প্রকাশিত: ২৮/০৮/২০১৮ ৭:১৮ পিএম

ডেস্ক রিপোর্ট- কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোয় আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখ ১৯ হাজার রোহিঙ্গাকে হাতের আঙুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক) নিয়ে গণনা করেছে পাসপোর্ট ও বহিরাগমন অধিদপ্তর। তবে তালিকাভুক্ত আট লাখ ৯১ হাজার ২৩৩ রোহিঙ্গাকে ত্রাণ সুবিধা দিচ্ছে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো। বাকি দুই লাখ ২৭ হাজার রোহিঙ্গা ত্রাণ সুবিধার বাইরে। এত সংখ্যক রোহিঙ্গা ত্রাণ সুবিধার বাইরে থাকা ছাড়াও তাদের অবস্থান সম্পর্কেও নিশ্চিত নয় দাতা সংস্থাগুলো। সোয়া দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা কোথায় থাকে, খায় কী? এমন প্রশ্নের জবাব নেই চাল-ডাল-তেল প্রদানকারী জাতিসংঘ খাদ্য কর্মসূচিসহ (ডব্লিউএফপি) স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি কার্যক্রমে অংশ নেওয়া অন্যান্য সংস্থার কাছেও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৯০ সালে মিয়ানমার থেকে আসা ৩৩ হাজার ৯৫৬ রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হয়ে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়ায় নিবন্ধিত ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। তখন থেকে ক্যাম্পের বাইরে আরও সাড়ে তিন থেকে চার লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস শুরু করে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে নতুন করে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা সদস্য আসে। এর পর নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত সব রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পেগুলোয় একত্রিত করে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ নিয়ে গণনা করে সরকার।

এ সময় উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়ে বসবাসকারী রোহিঙ্গা, যারা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে ঢুকে পড়ে তারাও ক্যাম্পে চলে আসে। শুরুতে বিচ্ছিন্নভাবে তাদের ত্রাণ সামগ্রীও দেওয়া হয়। কিন্তু এর পর দুই লাখ ২৭ হাজার রোহিঙ্গার নিরুদ্দেশ হওয়া নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে প্রশাসন। তাদের ধারণা, কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন পাহাড়সহ সারাদেশে এসব রোহিঙ্গাদের বড় একটা অংশ পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) তথ্য মতে, গত ১৭ আগস্ট পর্যন্ত এক বছরে জেলার ১১টি পয়েন্টে রাস্তার ওপর বসানো সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ তল্লাশি চৌকির মাধ্যমে ৫৪ হাজার ৫৫৯ জন রোহিঙ্গাকে আটকের পর ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়। এরা দেশের বিভিন্ন স্থানে পালানোর চেষ্টা করেছিল। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আরও তিন হাজার ২০১ রোহিঙ্গাকে উদ্ধারের পর কক্সবাজার ক্যাম্পে ফেরত পাঠায়।

স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ৯০ দশক থেকেই কক্সবাজার সদরের কলাতলীর পেছনে আদর্শগ্রাম পাহাড়, সমিতি পাড়াসহ হিমছড়ির পাহাড়ে অন্তত এক হাজার রোহিঙ্গা পরিবার বসবাস শুরু করে। তারা সাগরে মাছ সংগ্রহ, হকার, পরিবহন শ্রমিক হিসেবে স্থানীয় শ্রমবাজারে ঢুকে পড়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী বা পাহাড়খেকোরা এসব রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে সরকারি সম্পত্তি দখলে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। প্রভাবশালীদের ইশারায় এদের অনেকেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছে। আবার পাহাড়ে বসবাসকারী এই রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে নতুন করে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা পলায়নের পথ খুঁজে পায়।

গত ২২ আগস্ট উখিয়ার শাপলাপুর থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশাযোগে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হন এক রোহিঙ্গা তরুণী। এক শিশুসন্তান ও ছোট ভাইসহ মেরিন ড্রাইভ হয়ে যাওয়ার পথে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের তিনটি চেকপোস্টে জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হন। এ সময় কক্সবাজারের আদর্শ গ্রামে বসবাসকারী এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে তাদের স্বজন বলে পথে পথে পরিচয় দেন। এর পর তারা যান আদর্শগ্রামে। আদর্শগ্রাম পাহাড়ে গিয়ে দেখা গেছে ছোট ছোট ঘরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের চিত্র।

সুগন্ধা পয়েন্টের পেছনে পাহাড়ের চূড়ায় বসবাসকারী এক রোহিঙ্গা কিশোর নাসির জানায়, মিয়ানমারে তার বাবার মৃত্যুর পর মা তাদের নিয়ে এ দেশে চলে আসেন। এর পর মা নাগরিকত্ব পেয়ে কক্সবাজারে একটি এনজিওতে চাকরি করছে। নাসির কক্সবাজারের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। পাহাড়ে বসবাসের বিষয়ে সে জানায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের কয়েক নেতা ওই পাহাড়ের মালিক।

রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে পাহাড় দখল ছাড়াও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মামলার হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার রোহিঙ্গারা নিজেরাও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। চুরি-ডাকাতি, যৌন নির্যাতন, অবৈধ অস্ত্র বহন, মাদক চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েছে তারা। স্থানীয় ইয়াবা সিন্ডিকেট তাদের ব্যবহার করছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্যমতে, গত ১৭ আগস্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বা স্থানীয়দের সঙ্গে ফৌজদারি অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় ক্যাম্পে ২৪৬টি মামলা হয়েছে। টেকনাফ ও উখিয়া থানায় দায়ের ১৭ ধরনের মামলার ৪৭১ রোহিঙ্গাকে আসামি করা হয়েছে। তবে পুলিশের খাতায় আসামিরা পলাতক!

উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এমনিতেই ঘনবসতি। এরা অপরাধ করে অন্য ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। এতে আসামিদের খুঁজে পাওয়া দায়। তবে মামলার পরিসংখ্যানের চেয়ে অপরাধের সংখ্যা আরও বেশি বলে স্বীকার করেন তিনি। তার ভাষ্য, প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত ম্যাজিস্ট্রেট বা ক্যাম্প ইনচার্জের (সিআইসি) শালিসে বেশিরভাগ অপরাধের মীমাংসা হয়ে যায়। বড় ধরনের বা ফৌজদারি অপরাধের ঘটনা ছাড়া থানায় মামলা হয় না।

পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে ক্যাম্পে ১২টি অস্ত্র মামলায় আসামি ২৭ জন, ৮২টি মাদক মামলায় আসামি ১২২ জন, ৬টি ধর্ষণ মামলায় আসামি ৭ জন, একটি গণধর্ষণ মামলায় আসামি ৩ জন, ১০টি ফরেনার্স অ্যাক্ট মামলায় আসামি ১২ জন, ৪টি অপহরণ মামলায় আসামি ২৫ জন, ৫টি চোরাচালান মামলায় আসামি ১০ জন, দুটি চুরি মামলায় আসামি ৩ জন, ৬টি ডাকাতি প্রস্তুতি মামলায় আসামি ১৯ জন, ২২টি হত্যা মামলায় আসামি ৬১ জন, অন্যান্য ৯৬ মামলায় আসামি ১৮২ জন।

রোহিঙ্গাদের পলায়নের বিষয়ে আশ্রয়ের বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম  বলেন, টেকনাফ-উখিয়ার বিভিন্ন জায়গায় যেসব রোহিঙ্গা ৯০ পরবর্তী বসবাস করে আসছিল তারা গত বছরের ২৫ আগস্টের পর ক্যাম্পগুলোয় জড়ো হয়। এর পর আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা ভাবছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে পারলে হয়তো কর্মসংস্থান হবে। প্রশাসন এ বিষয়ে সতর্ক আছে বলেই এত সংখ্যক উদ্ধার হয়েছে। আমাদের সময়।

পাঠকের মতামত

আজ পহেলা বৈশাখ

আজ রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ-বাংলা নববর্ষ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩১ ...

বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালিত এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

বান্দরবানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালিত রুমা,রোয়াংছড়ি ও থানচি এলাকায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। ...

বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

পটিয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই আরোহী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী এলাকার মোঃ ...