রফিকুল ইসলাম, উখিয়া ::
ডাক্তার, নার্স, আয়া, নাইট গার্ড সবাই মিলে ১২/১৩জন দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। মাত্র চার সন্ত্রাসী দ্বিতীয় তলায় উঠে অস্ত্রের মুখে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে বেডে ভর্তিকৃত মায়ের সাথে থাকা ৭ম শ্রেণিকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় অবশ্য তুলে নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে উদ্ধার করা হলেও ততক্ষণে ঐ স্কুল ছাত্রীকে সন্ত্রাসীরা গণ ধর্ষন করে সর্বনাশ করে ফেলেছে। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এঘটনায় সর্বত্র নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা দিকে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ১নং বেডে কথা হয় ডায়রিয়া আক্রান্ত ছেনুয়ারা বেগম (৩৫) এর সাথে সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত আমার মেয়ে জোৎস্না আক্তার সোমবার সন্ধায় বাপের সাথে মাকে দেখতে আসে হাসপাতালে। ঘরে ছেলে মেয়ে ছাড়া কেউ না থাকায় স্বামী কলিম উল্লাহ (৪০) মঙ্গলবার রাতে জালিয়াপালং ইউনিয়নের পূর্ব সোনারপাড়া গ্রামের বাড়ি চলে যায় মেয়েকে রেখে। তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওয়ার্ড থেকে পার্শ্ববর্তী বাতরুমে যাওয়ার সময় হাসপাতাল করিডোর থেকে তার মেয়েকে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায়।
এঘটনায় স্থানীয় লোকজন ও হাসপাতালের রোগীরা চেচামেছি শুরু করলে স্থানীয় লোকজন ও নাইট গার্ডরা হাসপাতালের উত্তর পাশের বাউন্ডারি ওয়াল সংলগ্ন কবরস্থান থেকে রাত ১টার দিকে বিবস্ত্র অবস্থায় ঐ কিশোরী স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে বলে স্থানীয় উদ্ধারকারী নজরুল সহ কয়েকজন জানায়। ঐ কিশোরীর পিতা কলিম উল্লাহ বলেন, একটি সরকারি হাসপাতালে সব কিছু থাকার পরও কি করে সন্ত্রাসীরা হাসপাতালের ২তলা উঠে আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে সর্বনাশ ঘটালো এবং এর আদৌ সুষ্টু বিচার পাব কিনা এবং বিচার চাইতেও পারি কিনা জানিনা। গতকাল সকালে সন্ত্রাসীরা হাসপাতালের বেডে এসে আমার স্ত্রীকে এই ঘটনায় কোন ধরনের বাড়াবাড়ি করলে শেষ করে ফেলা হবে বলে হুমকি দিয়ে যায়। এ কারনে মেয়েকে দ্রুত বাড়িতে নিয়ে আসি। পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ার পরও স্ত্রীকে গতকাল দুপুরে ঘরে নিয়ে আসি।
হাসপাতাল সংলগ্ন রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য শ্রমিকলীগ নেতা সরওয়ার কামাল পাশা এঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এধরনের জঘন্য ঘটনার সাথে প্রকৃত দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে এধরনের ঘটনা আরো ঘটার আশংখ্যা রয়েছে। তিনি বলেন উক্ত হাসপাতালে রোগী, সংশ্লিষ্ট আত্মীয় স্বজন বিশেষ করে মহিলাদের কোন নিরাপত্তা নেই। সন্ত্রাসীরা সর্বদা তাদের উত্যক্ত করে বিরক্ত করে থাকে। উদ্ধাররে সহায়তাকারী স্থানীয় নজরুল কাশেম, আক্কাস, খাইরু, মুজিব সহ আরো কয়েকজন বলেন, ভাগ্যভালো আমরা দ্রুত খুঁজা খুজি করে মেয়েটিকে উদ্ধার করতে পেরেছি। অন্যতায় আরো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশংখ্যা ছিল।
গতকাল উখিয়া হাসপাতালের প্রধান সহকারী ফরিদুল আলম ঘটনার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মঙ্গলবার রাতে হাসপাতাল এলাকায় সরকারি দুইজন, আইওএম এর দুইজন, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সুসাইটির দুইজন ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসের একজন আনসার ও ভিডিপি সদস্য সহ মোট সাত জন নাইট গার্ড কর্মরত ছিল। এত নিরাপত্তার পরও কিভাবে সন্ত্রাসীরা হাসপাতাল থেকে রোগীর মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণ ধর্ষণ করলো এবং ঘটনার সম্পর্কে নাইট গার্ডরা কাউকে কিছু জানালো না তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। হাসপাতাল ম্যানেজম্যান্ট কমিটির সদস্য অধ্যাপক আদিল উদ্দিন চৌধুরী এব্যাপারে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাসপাতালে এধরনের ঘটনা নজির বিহীন ও চরম ন্যাক্কার জনক। আমি এঘটনার কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। উখিয়া আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী উখিয়া হাসপাতালের ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে অভিলম্বে ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে হাসপাতালের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানান।
ঐ রাতে উখিয়া হাসপাতালে জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত ডাক্তার আরিফা মেহের রুমী হাসপাতাল থেকে কিশোরী উঠে নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বীগ্ন থাকায় হাসপাতালের কোয়াটার ছেড়ে কক্সবাজার আসা যাওয়া করতে হচ্ছে। উখিয়া থানার ওসি মোঃ আবুল খায়ের বলেন ঘটনার সম্পর্কে জানতে পেরে কয়েক দফা পুলিশী অভিযান চালানো হয়েছে। তবে কোন অভিযোগ না আসলেও অতি দ্রুত লম্পট সন্ত্রাসীদের আটকের জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাক্তার মিজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ ঘটনার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার হচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্থ কিশোরী পরিবারকে যাবতীয় সহযোগীতা প্রদান করা হবে।