প্রকাশিত: ২৫/০২/২০২০ ৩:৪৫ পিএম

ডেস্ক রিপোর্ট ::
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)। আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে সংস্থাটি শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করতে পারে। সম্প্রতি তারা শুল্কমুক্ত সুবিধায় ৪৬টি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেছে। এর মধ্যে ৩৯টিই শর্ত ভঙ্গ করে ব্যবহার হচ্ছে। নিজেরা দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার না করে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও স্থানীয় এনজিওকে ব্যবহার করতে এসব গাড়ি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।শেয়ার বিজ

যদিও গাড়ি ছাড়করণে সংস্থাটিকে অনুমতি দেয়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপরও কীভাবে এসব গাড়ি ছাড় করানো হয়েছে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনুমতি ছাড়া গাড়ি ছাড়করণ, শর্ত ভঙ্গ করে বিভিন্ন সংস্থাকে গাড়ি ব্যবহার করতে দেয়াসহ এসব গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম উঠে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতিবেদনে। সম্প্রতি এনবিআরের একটি সংস্থা তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দিয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রাচার অনুবিভাগ (মিশন সার্ভিস) ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর এনবিআরকে চিঠি দেয়। যাতে বলা হয়, একই বছরের ১ জুলাই ঢাকাস্থ ইউএনএইচসিআর ৫৭ গাড়ি শুল্কমুক্ত আমদানির প্রাক-অনুমতি চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গাড়িগুলো আমদানির অনুমতি প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হয়। কিছুদিন পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানতে পারে, ৫৭ গাড়ির মধ্যে ৪৬টি শুল্কমুক্ত সুবিধায় ছাড় করে তা কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যবহার হচ্ছে। যেহেতু মন্ত্রণালয় প্রাক-অনুমোদন ও শুল্কমুক্ত ছাড়ের জন্য শুল্ক অব্যাহতির প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেনি, সেহেতু এসব গাড়ি দেশে চলাচলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। ৪৬টি গাড়ি কোথায়, কীভাবে, কারা ব্যবহার করছে তার তালিকাসহ এনবিআরে পাঠায় এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানায়। এনবিআর বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। শেষে ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট এনবিআরকে প্রতিবেদন দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের প্রাক-অনুমোদন ও প্রত্যয়নপত্র ছাড়া কীভাবে গাড়ি খালাস হলো তা জানতে চেয়ে কাস্টমস গোয়েন্দা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে দুবার চিঠি দেয়। কাস্টম হাউস থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও দলিলাদিতে দেখা যায়, সংস্থাটি গাড়ি ছাড়ের ক্ষেত্রে কৌশল অবলম্বন করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ২০১৮ সালের ১ জুলাই ৫৭টি আমদানির প্রাক-অনুমতির জন্য আবেদন করে। কিন্তু একই বছরের ৪ জুন, ২৬ জুন ও ১১ জুলাই চারটি বিল অব এন্ট্রি দাখিলের মাধ্যমে ৪৬টি গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় ছাড় নেয়া হয়েছে। একদিকে আবেদন করেছে আমদানির প্রাক-অনুমতির, অন্যদিকে গাড়ি ছাড় কীভাবে সম্ভব হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কাস্টম হাউস মন্ত্রণালয়ের প্রাক-অনুমতি ও প্রত্যয়নপত্র না যাচাই করেই গাড়িগুলো খালাস দিয়ে আরও বেশি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কাস্টমস বলছে, এনবিআরের ১৯৭৫ সালের ২৮ জানুয়ারির একটি চিঠির (নং-৩(৮৪) এনবিআর (কাস) ১১/৭৪/১৭৬৬-৭০) আলোকে গাড়িগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধায় খালাস দেওয়া হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে: জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ও জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাগুলো তাদের দাপ্তরিক কাজে ব্যবহারের জন্য আমদানি করা পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় পেয়ে থাকে।

শুল্কমুক্ত সুবিধার ৪৬ গাড়ির তথ্য চেয়ে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় ইউএনএইচসিআর’র কান্ট্রি ডিরেক্টরকে চিঠি দেয় কাস্টমস গোয়েন্দা। ১০ ফেব্রুয়ারি কাস্টমস গোয়েন্দাকে ইউএনএইচসিআর থেকে জানানো হয়, ৯টি গাড়ি ঢাকা ও কক্সবাজারে ব্যবহার হচ্ছে। ৩২টি ‘রাইট অব ইউজ এগ্রিমেন্ট’র ভিত্তিতে তাদের সরকারি অংশীদার কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে ব্যবহার করছে। বাকি সাতটি গাড়ি তাদের এনজিও অংশীদার কক্সবাজারে ব্যবহার করছে। এতে গাড়ি নিজেরা না ব্যবহার করে অন্যরা কীভাবে ব্যবহার করছে, তা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে কাস্টমস গোয়েন্দা। এতে বেরিয়ে আসে ইউএনএইচসিআর’র মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা কীভাবে শর্ত ভঙ্গ করে গাড়ি অন্যদের ব্যবহারের জন্য দেয়।

পর্যালোচনা করে কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দেখতে পান, এনবিআরের সেই চিঠি অনুযায়ী জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ও বিশেষায়িত সংস্থা হিসেবে ইউএনএইচসিআর দাপ্তরিক কাজে ব্যবহারের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় এসব গাড়ি খালাস নিয়েছে। কিন্তু সে চিঠিতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, ‘জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ও বিশেষায়িত সংস্থাসমূহ দাপ্তরিক কাজে ব্যবহারের জন্য আমদানিকৃত পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পেয়ে থাকে।’ এক্ষেত্রে ইউএনএইচসিআর শুল্কমুক্ত সুবিধার ৪৬ গাড়ির মধ্যে ৩৯টি গাড়ি শর্ত ভঙ্গ করে নিজেদের দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার না করে কেবল ‘রাইট অব ইউজ এগ্রিমেন্ট’র ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে।

৩২ গাড়ির মধ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ এসব গাড়ি ব্যবহার করছে বলে কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন। তবে গাড়ি ব্যবহারকারী কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। ইউএনএইচসিআর’র মতো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার এমন কর্মকাণ্ডে এনবিআর কর্মকর্তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, কাস্টম হাউসে প্রাক-অনুমতি ও প্রত্যয়নপত্র না জমা না দিয়েও গাড়ি খালাস নিয়েছে সংস্থাটি। ইউএনএইচসিআর মন্ত্রণালয়কে অবহিত না করে গাড়ি খালাসের জন্য বিল অব এন্ট্রি দাখিল ও খালাস গ্রহণ রাষ্ট্রাচারবিষয়ক রীতিনীতি শিষ্টাচারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অনুমতি ও প্রত্যয়ন না নিয়ে কাস্টমসের খালাস প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি। তবে এনবিআরের সেই চিঠিতে কাস্টমসকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা প্রদান করা হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইউএনএইচসিআর’র মতো সংস্থায় ব্যবহৃত গাড়ি, লজিস্টিকের নিড অ্যাসেসমেন্ট করে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়। এছাড়া নতুন আমদানির পূর্ব পর্যন্ত আমদানি করা গাড়ির ব্যবহার এনবিআরের আদেশ (এসআরও-১০০/২০০০ শুল্ক) অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা গাড়ির হিসাব গ্রহণ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে গাড়ির প্রাপ্যতা নির্ধারণ করা সমীচীন হবে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, কোনো সংস্থা শুল্কমুক্ত সুবিধার গাড়ি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এনবিআরের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু ইউএনএইচসিআর তাদের অংশীদারের কাছে হস্তান্তরে অনুমতি নেয়নি। এনবিআরের চিঠি ও আদেশ অনুযায়ী, শর্ত ভঙ্গ করায় রাষ্ট্রের অনুকূলে এসব গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা যায় বলে প্রতিবেদনে মত দেওয়া হয়।

গাড়ি বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইউএনএইচসিআর’র জনসংযোগ শাখায় যোগাযোগ করা হয়। বিষয়টি কান্ট্রি ডিরেক্টর বরাবর লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়। লিখিত আকারে প্রশ্ন ই-মেইল ও প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে যোগাযোগ করা হলেও কোনো জবাব দেয়নি সংস্থাটি। তবে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবেদন নিয়ে এনবিআর কাজ করছে। এর আগে সংস্থাটি একই কাজ করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে। তবে জাতিসংঘের মতো এমন একটি সংস্থার এমন কর্মকাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

পাঠকের মতামত

আজ পহেলা বৈশাখ

আজ রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ-বাংলা নববর্ষ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩১ ...

বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালিত এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

বান্দরবানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালিত রুমা,রোয়াংছড়ি ও থানচি এলাকায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। ...

বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

পটিয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই আরোহী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী এলাকার মোঃ ...