প্রকাশিত: ২২/০১/২০১৭ ৯:৪৪ পিএম

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারের নির্বাচিত নতুন সরকারকে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি। তিনি রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের তীব্র সমালোচনা করেছেন। এছাড়া সীমান্তে ৯ অক্টোবরের ঘটনায় রাখাইন রাজ্যের বুথিডং জেলে এখনও সাড়ে চারশ’ নাগরিক আটক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইয়াংহি লি। রোহিঙ্গা নির্যাতন তদন্ত শেষে তিনি শুক্রবার ইয়াঙ্গুনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি

হয়ে এসব তথ্য জানান।

শনিবার মিয়ানমারের মিজিমা পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি মিয়ানমারে ১২ দিনের সফর শেষ করেছেন। সফর শেষে তিনি ইয়াঙ্গুনে গণমাধ্যম কর্মীদের মুখোমুখি হয়ে জানান, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারের নির্বাচিত নতুন সরকারকে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া সেনাবাহিনীকে অবশ্যই সেদেশের আইন মেনে এবং মানবাধিকার রক্ষা করে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। কোনভাবেই যেন রোহিঙ্গাদের ওপর আইনবহির্ভূত হত্যাকা- না হয় সেদিকে খেয়াল রাখাও আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতিকে অত্যন্ত দুর্বিষহ। দেশটির সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর দমন অভিযানের ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে এবং অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবতা অস্বীকার করছে। এর ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের বিশেষ দূত রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমারের সেনা অভিযানের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি জানান, ওই দমন অভিযানের ফলে গত তিন মাসে প্রায় ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযান চালানোর সময় মানবাধিকার রক্ষার তোয়াক্কা করেনি বলে উল্লেখ করেন ইয়াংহি লি।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত জানান, তিনি রাখাইনের মংডু ও বুথিডং এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মংডুর অনেক নারীর সঙ্গে কথা বলেছেন। অনেক নারী জানিয়েছেন, তাদের স্বামীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছেন। তবে তাদের সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ নেই। তাদের স্বামীরা বেঁচে আছেন কি-না তাও তারা জানেন না। এছাড়া জেলে আটক নাগরিকরা আইনী সহায়তা পাচ্ছেন না বলেও জানান তারা।

ইয়াংহি বলেছেন, বুথিডং জেলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার আলাপ হয়েছে। জেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ৯ অক্টোবরের ঘটনার জের ধরে অনেককেই আটক করা হয়েছে। বর্তমানে তাদের জেলে সাড়ে চারশ’ নাগরিক আটক রয়েছেন। এসব নাগরিকদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তারা ৯ অক্টোবরের আক্রমণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় সেদেশের নয় সীমান্ত পুলিশের মৃত্যুর পর আশপাশের এলাকাগুলোয় ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত জেলাগুলোয় শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেনাবাহিনীর অভিযানে রাখাইন প্রদেশে ১২শ’র বেশি ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়। ওই সহিংসতায় ৮৬ জনের মৃত্যুর খবর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করলেও নিহতদের মধ্যে ৬৯ জনকে সন্দেহভাজন বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে দাবি করে তারা।

দমন অভিযানের মুখে পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের অনেকে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ প্রেক্ষাপটে সীমান্তে বাড়তি বিজিবি মোতায়েন করা হয়। তবে অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে নতুন করে ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করে। এ প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জাতিসংঘ বিশেষ দূত পাঠায় মিয়ানমারে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি ১২ দিন মিয়ানমারে অবস্থান করেন। তিনি রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এছাড়া মিয়ানমারের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি সাক্ষাত করেন। শুক্রবার তার মিয়ানমার সফর শেষ হয়।

জনকন্ঠ

পাঠকের মতামত

টেকনাফ সীমান্তে সর্ববৃহৎ মাদকের চালান লুটপাট শীর্ষক সংবাদে একাংশের ব্যাখ্যা ও প্রতিবাদ

গত ১৯ এপ্রিল টেকনাফ সীমান্তের জনপ্রিয় অনলাইন টেকনাফ টুডে এবং গত ২১এপ্রিল টিটিএন সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন ...

১৫০ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে ২৮৫ সেনাকে নিয়ে ফিরবে মিয়ানমারের জাহাজ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জা‌নি‌য়ে‌ছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ২৮৫ ...