প্রকাশিত: ২০/০৫/২০১৭ ৬:১৬ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:৫৩ পিএম

নিউজ ডেস্ক: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আবারো প্রমাণ করলেন তিনিই বেগম খালেদা জিয়ার বিপদের সঙ্গী। বরাবরের মতোই শনিবার সকালে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাসির সময় সাহসী ভূমিকা রাখেন তিনি। আর তাই এই বিষয়টি এখন সারাদেশে সবার মুখে মুখে।

জানা যায়, হঠাৎ করেই শনিবার সকাল সাতটার দিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। এক ঘণ্টা পর সকাল আটটার দিকে কার্যালয়ের মূলফটক দিয়ে ভিতরে ঢোকেন পুলিশ সদস্যরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা তল্লাশি শেষ করে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে খালি হাতে ফিরে যেতে দেখা যায় তাদের। এ সময় তল্লাশির সঙ্গে যুক্ত পুলিশের গুলশান বিভাগের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

এ দিকে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় এমন তল্লাশির খবর পেয়েই সেখানে ছুটে যান সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে সকাল নয়টার দিকে রুহুল কবির রিজভী কার্যালয়ের সামনে যান। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে তিনিও কার্যালয়ের ভেতরে যান।

এর কিছুক্ষণ পর দলের আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু ওই সময় বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় কোনো নেতা-নেত্রীকে গুলশান কার্যালয়ে আশপাশে আসতে দেখা যায়নি। এমন কী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও নয়। তবে পুলিশ চলে যাওয়ার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও গয়েশ্বর রায়সহ অনেকেই ওই কার্যালয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তল্লাশি শুরুর আগে ভোর থেকেই খালেদা জিয়ার এই কার্যালয় ও এর আশপাশের সড়কগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ। দীর্ঘ প্রায় চার ঘণ্টা ওই এলাকায় সাধারণ কোনো যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ওই সড়ক দিয়ে সাধারণ কাউকে চলাচলও করতে দেয়া হয়নি।

ঘটনাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ, র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীদের দেখা গেছে। সকাল আটটার দিকে একদল পুলিশ সদস্য খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের মূল ভবনে ঢোকেন। এ সময় অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য কার্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নেন।

তল্লাশির পর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি ‘তালিকা’ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। পুলিশের গুলশান থানার পরিদর্শক আজিজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সেই ‘তালিকায়’তল্লাশিতে প্রাপ্ত মালামালের পরিমাণ ‘শূন্য’ বলে উল্লেখ করা হয়। তবে সেখানে তল্লাশির স্থান হিসেবে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের ঠিকানা লেখা ছিল না।

তবে ওই ভবনের কর্মচারীরা জানান, তল্লাশি করতে মিস্ত্রি নিয়ে ভবনের গেটের তালা ভেঙে পুলিশ ভেতরে ঢোকে। এক তলা ও দোতলার বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি চালানো হয় বলে তারা জানান। এক তলার নয় নম্বর কক্ষটির দরজার লক খুলে তল্লাশি করে। বেশ কয়েকজন কর্মচারী বলেন, সঙ্গে আনা মিস্ত্রিদের দিয়েই তালা ভাঙা হয়। আর ফাইলসহ বিভিন্ন কাগজপত্রে ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারণ করেন পুলিশ সদস্যরা।

এদিকে জানা যাচ্ছে, দোতলায় তল্লাশি চালালেও খালেদা জিয়া যে কক্ষে বসেন সেখানে ঢোকেনি পুলিশ।

পুলিশ চলে যাওয়ার পর রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে দিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে সার্চ ওয়ারেন্ট করিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। দলের নেতৃবৃন্দকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।এটাকে সরকারি হয়রানির নতুন কৌশল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে সাংবাদিকদের ওই জিডির কপি দেখান বিএনপির নেতা হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। জিডিতে সময় হিসাবে গতকাল ১৯ মে সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিট লেখা ছিল। তবে গুলশান ঠিকানা উল্লেখ করা হলেও কোথায় বিএনপির কার্যালয় লেখা ছিল না। জিডিতে লেখা রয়েছে, গুলশান-২ নম্বরের ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়ি ও এর আশপাশের এলাকায় রাষ্ট্রবিরোধী ও আইনশৃঙ্খলাপরিপন্থী, রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বিনষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের স্টিকার ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে সামগ্রী মজুতের খবর গোপন সূত্রে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৩ সালের ১১ মার্চ একই কায়দায় ভবনের গেইট ও কক্ষের দরজা ভেঙে তল্লাশি চালিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপি নেতা রিজভীসহ কেন্দ্রীয় দেড় শতাধিক নেতাদের গ্রেপ্তার করে। তাদের গায়ে পুলিশ আঘাত করে। রাজনীতিতে এ এক নতুন নজির। পুলিশের এমনই লঙ্কাকাণ্ড তখন দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মুখে। চার বছর পর এবার দলটির প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে অভিযান চালাল পুলিশ।

পাঠকের মতামত

আশ্রয় নেওয়া বিজিপিদের বিনিময়ে বাংলাদেশি বন্দি মুক্তি দেবে মিয়ানমার

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) সদস্যদের ফেরানোর বদলে দেশটির জান্তা সরকারের কারাগারে থাকা ...