প্রকাশিত: ১০/১০/২০২১ ৯:৪০ এএম

ফিলিপাইনের নোবেল বিজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসা শান্তিতে পাওয়া নোবেল পৃথিবীর সব সাংবাদিককে উৎসর্গ করেছেন। তিনি বলেছেন, তার এই নোবেল শান্তি পুরস্কার পৃথিবীর সব সাংবাদিকের। এছাড়া সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় নিজের সংগ্রাম অব্যাহত রাখবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন তিনি।

এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রেসা বলেন, সত্যিই এই পুরস্কার পৃথিবীর সমস্ত সাংবাদিকের। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য দরকার। আজকের দিনে সাংবাদিক হওয়া খুব কঠিন এবং বিপজ্জনক।

৫৮ বছর বয়সী রেসা বলেছেন, এই পুরস্কার তার এবং ফিলিপাইনে কাজ করা অন্য সাংবাদিকদের জন্য শারীরিক এবং অনলাইন আক্রমণ থেকে বাঁচাতে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে।

এই পুরস্কার অ্যাড্রেনালিন ইনজেকশনের মতো জানিয়ে তিনি বলেন, এই যে ‘তাদের বিরুদ্ধে আমরা’ এটা কিন্তু সাংবাদিকরা তৈরি করেনি। এটা তৈরি করেছে ক্ষমতায় থাকা লোকজন যারা নেতৃত্বকে সমাজে বিভাজন তৈরিতে ব্যবহার করতে চায়। আমি আশা করি, এই পুরস্কার সাংবাদিকদের নির্ভীকভাবে কাজ করতে উৎসাহ দেবে।

ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে ও তার সরকারের নীতির কঠোর সমালোচনাকারী রেসা, বিশেষ করে মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের।

অধিকার কর্মীরা বলছেন, ফিলিপাইনে মাদকবিরোধী অভিযানে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই গরীব মানুষ। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ওইসব হত্যাকাণ্ডের নৃশংস ছবি প্রকাশ করেছে এবং এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। র‌্যাপলার ওয়েবসাইটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মারিয়া রেসা।

এছাড়া রক্তাক্ত ওই অভিযানকে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ বিবেচনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকও পুর্ণাঙ্গ তদন্তের অনুমোদন দিয়েছেন। অন্যান্য সংবাদমাধ্যমও দুতের্তের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ফিলিপাইন্স ডেইলি ইনকোয়ারার ও টেলিভিশ এবিএস-সিবিএনের লাইসেন্স বাতিল করে গতবছর।

এ প্রসঙ্গে মারিয়া রেসা বলেন, আমাদের বাঁচার আর কোনো উপায় নেই… তাই আমাদেরকে প্রতিরোধ করা সহজ। গত দুই বছরের কম সময়ের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে ১০টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।

তিনি জানান, এখনো তার বিরুদ্ধে সাতটি মামলা আছে। এর মধ্যে কর ফাঁকির মামলাও আছে, যেটাকে তিনি হাস্যকর বলেছেন এবং এই মামলায় জিতবেন বলে মনে করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও রয়েছে।

এসব মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্ষমতার এই অপব্যবহার কাজ করতো যদি আমি ভয়কে প্রশ্রয় দিতাম এবং এগুলো আমার প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতো। আমার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ভয়কে জয় করা। নির্ভীক হওয়া মানে ভয় না পাওয়া না, এর মানে হলো কিভাবে আপনি ভয়কে কব্জা করবেন তা জানা। আমি সব সময় মজা করি এবং প্রায়ই বলি সত্যি প্রেসিডেন্ট দুতার্তেকে আমার ধন্যবাদ জানানো উচিত। কারণ ততক্ষণ পর্যন্ত জানেন না আপনি কে, যতক্ষণ আপনি এটার জন্য যুদ্ধ না করেন। এখন আমি জানি আমি কে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার ফিলিপাইনের নিউজ ওয়েবসাইট র‌্যাপলার-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মারিয়া রেসা ও রুশ সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করার স্বীকৃতি হিসেবে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।

ফিলিপাইনের সাংবাদিক ও অধিকার আন্দোলনকর্মীরা রেসার এই পুরস্কারকে দেশটির সাংবাদিকদের জন্য বিশাল এক মাইল ফলক বলে অভিহিত করেছেন। কারণ দেশটি সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক এক দেশ।

আর গণমাধ্যম সমর্থকরা বলছেন, ২০১৬ সালে দুতার্তে ফিলিপাইনের ক্ষমতায় আসার পর থেকে রেসা ও র‌্যাপলার অসংখ্য ফৌজদারি মামলা, তদন্ত ও অনলাইন আক্রমণের শিকার হয়েছে। দুতার্তে র‌্যাপলারকে ‘ভুয়া নিউজ প্রতিষ্ঠান’ বলে মন্তব্য করেন।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য জাতিসংঘের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন ...

ট্রাম্পকে সৌদির পাল্টা জবাব: ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক নয়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, সৌদি আরব ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি চুক্তির জন্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে ...

এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদন হাসিনাসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা গুমের ঘটনায় জড়িত

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) দাবি করেছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কয়েকজন শীর্ষ ...

মিয়ানমারে বিদ্রোহী জোটে ভাঙন, যুদ্ধ থামিয়ে জান্তার সঙ্গে হাত মেলাল দ্বিতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী

মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ থামাতে চীনের কূটনৈতিক তৎপরতার ফল মিলল। বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায় বিদ্রোহী জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’-এর ...