ৪ টন হলে ও ২ টন দিয়ে অন্যদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমার বরাদ্দের সার তাদের দিয়ে দেয়। ভ্যাটের টাকা নিয়ে কোন রশিদ না দিয়ে ভ্যাটের নামে টাকা মেরে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ গুদামে দায়িত্ব পালনকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
জেলার কৃষকদের জন্য বরাদ্দের ৭২৮০ বস্তা টিএসপি সার কৃষকেরা পেয়েছে কিনা এবং কালোবাজারে চলে গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিএডিসির কক্সবাজারস্থ ডেপুটি ডিরেক্টর মোঃ ইকবাল বাহার জানান- মূলত কক্সবাজারে টিএসপি, ডিএপি, এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে। সেখানে ডিএপি, এমওপি সার গুদামে মজুদ আছে কিন্তু টিএসপি সারের কোন মজুদ নেই। টিএসপি আমদানি করা হয় তিউনিসিয়া ও মরক্কো থেকে। কক্সবাজারের বাফার গুদামে ধারণ ক্ষমতা ২ হাজার টন কিন্তু আমরা অনেক কষ্টে ৩ হাজার টন পর্যন্ত গুদামজাত করি। নভেম্বর মাসে টিএসপির বরাদ্দ ১৭৪৭ টন। আমরা ডিলারদের বিতরণ করেছি ১৪২৯ টন। অবশিষ্ট ৩১৮ টন সার ডিলাররা উত্তোলন করেনি। তবে সে সার গুদামেও সংরক্ষণ করা যায়নি জায়গা স্বল্পতার কারনে। কক্সবাজারের জন্য বরাদ্দকৃত সার থেকে ৩১৮ টন সার কৃষকেরা পায়নি বলে এ কর্মকর্তা স্বীকার করেন। আমদানি হলে আবার এ সার পাওয়া যাবে না হলে নয় এমনটি দাবি করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৪ জন ডিলার জানান-নভেম্বর মাসের টিএসপি সারের জন্য নিয়ম অনুযায়ী বিএডিসির গুদামে বরাদ্দপত্র, পে অর্ডার, ডিলারশীপের কাগজপত্রসব জমা দিয়েছি যথা সময়ে। কিন্তু গুদামে সার জমা হয়নি বলে আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত সার দেয়নি গুদামের দায়িত্বরতরা। ফলে আমরা কৃষকদের জন্য সার বিক্রি করতে পারিনি। কৃষকরা আমাদের সন্দেহ করছে। সার না পেয়ে উৎপাদনে যেতে পারেনি জেলার লক্ষাধিক কৃষক।
এ ব্যাপারে জেলার কৃষির দেখভালে দায়িত্বরত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ ইকবাল বলেন- অনুত্তোলিত ৩১৮ বস্তা টিএসপি সার কক্সবাজারের কৃষকদের জন্য বরাদ্দকৃত সার। এ সার তাদের জন্য খুবই জরুরি। গুদামে যদি না থাকে তাহলে সার কোথায় আছে বা কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা তা আমি গুরুত্ব বিবেচনায় খতিয়ে দেখব। কোন অনিয়ম হলে জড়িতদের ছাড় দেয়া হবেনা কেননা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশাল ভর্তুকি দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করে কৃষকদের চাহিদা পুরণ করে কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখতে নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। সেখানে বরাদ্দকৃত উক্ত টিএসপি সার কৃষকেরা পাবেনা তা হতে পারে না। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন বলে দৈনিক কক্সবাজারকে জানান।
উল্লেখ কক্সবাজার বিএডিসির বাফার গুদামে সার বরাদ্দ ও সরবরাহে নানা অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ অনেক পুরনো। জেলার কৃষি ও কৃষকদের বাঁচাতে ৭২৮০ বস্তা টিএসপি সার পুণরায় মোট বরাদ্দের সাথে যোগ করে কৃষকদের ফিরিয়ে দেয়া জরুরী। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে  ছুরিকাঘাতে জামায়াত নেতাকে হত্যা, ঘাতক আটক

কক্সবাজারের চকরিয়ায় জায়গার বিরোধ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনার পর প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন ...

উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের বাণিজ্য বিস্তার,হুমকিতে স্থানীয়দের জীবিকা!

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘাতের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে উখিয়ায় আশ্রয় নেওয়া ...

পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি—“সে নির্দোষ” রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিও সংস্থার স্কুলের শিক্ষক আ ট ক

দশ হাজার ইয়াবা সহ উখিয়ার বালুখালী থেকে এক যুবক’কে গ্রেফতার করে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করেছে ...