প্রকাশিত: ০৭/০৮/২০১৭ ২:১৮ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৩:৩৪ পিএম

নিউজ ডেস্ক::
নারীদের মধ্যে যারা নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করতেন, তারাই ছিলেন ভণ্ডপীর আহসান হাবিব পিয়ারের টার্গেট। মেয়েদের এই নিঃসঙ্গতার সুযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তুলত পিয়ার। শুরু হতো ভিডিও চ্যাটিং। এরপর বাসায় ডেকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করত। না জানিয়ে ভিডিও ধারণ করে রাখত এসব দৃশ্য। তারপর শুরু হতো প্রতারণা।

প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ভুক্তভোগী নারীর কাছে দাবি করত মোটা অঙ্কের অর্থ। টাকা দিতে রাজি না হলে ইন্টারনেটে ভিডিও ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিত। এভাবেই গাড়ি-বাড়িসহ কোটি টাকার সম্পদ করেছে সে। সম্প্রতি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তারা গ্রেফতার করেন এই ভণ্ডপীরকে। গ্রেফতারের পর দু’দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে নিজ মুখে এসব কুকীর্তির বর্ণনা দেয় সে।

আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ভণ্ডপীর তাহমিনা ও মিতা নামের দুই নারীকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করে সে। টাকার বিনিময়ে নারীদের বিশেষ করে যারা একাকী জীবনযাপন করেন তাদের সঙ্গে ভিডিও চ্যাটিং করত। এ ছাড়া সাংসারিক ও পারিবারিক জীবনে যেসব নারী নানা সমস্যায় ভুগছেন তাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলত। এভাবেই শতাধিক নারীকে ফাঁদে ফেলে কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নেয় পিয়ার।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যুগান্তরকে বলেন, নিজের সুন্দর চেহারা এবং ইসলামি জ্ঞানকে অপব্যবহার করে অসংখ্য মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে এই ভণ্ডপীর। বিভিন্নজনকে সাহায্য করার কথা ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করে নিজের ব্যাংক ও বিকাশ নম্বরে মোটা অঙ্কের অর্থ এনে আত্মসাৎ করে সে। গত তিন বছরে এভাবেই গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছে এই প্রতারক। ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন, তার প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত জনতা ব্যাংকের নতুন আরেকটি অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে কত টাকা লেনদেন হয়েছে সেটা জানা যায়নি।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আদালতে নিজের মুখে কুকীর্তির বর্ণনা দিয়েছে ভণ্ডপীর। আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে স্বীকার করে, দুই নারীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছে। এ ছাড়া অসংখ্য নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের গোপন ভিডিও ধারণের কথাও অকপটে স্বীকার করেছে এ প্রতারক।

ওই কর্মকর্তা বলেন, তার প্রতারণার আরেকটি মাধ্যম ছিল ‘এএইচপি’ নামের অনলাইন টেলিভিশন। সেখানে বিভিন্ন ভিডিও আপলোড করে প্রতারণা করেছে। দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী এভাবে সে টেলিভিশন চালাতে পারে না। তাই তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

এর আগে বেশ কয়েক ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার জিন-ভূত তাড়ানোর নাম করে পর্নো ভিডিও ধারণকারী ও ভণ্ডপীর আহসান হাবিব পিয়ারকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজমের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঠালে দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। শনিবার এই ভণ্ডপীরকে আদালতে উপস্থাপন করা হলে নিজ মুখে নানা কুকীর্তির বর্ণনা দেয় সে।

পাঠকের মতামত