প্রকাশিত: ১৫/১১/২০১৮ ৮:০০ এএম

নিউজ ডেস্ক::
সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি সত্ত্বেও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (UNHCR) এর চাপে বৃহস্পতিবার বহুল প্রতীক্ষিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে না। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ার কারণ দেখিয়ে জাতিসংঘ সহ পশ্চিমা দেশগুলো প্রত্যাবাসন স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করে বলেছে, বর্তমানে রাখাইনের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হতে পারে।

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা বুধবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ৫০টি রোহিঙ্গা পরিবারের দেড়শ’ জনকে বৃহস্পতিবার মিয়ানমারে পাঠানোর কথা ছিল। তবে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থাকে তারা বলেছে, তারা কেউই মিয়ানমারে ফিরতে চায় না। এর পর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়।

এদিকে, জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) এক নথিতে উল্লেখ করেছে, মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার পর রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরে রাখা হলে তাদের আর মানবিক সহায়তা দেওয়া হবে না।

ওই গোপনীয় নথি বিশ্লেষণ করে রয়টার্স আরও জানিয়েছে, শরণার্থীদের যেন দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে রাখা না হয়, এমন ভাবনা থেকেই এই পরিকল্পনা করেছে ইউএনএইচসিআর।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য অস্থায়ীভাবে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের কথা জানিয়েছে মিয়ানমার। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ভয়, দেশহারা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর আরোপিত কঠোর নিষেধাজ্ঞাগুলোর কারণেই এসব কেন্দ্র চিরস্থায়ী হয়ে যেতে পারে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার এক কর্মকর্তা মঙ্গলবার বলেছেন, রাখাইনে এখনও রোহিঙ্গাদের ফেরার মতো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। এখনও তাদের নাগরিকত্বের প্রশ্নে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি মিয়ানমার সরকার। সেখানে তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার এখনও নিশ্চিত করা হয়নি।

অন্যদিকে প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে রাজি কি না ইউএনএইচসিআর পক্ষ থেকে তা যাচাই করার প্রক্রিয়াও শেষ হয়নি।

কক্সবাজারে শরণার্থী, প্রত্যাবাসন ও ত্রাণ কমিশনার (আরআরআরসি) আবুল কালাম বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, প্রথম দিন ৩০ পরিবারের ১৫০ রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের যাবতীয় ভৌত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদন পেলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

তবে ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র ফিরাজ আল-খতিব গত রাত ৮টায় বলেন, ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিরা বুধবার সারা দিন ধরে প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের সম্মতির বিষয়টি জানার চেষ্টা করেছেন। এটি শেষ হয়নি। বৃহস্পতিবারও চলবে। তালিকায় থাকা সব পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর ইউএনএইচসিআর এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে জানাবে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফেরার পরিবেশ মিয়ানমারে সৃষ্টি হয়েছে বলে ইউএনএইচসিআর মনে করে না। বাংলাদেশের সঙ্গে ইউএনএইচসিআরের সমঝোতার আওতায় প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে চায় কি না, তা যাচাই করার কাজটিই শুধু জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা করছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র আরো বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুযায়ী ইউএনএইচসিআরের অবস্থান হলো, সম্মতির বিষয়টি যাচাই শেষ হলে এর ফলাফল বিষয়ে তারা সরকারকে জানাবে। সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি বা পরিবার মিয়ানমারে ফিরে যেতে আগ্রহী কি না সে বিষয়ে তারা সরকারকে তথ্য দেবে না।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ইউএনএইচসিআরের সম্মতি ছাড়া প্রত্যাবাসন শুরু করলে বৈশ্বিক অঙ্গনে তা একতরফা হিসেবে বিবেচিত হবে। এ জন্য বাংলাদেশকে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে।

উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর ঢাকায় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ১৫ নভেম্বর প্রত্যাবাসন শুরুর ঘোষণা দিয়েছিল। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে নিশ্চিত করা দুই হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর মধ্য দিয়ে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রথম দিকে প্রতিদিন ১৫০ জন করে রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যাবে। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের আগেই বাংলাদেশ ওই তালিকা ইউএনএইচসিআরকে সরবরাহ করে। ভারত ও চীন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।

এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের উপমুখপাত্র ফারহান হক বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্ল্যাশেলেট, শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডির উদ্বেগগুলো প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত রাষ্ট্রগুলোর অনুধাবন করা উচিত বলে জাতিসংঘ মহাসচিব মনে করেন।

ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি ইতিমধ্যে বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে সেখানে স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, টেকসই ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল নয়। অনুকূল ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব মিয়ানমারেরই।এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করার কথা রয়েছে।

পাঠকের মতামত

উখিয়াবাসীর স্বপ্ন পূরণ করতে চাই – জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর বিবৃতি

গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রেক্ষাপটে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বিবৃতি দিয়েছেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ...

ইসলামপুরে আটক রোহিঙ্গা যুবককে কুতুপালং ক্যাম্পে হস্তান্তর

জামালপুরের ইসলামপুরে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার মো. রোবেল (২২) নামের সেই রোহিঙ্গা যুবককে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ের ট্রানজিট ...