হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া ::
গন্তব্য কোথায় জানা নেই কারও। তবুও রোহিঙ্গা শিশু কিশোরদের দুরন্ত ছুটে চলা।প্রচন্ড রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে সাথীদের সাথে খেলতে বেরিয়েছে রোহিঙ্গা শিশু মায়েশা। মায়েশার খেলার সাথী আরকান। বর্র্র্তমানে রাখাইন মিয়ানমারের একটি প্রদেশ হলেও রোহিঙ্গাদের এই আবাসভূমি এক কালে ছিল স্বাধীন-স্বতন্ত্র রাজ্য।এই রাজ্যটিকে আরকানও বলা হয়ে থাকে। আরকানে রোহিঙ্গাদের ইতিহাস অতি প্রাচীন। তাই রোহিঙ্গারা আরকানকে খুব বেশি ভালবাসে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই তো দেশের নামের সঙ্গে মিলিয়ে সন্তানের নাম রাখা হয়েছে আরকান। বিকালে মায়েশার সাথে খেলা করছিল আরকান। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও ঘরে ফিরেনি আরকান। মায়ের মন অস্থির হয়ে খুঁজতে থাকে আরকানকে। অবশেষে সন্ধ্যে বেলা ক্যাম্পের খেলার মাঠের এক পাশে ক্লান্ত হয়ে বসেছিল সেই ১০ বছরের রোহিঙ্গা শিশু আরকান। এ সময় তার সঙ্গে কথা হয়। নাম কি জানতে চাইলে জবাবে উত্তর দেয়- আরকান। শুনে একটু অবাক হয়ে আবার জানতে চাইলে উত্তরে লজ্জা পেয়ে বলে মর নাম আরকান।দেশের নাম কি প্রশ্ন করা হলে তাও বলে আরকান। কেন বাংলাদেশে এসেছে জানতে চাইলে উত্তরে চুপ হয়ে থাকে। তখন তার চোখেমুখে দেখা মেলে হতাশা, আতঙ্ক ও উদ্বেগ। তখন সামনে এগিয়ে এসে আরকানের মা পরিচয় দিয়ে ফাতেমা বেগম (৩০) নামে এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, ও আমার সন্তান। তাদের বাড়ি মিয়ানমারের বুচিডং টংবাজার গ্রামে। সেখানে তাদের একটি কাঠের বাড়ি ছিল। পুকুর ভরা মাছ আর গোলা ভরা ধান ছিল। ছিল সুখের সংসার, যা ভেঙ্গে `চুরমার করে দিয়েছে মিয়ানমার সেনারা। গেল বছরের ২০ সেপ্টেম্বর স্বামী কামাল হোসেনকে সেনারা ধরে নিয়ে জবাই করে হত্যা করে। এরপর মেয়ে আরকানসহ পাঁচ সন্তান নিয়ে গ্রামে গ্রামে পালিয়ে বেড়ান ফাতেমা। অবশেষে আত্নীয়-স্বজনের সাথে সেই সময় নাফ নদী পাড়ি দিয়ে শাহপরীর দ্বীপে পৌঁছান তারা। সেখান থেকে উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। স্বামী হারানো এই নারী বলেন, আমার জন্ম আরাকানে। তাই জন্মভূমিকে খুব বেশি ভালবাসি। আমার স্বামীর জন্মও সেখানে। এই ভালবাসার টানে আমি আমার মেয়ের নাম রেখেছি আরকান। আরকান তো ছেলের নাম হয়, মেয়ের নাম রেখেছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কোন ছেলে নেই, সবাই মেয়ে। তাই তিনি খুব সখ করে এক মেয়ের নাম রেখেছেন আরকান।কখনও চিন্তা করিনি, আমাদের আরাকান রাজ্য ছেড়ে পালাতে হবে। যদি জানতাম, মেয়ের নাম কখনও আরকান রাখতাম না। ফাতেমা আরো বলেন, সেনারা ওই গ্রামের শত শত শিশু, নারী ও পুরুষকে হত্যা করেছে। এপারে পালিয়ে আসার সময় পাহাড়ে, জঙ্গলে, খালে ও ধানক্ষেতে পড়ে থাকতে দেথেছি রোহিঙ্গাদের লাশ আর লাশ। সেই দৃশ্য আজও ভুলতে পারিনি।