প্রকাশিত: ১৭/০৬/২০১৯ ৯:২২ এএম

শফিক আজাদ,উখিয়া::
উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা স্থায়ী বসবাসের সুযোগে দিন দিন বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। পূর্ব শত্রুুতার জের, অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, ডাকাতি, মানবপাচার মাদকসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। রোহিঙ্গাদের এমন আচরণ ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় জনসাধারণ ও প্রশাসনকে। নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধের অপরাধ ক্রমাগত বাড়ছে। এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের হাতে ৩৮ জন রোহিঙ্গা খুনসহ ৫ শতাধিক অপরাধ লিপিবদ্ধ হয়েছে উখিয়া-টেকনাফে। এছাড়াও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে ডজন খানেক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।
অনুপ্রবেশের পরপরই রোহিঙ্গারা খুন, ডাকাতি, ইয়াবা ও মানবপাচার, হামলা এবং বনভূমি দখলসহ নানা অপরাধে সাথে রোহিঙ্গারা জড়িত। রোহিঙ্গা বসতিতেই রয়েছে নিজেদের মধ্যে মারামারি এবং পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। পুলিশ প্রশাসনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হলেও তাদের করতে হচ্ছে সালিশ বিচারের কাজও। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের হাতে হামলার শিকার হয়েছেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনও। এমনকি রোহিঙ্গাদের আক্রমণের শিকার হচ্ছে স্থানীয়রাও। ভবিষ্যতে রোহিঙ্গারা চরম বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৫টি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হলেও এরপও তা সম্ভব হচ্ছেনা। রোহিঙ্গাদের এমন আচরণে স্থানীয় প্রশাসন ও বাসিন্দারা আতঙ্কিত। তাদের নানা অপরাধের কারণে শুধু উখিয়া-টেকনাফ নয় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বাসিন্দারাও আতঙ্কে রয়েছে।
জানা গেছে, ক্যাম্পে যে সমস্ত পুলিশ ক্যাম্প গুলো স্থাপন করা হয়েছে তার থেকে বেশিরভাগ রোহিঙ্গা এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। চারদিক খোলা থাকায় নির্বিঘেœ ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা পালিয়ে যাচ্ছে। তারা ক্যাম্পে থাকে ও খায়। আর অবাধে অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। গহীন অরণ্যে গড়ে তুলেছে অপরাধের স্বর্গরাজ্য। মাদক ও অস্ত্র পাচারের মতো কাজে তারা জড়িত। যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরের বাইরে হওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সময় সম্ভবই হয় না।
সুত্রে আরো জানা গেছে, সারাদেশে প্রায় কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। তারা ইয়াবা বেচাকেনাসহ নানা অপরাধ করছে। এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৫৬ হাজার রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আরো প্রায় তিন লক্ষ রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন এলাকায় নানা পরিচয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। ইয়াবা ব্যবসা, মানবপাচার, অপহরণ, চাঁদাবাজি, হাটবাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে। সন্ধ্যা হলে ক্যাম্পের ভেতরে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে নেমে পড়ে। পুরো ক্যাম্প তখন তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। নির্ধারিত হারে চাঁদা না দিলে অপহরণ, গুম, খুন প্রায়ই হচ্ছে ক্যাম্পগুলোতে। সন্ধ্যা হলে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাম্পের বাইরে টহল দেয়। অন্যদিকে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো অপরাধের জন্য অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ৩৮ জন খুন হয়েছে।
স্থানীয় পুলিশ ও অন্যান্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমানে যে অবস্থায় রোহিঙ্গাদের রাখা হয়েছে, তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের মধ্যে হানাহানি, সংঘর্ষ, খুন, গুম বেড়েই চলছে। রোহিঙ্গারা খুবই বেপরোয়া ও হিংস্র। বড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটানোর আশঙ্কা রয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা বেষ্টনিতে নির্ধারিত জায়গায় রাখা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। কে কি বললো সেদিকেও নজর দেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে এক শ্রেণীর এনজিও রোহিঙ্গাদের এই এলাকায় থাকার জন্য নানাভাবে প্রভাবিত করে আসছে। এসব এনজিওর কারণে রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসসহ জঙ্গিবাদের মতো ভয়ঙ্কর কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। আর এসব কাজে অর্থ যোগান দিচ্ছে ওই সব এনজিও। ভাসানচরের মতো সুন্দর নিরাপদ পরিবেশে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রস্তুত রাখা হলেও এনজিওগুলোর কারণে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না। এই এনজিওগুলো আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। রোহিঙ্গাদের সাহায্য-সহযোগিতার নামে এরা কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। আর এনজিও কর্মকর্তারা সমুদ্র সৈকতে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছেন।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের বলেন, উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে ইতিমধ্যে ৫টি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এসব ক্যাম্পে প্রায় ৩শতাধিক সদস্য নিয়োজিত আছে। ক্যাম্পে অপ্রীতিকর ঘটনা গুলো সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এরপরও পুলিশ বাহিনী সহ ক্যাম্পে আইনশৃৃংখলার কাজে নিয়োজিত বাহিনী গুলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

পাঠকের মতামত

পুলিশ থেকে বাঁচতে জীবনটাই দিলেন সিএনজিচালক

গ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ...

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চলন্ত সিএনজিতে সিলিন্ডার বি’স্ফোরণ, চালক নিহত

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চন্দনাইশ এলাকায় চলন্ত সিএনজি অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুনে দগ্ধ হয়ে ...