প্রকাশিত: ৩১/০৮/২০১৭ ৭:২৫ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:১৯ পিএম

সরওয়ার আলম শাহীন,ঘুমধুম সীমান্ত থেকে::
বৈশি^ক সন্ত্রাসবাদ দমনে পুরো বিশ^ যখন তৎপর,ঠিক তখনই মিয়ানমার সেনাবাহিনী,সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) ও রাখাইন সম্প্রদায়ের নির্মমতা,নৃসংশতায় মরছে মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গারা,বিপন্ন হচ্ছে মানবতা। সবুজ প্রকৃতি পুড়ে বিবর্ণ হচ্ছে,প্রাণ হারাচ্ছে শত শত তরুন-তরুনী,শিশু-বৃদ্ধসহ রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়। ধর্ষিতা হচ্ছে অজস্র নারী। তবুও বিশ^ বিবেককে নাড়া দিচ্ছেনা। কেউ কেউ প্রতিবাদ করলেও মিয়ানমার তাদের কথা মানছেনা। নির্যাতনের শিকার নিরুপায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি)র কড়া নজরদারী ভেদ করে রাতের আঁধারে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে প্রাণের তাগিদে,বাঁচার তাগিদে। তারা মিয়ানমারে সহায় সম্পদ সহ বাড়ীঘরের মায়া ত্যাগ করে ছুঁটে আসছে বাংলাদেশে,খুঁজে ফিরছে একটু আশ্রয়। কিন্ত এদের বেশীর ভাগ এখনো রয়েছে সীমান্তের জিরো। প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে বলে স্থানীয় সুত্রগুলো জানায়। ওপারে মিয়ানমার বাহিনীর বুলেট,এপারে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি,র বাঁধা। এ এক অনিশ্চিত জীবন তাদের।

গতকাল বুধবার সরজমিন সীমান্তবর্তী ঘুমধুমের জিরো পয়েন্টে গিয়ে দেখা হাজার হাজার রোহিঙ্গার অবস্থান।যাদের মুখে শুধু মিয়ানমারের নির্যাতনের বর্ণনা আর সবার চোখেমুখে হতাশার ছাঁপ,একটু আশ্রয় আর বেঁচে থাকার আকুতি। এ সময় রাস্তার পাশে কথা হয় মিয়ানমারের মংডু তামাবিল গ্রাম থেকে এক দুসম্পর্কের নাতীর সাথে পালিয়ে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেওয়া শতবর্ষী বৃদ্ধ নারী ছখিনা বেগমের সাথে। তিনি নিজেই জানালেন,তার বয়স ১০০ পেরিয়েছে,কিন্ত ১০০ বছরের জীবনে তিনি মিয়ানমারে এমন ভয়াবহতা কোনদিন দেখেননি । ৫ ছেলে,৩ মেয়ে,ছেলের বউ নাতিনাতনীসহ ১৭ জনকে হারিয়ে ছখিনা এখন নির্বাক প্রায়। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। তবুও আমতা আমতা করে বললেন,ভালোয় চলছিল তাদের সংসার,মিয়ানমারে দালান বাড়ী ছিল,ছেলেদের ব্যবসা বানিজ্য ছিল,ভাল আয় ছিল,কিন্ত সবকিছু নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) রাখাইন সম্প্রদায়ের মগ,রা তার বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে সন্তানদের,ছেলের বউদের নির্যাতনের পর কাউকে আগুনে নিক্ষেপ আর কাউকে গুলি করে হত্যা করা হয়। শিশুদের নিক্ষেপ করা হয় আগুনে। ব্দ্ধৃা বলে হয়তো আমাকে চেড়ে দিয়েছে সেনা সদস্যরা। পরে গত সপ্তাহে এক দুসম্পর্কের নাতীর সহায়তায় সীমান্তের জিরো পয়েন্টে আশ্রয় নিয়েছে সে। এ বৃদ্ধার মতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর চলছে প্রকাশ্যে গনহত্যা। তার জীবনে এমন বর্বরতা তিনি দেখেননি, বিভীষিকায়ময় পরিস্থিতি চলছে সেখানে। শুধু আমার পরিবার নয়,প্রকাশ্যে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী প্রতিটি গ্রামের ঘরে ঘরে গিয়ে মুসলিম রোহিঙ্গাদের জবাই করে হত্যা করছে জালিম বাহিনী। বিভিন্ন বয়সী নারীদের ধর্ষণ ছাড়াও ঘরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের আটকে রেখে বাইরে থেকে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়া হচ্ছে। অসহায় মানুষকে তারা পুড়িয়ে হত্যা করছে। বাড়িঘরে আগুন দেয়ার আগে মালামাল লুট করা হচ্ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও চলছে লুটপাট। ছখিনার সাথে যখন কথা হচ্ছিল তখন তার একটু দুরে বসা ছিল আরেক ৬৫ বছর বয়সী বয়োবৃদ্ধ মহিলা আমিনা খাতুন জানায়, তার ছেলে আহমদ নবী(২৮) কে মগ সেনারা কোথায় নিয়ে গেছে জানিনা। চোখের সামনে ছেলের বউ মরিয়ম কে ধর্ষণ করেছে। দুই নাতি সায়েরা (৬), আব্বাস (৩) ও ছেলের বউকে নিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। বেশ কয়েকদিন যাবত সীমান্তে অবস্থান করলেও ঠিকমতো খাবার জুটছে না। পরনের কাপড় চোপড় ও আনতে পারেনি বলে এ বৃদ্ধ জানান। পাশেই বসা আরেক বয়োবৃদ্ধ ছমিরা খাতুন (৮০) জানান,ক্ষুধা নিবারন করাই কষ্ট হয়ে পড়েছে। কেন যে আল্লাহ পেঠটা দিলো। পেঠটা না থাকলে এতো কষ্ট হতো না। এভাবে স্বামী হারা,সন্তান হারা,পিতা হারা,ঘরবাড়ী হারা,সহায় সম্বলহীন হারা রোহিঙ্গাদের আজাহারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। অনেকে খোলা আকাশের নিছে মানবেতর রাত যাপনের চিত্র দেখা গেছে। শিশু ও নারীরা কষ্ট পাচ্ছে সবচেয়ে বেশী। মিয়ানমারের নাইচ্ছংপাড়া থেকে দুই শিশু নিয়ে আসা রহিমা আক্তার (২৩) বলেন, ‘আমার স্বামী আব্দুল্লাহ (২৭) কে ধরে নিয়ে গেছে মগরা। একটু পাশেই দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রী, দুই সন্তান মিলে চারজনের একটি পরিবার কোনোরকম কাপড় দিয়ে ঘেরা খোলা আকশের নিচে রাত কাটাচ্ছে। জানতে চাওয়া হলে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, সীমান্তে তাম্বু টেকে সীমান্তে অবস্থান নিয়েছি,এছাড়াতো আর উপায় নেই। স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন জানান, তার এলাকায় সীমান্তে বিপুল পরিমান রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এদের অনেকেই অসচ্ছল পরিবার। এদিকে স্থানীয় জনগন অসহায় এসব রোহিঙ্গাকে সাধ্যমত খাবার ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে লুটে নিচ্ছে সবকিছু । এ ব্যাপারে ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মন্জুরুল হাসান খান বলেন, সীমান্তে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কাউকে জিরো পয়েন্ট অতিত্রুম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবেনা।

পাঠকের মতামত

পুলিশ থেকে বাঁচতে জীবনটাই দিলেন সিএনজিচালক

গ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ...

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চলন্ত সিএনজিতে সিলিন্ডার বি’স্ফোরণ, চালক নিহত

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চন্দনাইশ এলাকায় চলন্ত সিএনজি অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুনে দগ্ধ হয়ে ...