ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৮/০৪/২০২৫ ৮:২৮ এএম

আল-আকসা মসজিদ শুধু ফিলিস্তিন বা মধ্যপ্রাচ্যের কাছে নয়, বরং সমগ্র মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এটি তাদের ভালোবাসা ও প্রাণের স্পন্দন। এটি মুসলমানদের প্রথম কেবলা এবং পৃথিবীতে নির্মিত দ্বিতীয় মসজিদ যা মাসজিদুল হারামের পরে নির্মিত হয়। কুরআনে মিরাজের ঘটনা উল্লেখ করার সময় এ স্থানের নাম নেওয়া হয়েছে। খুলাফায়ে রাশিদিনের পরও ইসলামি পণ্ডিতরা একে ঐতিহ্যগতভাবে ‘আল-ইসরা’ বলে উল্লেখ করেছেন। সূরা বনি ইসরাইলের ১নং আয়াত ‘আল-আকসা’-এর গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ আয়াতে বলা হয়েছে ‘পবিত্র ও মহিমময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রাতারাতি ভ্রমণ করিয়েছেন (মক্কার) মাসজিদুল হারাম থেকে (ফিলিস্তিনের) মাসজিদুল আকসায়’। এ আয়াতটির অনুবাদ ও ব্যাখ্যায় প্রায় সব পণ্ডিতই সুনির্দিষ্টভাবে ‘আল-আকসা’ ও ‘মসজিদ আল-হারাম’ উল্লেখ করেছেন এবং বর্ণিত ‘আল-আকসা’টি যে ‘জেরুজালেমে’ অবস্থিত ‘আল-আকসাটিই তা নিশ্চিত করেছেন।

কুরআন ও ইসলামি বিবরণ অনুযায়ী আল-আকসা মসজিদে মুহাম্মাদ (সা.) মিরাজের রাতে, বিদ্যুৎ ও আলোর চেয়ে দ্রুতগামী বাহন বোরাকে চড়ে এসেছিলেন। মিরাজ শেষে নবি (সা.) প্রথম বাইতুল মুক্কাদ্দিসে অবতরণ করেন। সেখান থেকে বোরাকে করে প্রভাতের আগেই মক্কায় পৌঁছেন। নবি (সা.)-এর নবুওয়াত প্রকাশের একাদশ বছরের (৬২০ খ্রিষ্টাব্দ) রজব মাসের ২৬ তারিখের দিবাগত রাতে প্রথমে কাবা শরিফ থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত বায়তুল মুকাদ্দাস বা মাসজিদুল আকসায় গমন করেন। তিনি এখানে নামাজ পড়েন এবং তার পেছনে অন্য নবি রাসূলরা নামাজ আদায় করেন। অতঃপর তিনি বোরাকে (বিশেষ বাহন) আসীন হয়ে ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন। ঊর্ধ্বাকাশে সিদরাতুল মুনতাহায় তিনি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেন। ফেরেশতা জিবরাইল পুরো যাত্রায় তার সঙ্গে ছিলেন। সব মুসলমান বিশ্বাস করেন, সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল।

Advertisement

বায়তুল মুকাদ্দাসে নামাজ আদায়ের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এ বিষয়ে এক হাদিসে হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মসজিদে হারামে এক নামাজ এক লাখ নামাজের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববি) এক নামাজ এক হাজার নামাজের সমান এবং বাইতুল মাকদাসে (মসজিদে আকসা) এক নামাজ ৫০০ নামাজের সমান।’-(মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/১১)।

আবু যার (রা.) থেকে বর্ণিত : আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! পৃথিবীতে প্রথম কোন মসজিদ তৈরি করা হয়েছে? তিনি বললেন, মসজিদে হারাম। আমি বললাম, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, মসজিদে আকসা। আমি বললাম, উভয় মসজিদের (তৈরির) মাঝে কত ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, ৪০ বছর। অতঃপর তোমার যেখানেই সালাতের সময় হবে, সেখানেই সালাত আদায় করে নেবে। কেননা এর মধ্যে ফজিলত নিহিত রয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৮৫)।

নবি দাউদ (আ.) যখন জীবিত ছিলেন তখন তিনি আল্লাহর নবি ও বাদশা ছিলেন। ৩০ বছর বয়সে তার নবুওয়াতপ্রাপ্তির পর ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি আল্লাহর ধর্মপ্রচারে নিমগ্ন ছিলেন এবং শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন। জীবন সায়াহ্নে উপস্থিত হয়ে তিনি রাজ্যের প্রধান ব্যক্তিদের ডেকে বললেন, আমার জীবনের একটি প্রধান বাসনা ছিল, আমি আল্লাহতায়ালার ইবাদতের জন্য একখানা পবিত্র গৃহ নির্মাণ করব এবং এর জন্য আমি প্রয়োজনীয় স্বর্ণ, রুপা, তামা, পিতল, লোহা, কাঠ, পাথর ইত্যাদি সংগ্রহ করে রেখেছি। তারপর তিনি পুত্র সোলাইমান (আ.)কে এই পবিত্র গৃহ নির্মাণসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পরামর্শ দান করলেন এবং এ কার্যের গুরুত্বের বিষয়টি অবহিত করলেন। তিনি হজরত সোলাইমান (আ.)কে বারবার বললেন-স্মরণ রেখো, এটা বাসগৃহ নয়; এটা আল্লাহতায়ালার ইবাদতগৃহ।

আল্লাহর অসীম রহমতে নবি সোলাইমান (আ.) এমন কারামাত লাভ করেছিলেন, যা দুনিয়ার সব পশুপাখি, জিন এবং বায়ুমণ্ডল পর্যন্ত তার পরম অনুগত ও বাধ্য ছিল। একান্ত আজ্ঞাবহরূপে এরা সবাই তার হুকুম তামিল করত। নবি সোলায়মান (আ.) পিতার মনের বাসনা পূর্ণ করতে বদ্ধপরিকর হলেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সুযোগ্য প্রস্তরশিল্প এবং বিভিন্ন শ্রেণির প্রখ্যাত কারিগরদের এনে বিরাট অট্টালিকা নির্মাণ করলেন। নানাবিধ উপকরণ দিয়ে সুসজ্জিত করা হলো। এর জন্য জিনদের দ্বারা গহিন সাগরের তলদেশ থেকে পাথর উত্তোলন করা হয়েছে। প্রাচীর গাত্রে এবং উপরিভাগে গাছ ও ফেরেশতাদের চিত্রাঙ্কন করা হলো। ছাদে স্বর্ণ, রুপা, মোতি, হীরা পান্না, ইয়াকুত, ফিরোজা প্রভৃতি ধাতু ও প্রস্তরগুলো খচিত হয়ে সুরম্য মসজিদগৃহের শোভা শতগুণ বৃদ্ধি পেল। বনি ইসরাইল কওমের ধার্মিক লোকজন এই বায়তুল মুকাদ্দাস বা পবিত্র ইবাদতগৃহে আল্লাহতায়ালার উপাসনায় মগ্ন হলো।

মুসলমানদের কাছে আল-আকসা মসজিদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। প্রথম দিকে মুসলমানরা এ স্থানকে কিবলা হিসাবে ব্যবহার করত। হিজরতের পর কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ায় এর পরিবর্তে কাবা নতুন কিবলা হয়। মসজিদ আল কিবলাতাইনে নামাজের সময় এ আয়াত নাজিল হয়। এরপর থেকে কাবা কিবলা হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আল-আকসা মসজিদের এলাকা অসংখ্য নবি রাসূলের স্মৃতিবিজড়িত, এর আশপাশে অনেক নবি রাসূলের সমাধি রয়েছে। এর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে দ্যা গ্রেট সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবীর অসংখ্য স্মৃতি। এ মসজিদের পাথরের গায়ে লেখা রয়েছে সম্পূর্ণ সূরা ইয়াসিন। এটি দীর্ঘকালের ওহি অবতরণস্থল, ইসলামের কেন্দ্র এবং ইসলামি সংস্কৃতির চারণভূমি ও ইসলাম প্রচারের লালন ক্ষেত্র। এটি মুসলিম উম্মাহর ভালোবাসা ও প্রাণের স্পন্দন

পাঠকের মতামত

কাশ্মীরে ইসলাম প্রচারের ইতিহাস

আলেমা হাবিবা আক্তার ভূস্বর্গখ্যাত কাশ্মীর নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর একটি। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ইসলাম ...